শিরোনাম
॥ নুর আলম দুলাল ॥
কুষ্টিয়া, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : ই-সেবায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমিয়ে পাল্টে গেছে কুষ্টিয়া সদর ভূমি অফিসের সেবার চিত্র। সরাসরি অফিসে না এসে, ঘন্টার পর ঘন্টা বসে না থেকে জমির নামখারিজ, নামজারি শুনানীসহ জমি সংক্রান্ত যে কোন খবর ঘরে বসেই জানতে পারবেন মোবাইল ম্যাসেজ অপশনে। প্রয়োজনে এসি ল্যান্ডের সঙ্গে ভিডিওকলের মাধ্যমে শুনানীতেও অংশগ্রহণ করতে পারছেন এমন চিত্রই পরিলক্ষিত হচ্ছে কুষ্টিয়া সদর ভূমি অফিসে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশে রুপান্তর করণ প্রকল্পে গত কয়েক বছর থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এটু-আই’র অধিনে সারাদেশের মতো কুষ্টিয়াতেও জেলা প্রশাসক কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, সব ভূমি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদসহ বেশ কিছু সরকারি দপ্তরে সরাসরি কাগজের পরিবের্ত আবেদন ই-সেবা কেন্দ্রে গ্রহণের পদ্ধতি শুরু হয়। এ সময়ে ধিরে ধিরে ভূমি অফিসগুলোতে কাগজ পত্রে নাম খারিজ, সরকারি ফিস জমা, নামজারী শুনানীসহ জমি সংক্রান্ত কাজগুলো নথিপত্রে সম্পন্ন করার পাশাপাশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কর্মচারীর মাধ্যমে বকেয়া নামজারীর সংখ্যা, মৌজা, জমির দাগ, খতিয়ান, ইউনিয়ন, সংশ্লিষ্ট ভুমি অফিসে মৌজার সংখ্যা, ভুমির পরিমাণ, সিএস, এস, এ ও আর এস দাগসমুহসহ সকল নথীপত্র ভূমি মন্ত্রণালয়ের সার্ভারে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আপলোড প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর সাথে প্রতিদিন জমি সংক্রান্ত নাম খারিজ, নামজারি শুনানী, সরকারি ফিস জমা, পর্চা উত্তোলন কাজগুলো ই-সেবার প্রক্রিয়ায় আনার পদ্ধতি চালু হয়। সেই সময় থেকে কুষ্টিয়া সদর ভূমি অফিসে ২০১৯ সাল থেকে হাতে সব প্রকার লেনদেন বন্ধ হয়ে মোবাইলের মাধ্যমে পেমেন্ট এবং নামজারি শুনানী, নাম খরিজ, পর্চা উত্তোলন অনলাইনে প্রদান প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এখন কুষ্টিয়া সদর ভুমি অফিসে গত ১ জানুয়ারি ২০২২ সাল থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাধিক নামজারী শুনানী, ৪০০ নামখারিজ এবং অনলাইনে পর্চা উত্তোলন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এতে করে এখন থেকে কুষ্টিয়া সদর ভূমি অফিসে যে কোন নাগরিককে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ভূমি অফিসে না এসে ঘরে বসেই মোবাইলের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছে। তাদের সংখ্যাও কম নয়।
কথা হয় কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শামসুল আলমের সঙ্গে তিনি জানান, বাড়াদী মাঠে ৪ শতক জমি নাম খারিজের জন্য প্রথম দিন কুষ্টিয়া সদর ভূমি অফিসে যান। সেখানে ভূমি অফিসের প্রথম কাউন্টারে তার মৌজা ও জমির দাগ নং জেনে ই-সেবায় কর্মরত বদিউজ্জামান তাকে জানিয়ে দেন তিনি ঘরে বসেই অনলাইনে কাজ করতে চান নাকি অফিসে এসে সরাসরি এসি ল্যান্ডের সামনে এসে করতে চান। তাতে তিনি তার ব্যস্ততার কথা বলে ঘরে বসে মোবাইল ফোনে তার জমির নাম খারিজ, নামজারি শুনানী করতে সম্মতি হন। এর পর মাত্র পনের দিনের মাথায় তার জমির খারিজ, নামজারি শুনানী ঘরে বসেই