বাসস
  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৪৮

বিষমুক্ত কুল চাষে ভাগ্য ফেরাচ্ছেন বরগুনার বেকার যুবকরা

//  একেএম খায়রুল বাশার বুলবুল //
বরগুনা, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ (বাসস): জেলার আমতলীতে পতিত জমিতে কুল চাষ করে ভাগ্য ফেরাচ্ছেন যুবকেরা। তাদের চাষ করা কুল বিষমুক্ত হওয়াতে স্থানীয় বাজারে ব্যাপক চাহিদা পেয়েছে। বাজারে এই কুলের দরও পাচ্ছেন দ্বিগুণ।
আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের বাইনবুনিয়া গ্রামে আবু বক্কর সিদ্দিক রাসেলের বাড়ি। ঢাকার সরকারি বাংলা কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অর্নাসসহ এমএ এবং বেসরকারি প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি করা রাসেল এক সময়ে কাজ করতেন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায়। ২০২০ সালের করোনা পরিস্থিতিতে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বেকার হয়ে পড়েন। বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে কৃষিক্ষেত্রে কিছু করা যায় কিনা ভাবতে থাকেন রাসেল। আমতলীর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করেন এবং তার পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নেমে পড়েন কৃষিকাজে। কিন্তু নিজেদের পর্যাপ্ত জমি না থাকায় ৫ একর জমি বার্ষিক চুক্তিতে ইজারা নেন তিনি।
রাসেল জানান, ২০২১ সালের শুরুতে কুষ্টিয়ার মেহেরপুর এলাকার একটি বাগান থেকে সংগ্রহ করেন কাশ্মিরী আপেল কুল, বল সুন্দরী ও ভরত সুন্দরী প্রজাতির কুল গাছ। গাছগুলো রোপণের পর নিজেই পরিচর্যা শুরু করেন। রাসেলের বাগানে কর্মচারী রয়েছে তিনজন। অন্য লোকও বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সঠিক পরিচর্যায় গাছগুলো বেড়ে উঠে এ বছর ফল ধরেছে সব গাছে। ২০২২ সালের সিত্রাং এ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও গাছে-গাছে দুলছে লাল আভা ছড়ানো থোকায়-থোকায় কুল। পাকতে শুরু করায় বিক্রিও করছেন তিনি। আকার ও স্বাদে ভালো হওয়ায় বাজারে রাসেলের বাগানের কুলের চাহিদাও খুব বেশি। প্রথমে ১৫০ টাকা কেজি করে বাজারে বিক্রি শুরু করেন তিনি। এখন ১০০ টাকা দরে বাজারে কুল বিক্রি করছেন রাসেল। এর মধ্যে কিছু কুলগাছ বারোমাসি ফলন দেয় আবার কিছু মৌসুম ভিত্তিক। ফলে সারা বছই তার বাগানে কুল পাওয়া যায়। মৌসুম ভিত্তিক গাছগুলোতে দুমাস আগে থেকে পাকতে শুরু করে কুল। এ বছর কম করে হলেও ১০ টন কুল, বরই উৎপাদন হয়েছে তার বাগানে। এতে তিনি আয় করবেন প্রায় ১০ লাখ টাকা।
রাসেলের এ সাফল্য দেখে অন্য বেকার যুবকরাও ঝুঁকছেন কুল চাষে। যতই দিন যাচ্ছে কুলের আবাদ ততই বাড়ছে। ওই এলাকার আব্দুল আওয়াল, খোকন মৃধা, হানিফ মৃধা, আল আমিন খান, হারুন মৃধাসহ কয়েকজন বেকার যুবক প্রায় ৬০ একর জমিতে কুল চাষ করছেন। আলাপকালে তারা জানান, স্থানীয় বাগানগুলোর কুল বিষমুক্ত। গাছে ফুল আসার পর প্রথম একবার নিম পাতা থেকে উৎপাদিত জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করেছেন। কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। পাখির কবল থেকে কুল রক্ষার জন্য পুরো বাগান জুড়ে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে জাল। তাদের কুলের চাহিদা অনেক বেশি। সেই সঙ্গে বিষমুক্ত ফল পেয়ে নিরাপদে থাকছেন সাধারণ ক্রেতারা। বর্তমানে ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী এবং আমতলীর পাইকারি ফল ব্যবসায়ীরা ফল কেনার জন্য ভিড় করছেন।  
আমতলীর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম জানান, আমাদের পরামর্শে কুলবাগান তৈরি করে বেকার যুবকেরাএখন স্বাবলম্বী। অনেক বেকার যুবক নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছেন। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে এ কুলের আবাদ করলে চাষিরা একদিন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। অপরদিকে পুষ্টিকর ফলের চাহিদাও পূরণ হবে।