শিরোনাম
ময়মনসিংহ, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ (বাসস): মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃতুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত পলাতক আসামী মো. সুলতান মাহমুদ ফকিরকে (৭০) গ্রেফতার করেছে র্যাব।
রোববার রাত ৯টার দিকে র্যাব-১৪’র একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর ভাটিকাশর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত সুলতান মাহমুদ ত্রিশাল উপজেলার বিয়ারতা গ্রামের মৃত আসমত আলী ফকিরের ছেলে।
র্যাব-১৪’র মিডিয়া অফিসার সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেনের স্বাক্ষরে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
র্যাব জানায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাকচর গ্রামের ইউনুছ আলী নামক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নদী পারাপারে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নদী পারাপারে সহযোগিতার কারণে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বীর মুক্তিযুদ্ধা ইউনুছ আলীকে রাজাকারদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় এবং রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতনের পর ১৫ আগস্ট সকালে তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। উক্ত ঘটনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ইউনুস আলীর ছেলে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের বিচারিক আদালতে মো. সুলতান মাহমুদ ফকিরসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে আদালত বিচারিক কার্যক্রমের জন্য মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা নং-০৭/২০১৮ রুজু হয়। ট্রাইব্যুনালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৭ সালে বর্ণিত অভিযোগের তদন্ত শেষে তদন্ত সংস্থা মো. সুলতান মাহমুদ ফকিরসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। উক্ত মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলার অভিযুক্ত তিনজন আসামী রায়ের পূর্বে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে। গত ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মো. সুলতান মাহমুদ ফকিরসহ ৬ জনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করে আদালত রায় দেয়। ২২/০৮/১৯৭১ইং তারিখে ত্রিশালের কানিহারি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ হামনকে হত্যার দায়ে অন্যান্য আসামীদের সাথে উক্ত আসামীকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়। এছাড়াও ২৩/০৮/১৯৭১ ইং তারিখে বিয়ারতা গ্রামের নিয়ামত আলী, আজিজুর রহমান, আব্দুল মতিন’কে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতনের দায়ে ৭ বছরের কারাদন্ড এবং ১০/১১/১৯৭১ ইং তারিখে কুষ্টিয়া গ্রামের প্রথমখন্ড ও কালী বাজার এলাকায় ৪ সংখ্যালঘু পরিবারের উপর ধর্ষণ ও অমানবিক নির্যাতনে সরাসরি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের দায়ে মোঃ সুলতান মাহমুদ ফকিরকে পৃথক পৃথকভাবে আরো ১৪ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। মামলার শুরু থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন।
মামলার বরাত দিয়ে র্যাব আরো জানায়, গ্রেফতারকৃত মোঃ সুলতান মাহমুদ ফকির ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয় এবং পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে তাদের বিভিন্ন কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে। সে ১৯৭১ সালে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় স্থানীয় রাজাকার বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মো. সুলতান মাহমুদ ফকির মহান মু্ক্িতযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙ্গালিদের আটক,নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যার সাথে জড়িত থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। গ্রেফতারের পর সোমবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে।