শিরোনাম
॥ শুভব্রত দত্ত ॥
বরিশাল, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা বরিশাল শহীদ মিনারের সংস্কার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। নির্মাণাধীন প্রকল্পটির ৯০ ভাগ কাজ প্রায় সম্পন্ন।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি)-এর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৫২ সালের শহীদদের স্মৃতি স্মরণে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি দিবসটি পালনে বিসিসি’র নিজস্ব অর্থ্যায়নে ১ম পর্যায়ে ব্যয় করা হবে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। প্রয়োজনে বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার’র প্রকল্প ব্যয় আরো বাড়ানো হবে।
নগরবাসীর চাহিদা অনুযায়ী বিসিসি’র বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র দিক-নির্দেশনায় বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার আধুনিকায়ন ও সংস্কার কাজ এগিয়ে চলছে। প্রকল্পটির কাজ আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হলে শহীদ মিনারের আশপাশের এলাকার সৌন্দর্য বাড়বে । একই সঙ্গে শহীদ মিনারটি পরিণত হবে একটি দর্শনীয় স্থানে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, প্রথমেই শহীদ মিনারের পুরো এলাকা বালু ফেলে বসানো হয়েছে। সিসি ঢালাই ও সিরামিক ইট (১০ হোল ব্রিক) দিয়ে রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার আদলে নির্মাণ করা হচ্ছে এ মিনারটি। আধুনিক এ মিনারটি নির্রাপত্তার জন্য চারপাশে নির্মাণ করা হচ্ছে সিসি কলম, লোহার গ্রিল। একইসাথে নিমাণ করা হচ্ছে ২টি আরসিসি রাস্তা, ২টি গেট, ১টি ঘোষণা মঞ্চ, ১টি গ্রিন রুম, আধুনিক লাইটিং ব্যবস্থা ও ১টি পাবলিক টয়লেট। এছাড়াও পুরো মিনারটি সাজানো হবে ফুল গাছ দিয়ে।
এ বিষয়ে নাট্য ব্যক্তিত্ব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ দুলাল বলেন, ১৯৭৩ সালের ৩ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বরিশাল সফরকালে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণেএ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ দুলাল আরো বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৬০ শতাংশ জমির উপর এ শহীদ মিনারটি। এর উচ্চতা প্রায় ৪৪ ফুট। রাজধানী ঢাকার পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহীদ মিনার এটি। এছাড়া বরিশালের এ শহীদ মিনারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি। প্রকল্পটি শেষ হলে শহীদ মিনারের আশপাশের এলাকার সৌন্দর্য আরো বাড়বে । একই সঙ্গে শহীদ মিনারটি পরিণত হবে দর্শনীয় স্থানে।
এ বিষয়ে বরিশাল শহীদ মিনার সংরক্ষণ কমিটির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন, ১৯৭৩ সালে মিনারটি নির্মাণে আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে করা হয়। বরাদ্দ হওয়া টাকা পেতে দেরি হওয়ায় এখানকার উদ্যোক্তারা নিজস্ব উদ্যোগে ৫২ হাজার ১১৫ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করে মিনাটি নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এ উদ্যোগ থমকে যায়।নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হলেও চেতনা দীপ্ত মানুষ প্রতি বছর একুশের ভোরে বঙ্গবন্ধুর ভিত্তিপ্রস্তর করা স্তম্ভেই শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতো। পরে ১৯৮৫ সালে শহীদ দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন আয়োজিত সভায় পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক আজিজ আহমেদ ১২ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক সভা কক্ষে ২১ সদস্য বিশিষ্ট শহীদ মিনার নির্মাণ কমিটি গঠন করেন। এরপর ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৫৭-তে উন্নীত করা হয়।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আবুল বাশার বলেন, নগরীর বিশিষ্টজন, শহীদ মিনার সংরক্ষণ কমিটি ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের মতামতের ভিত্তিতে প্রকল্পটি শুরু করা হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, বর্তমানে বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর সংস্কার, সৌন্দর্য বর্ধন, সংরক্ষণ এবং স্থান সম্প্রসারণের কাজ চলছে। পরে শহীদ মিনার চত্বরে একটি পার্ক নির্মাণ করা হবে।