শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলাটি নি¤œজলাভূমি বিল বেষ্টিত। বছরের অধিকাংশ সময় এ উপজেলার জমি থাকে পানির নীচে। এ উপজেলায় চাষযোগ্য জমির পরিমান ২৮ হাজার ৩১০ হেক্টর। বিগত এক দশকে ১ ফসলী জমি থেকে দুই ফসলী জমিতে উন্নিত হয়েছে ১৬ হাজার ১০ হেক্টর জমি। আর ২ ফসল থেকে ৩ ফসলী জমিতে পরিণত করা হয়েছে ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমি। প্রধানমন্ত্রী শেখ শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে এ উপজেলায় চাষাবাদ বৃদ্ধি করে ফসল উৎপাদন বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিস কাজ করে যাচ্ছে । এক ফসলী জমিকে ২ ফসলী ও ২ ফসলী জমিকে তারা ৩ ফসলী জমিতে পরিণত করতে স্বল্পজীবনকাল সম্পন্ন উচ্চ ফলনশীল ফসলের চাষাবাদ কৃষককে দিয়ে করাচ্ছে।
ইতিমধ্যে কোটালীপাড়া উপজেলার উত্তরাঞ্চলের নি¤œজলাভ’মি বিল বেষ্টিত সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের পাইকেরবাড়ী গ্রামের ৫০ একর জমিকে কৃষি অফিস ৩ ফসলের জমিতে পরিণত করেছে। ওই জমি থেকে ৭৫ জন কৃষক বছরে ৩ টি ফসল পাচ্ছেন। ফসলগুলো হচ্ছে সরিষা,পাট ও রোপা আমন। এভাবে উপজেলার ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিকে ৩ ফসলী জমিতে পরিণত করা হয়েছে বলে কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা দেবাশীষ দাস জানিয়েছেন। এতে চাষাবাদের পরিধি বাড়ছে সেই সথে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পচ্ছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকরে আয় বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্প এখানে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল জাতের ফসল চাষাবাদ সম্প্রসারণ করছে। সেই সাথে হাইব্রিড জাতের ফসল ফলাতে তারা কৃষককে প্রযুক্তি ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। তারা কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল ও হাইাব্রিড জাতের ফসলের আবাদ করছেন। কৃষক অধিক ফসল উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা দেবাশীষ দাস বলেন, কোটালীপাড়ায় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা চাষ পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনতে চাইছি। এ বছর জমি থেকে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষককে দিয়ে আমরা ১ হাজার ২৪০ হেক্টরে শাক, সবজি চাষ করিয়েছিলাম। শাক, সবজি বিক্রি করে কৃষক অন্তত ৮ কোটি টাকা আয় করেছে। এখন তারা ওইসব জমিতে বোরোধান আবাদ করেছেন। আমরা সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের পাইকেরবাড়ী গ্রামের ৫০ একর জমিসহ উপজেলার ২ হাজার ৫০ একর জমিকে ৩ ফসলের জমিতে পরিণত করেছি। এখানে কৃষক একই জমিতে বছরে ৩টি ফসল সরিষা,পাট ও রোপাআমন চাষাবাদ করছেন। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষিকে বানিজ্যিকী করণের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমরা কৃষকের আয় দ্বিগুণ করে দিতেই মাঠে পড়ে রয়েছি।
কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়ন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা করুনা বৈদ্য বলেন, আগে পাইকেরবাড়ী গ্রামের এসব জমিতে একটি মাত্র ফসল বোরোধান হত। গত ৬ বছর ধরে কৃষক আমাদের পরামর্শে এখানে বছরে ৩টি ফসল ফলাচ্ছেন। এ ধরনের জমি আমরা চিহ্নিত করে সেখানে ১ ফসলী জমিকে ২ ফসলী ও ২ ফসলী জমিকে ৩ ফসলী জমিতে পরিণত করার চেষ্টা করছি।
কোটালীপাড়া উপজেলার পাইকেরবাড়ী গ্রামের কৃষক পরেশ হালদার (৪০) বলেন, আগে এ জমিতে ১ টি ফসল হত। এখন কৃষি বিভাগের পরামর্শে একই জমিতে বছরে ৩ ফসল করছি। আমি এ মৌসুমে ৪ একর জমিতে সরিষা করেছি। এরপর পাট করব। পাট কেটে রোপা আমনে যাব। এ জমি থেকে বছরে ৩ ফসল পেয়ে আমি লাভবান হচ্ছি। গত ৬ বছর ধরে এভাবে চাষাবাদ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। তাই প্রধানমন্ত্রীর নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়ায় আমরা গত ১০ বছরে ১ ফসলী ও ২ ফসলী ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিকে ৩ ফসলী জমিতে পরিণত করেছি। আরো জমি ৩ ফসলী জমিতে উন্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে ফসলের উৎপাদন বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহবানে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রীর নিজ নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি সাবেক সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার এটি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। কৃষককে চাষাবাদে আমরা উদ্বুদ্ধ করেছি। তারাও ব্যাপক সাড়া দিয়ে উৎসবের আমেজে চাষাবাদ করছেন। তাই এ বছর আবাদ ও ফসলের উৎপাদন দুই-ই আরো বৃদ্ধি পাবে।