অনলাইনেই সম্পন্ন করেছেন। সরকারি নির্ধারিত ফি তিনি রকেটের মাধ্যমে পরিশোধ করেছেন। তার মত হাটশ হরিপুরের আজাদ রহমান, মিরা খাতুন, কালীশংকরপুরের চাকরিজীবী রোকসানা খাতুনও অনলাইনে তাদের জমির কাজ সম্পন্ন করেছেন বলে জানালেন। গৃহিনী মিরা খাতুন জানালেন, আগে এই ভুমি অফিসে একটি জমির খারিজ করতে কতবার আসতে হতো। হয়রানির শেষ ছিল না। দালাল বসেই থাকতো। এখন নগদ টাকা দেয়ার কোন সুযোগ নেই। তাই অনলাইনে সব কিছু হয়ে যাচ্ছে এতে হয়রানিও কমেছে অনেক।
নিজের জমির বিষয়ে যথাসম্ভব নিজে কার্যক্রম সম্পাদনের চেষ্টা করতে সব ভূমি মালিককে অনুরোধ জানিয়েছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিন। তিনি জানান, দালালেরা সবসময় অপপ্রচার করে যে টাকা ছাড়া কাজ হয় না ফাইল আটকে থাকে। এই অপপ্রচার না করলে তাদের অবৈধ আয় বন্ধ হয়ে যাবে। যেকোনো অপপ্রচার সম্পর্কে সচেতন হতে এবং হয়রানি বন্ধে যেকোন অভিযোগ থাকলে সরাসরি তিনি এসিল্যান্ডকে জানাতে অনুরোধ জানান।
মানুষ তার সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে একখন্ড ভূমি কিনে সেই ভূমির প্রশাসনিক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যদি যোগ্য হাতে না পড়ে তবেই বাড়ে জনভোগান্তি। ভূমি অফিসগুলোর দীর্ঘ দিনের জীর্ণতা আর দৈন্যতাকে পিছনে ঝেরে ফেলে নতুন উদ্যোমে ভূমি ব্যবস্থাপনা ও অফিস সিস্টেম সংস্কারের ব্রত নিয়েই কাজ করে চলেছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিন।
এখন এই ভূমি অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব দেখা গেছে। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রয়েছে অভিযোগ বক্স ও নিয়মিত তদারকি ব্যাবস্থা এবং সরাসরি অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রত সমস্যা সমাধানকরণ কার্যক্রম। তাছাড়া এসিল্যান্ড অফিসে অফিসের সৌন্দর্য্যবর্ধন, সিটিজেন চার্টার ও জনসচেতনামূলক বিভিন্ন লিফলেটসহ নানা কার্যক্রম দেখা গেছে। ভূমি সেবায় খুলনা বিভাগের মধ্যে সেরা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র হিসেবে পুরষ্কার লাভ করেন।
সদর এসিল্যান্ড দবির উদ্দিন যোগদানের পর থেকে ভূমি অফিসকে দালালমুক্ত করে গতিশীল করেছেন। ই-সেবা চালু হওয়ার পর থেকে উপজেলার বেদখলকৃত সরকারি জমি উদ্ধার হয়েছে। মিসকেসে (নামজারি জমাভাগ খারিজ সংক্রান্ত) মামলা শুনানির মাধ্যমে খুব কম সময়ে নিষ্পত্তি করেন। সরকারি খাস জমি, খাস পুকুর রক্ষায়, বাল্যবিবাহ বন্ধকরনে সবসময় তৎপর রয়েছেন। এছাড়া এই কর্মকর্তা জমিসংক্রান্ত সব ধরনের সেবাগ্রহিতার অধিকার নিশ্চিত করে সবার কাছে ভূমি অফিসকে সহজ, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলেছেন।
দবির উদ্দিন বলেন, ই-সেবা চালু হওয়ার পর থেকে জেলা প্রশাসকের কঠোর নজরদারি ও দিক নির্দেশনায় ভূমি অফিসের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তিনি বলেন- ‘বর্তমানে সেবাগ্রহিতাগণ তাদের ভূমির নামজারির শুনানী ও নিষ্পত্তির তারিখ ও সর্বশেষ অবস্থা জানতে আমাদের এই অফিসে এসে ঘুরাঘুরি করতে হয় না। মোবাইল ফোনে ম্যাসেজে বা অনেক ক্ষেত্রে কল করেও জানিয়ে দেয়া হয়। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কাজগুলোও মনিটরিং করা হয়ে থাকে। এতে ভূমি অফিসের প্রতি আস্থাও ফিরেছে শতভাগ। এবং কাজের গতিও বেড়েছে কয়েকগুণ।