বাসস
  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:১১
আপডেট  : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:২৪

গোপালগঞ্জে জমে উঠেছে বিসিক উদ্যোক্তা মেলা

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : গোপালগঞ্জে জমে উঠেছে বিসিক উদ্যোক্তা মেলা। প্রতিদিন মেলায় লাখ-লাখ টাকা বেচাকেনা হচ্ছে। বিসিক উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পাট, তাঁত, চামড়া, মৃৎ ও হস্তশিল্পের পছন্দের পণ্য ক্রেতারা কিনে নিচ্ছেন। বাজারের দামের তুলনায় একটু কমে বিসিক উওদ্যোক্তা মেলায় বাহারী পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এ পণ্য কিনতে প্রতিদিনই বিভিন্ন বয়সের মানুষের সমাগম ঘটছে বিসিক উদ্যোক্তা মেলায়। বসন্তের শুরুতেই উৎসব মুখর পরিবেশে চলছে এ মেলা। 
নতুন উদ্যোক্ত সৃষ্টির লক্ষ্যে গত ৯ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্কে জেলা প্রশাসন ও গোপালগঞ্জ জেলা বিসিক কার্যালয়ের উদ্যোগে ১০ দিন ব্যাপী বিসিক উদ্যোক্তা মেলা শুরু হয়।
মেলায় পাট, তাঁত, চামড়া, মৃৎ ও হস্তশিল্পে উৎপাদিত পণ্যের  ৪০টি স্টল বসেছে।  দেশের বিভিন্ন জেলার শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যের স্টল এ মেলায় বসিয়েছেন। শীত-বসন্তের আমেজে মেলায় প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটছে। এখান থেকে ক্রেতারা তাদের পছন্দের পণ্য কিনছেন। স্থানীয় উদ্যোক্তারা  অন্য জেলার উদ্যোক্তাদের পণ্যের সাথে পরিচিত হচ্ছেন। অনেকে মেলায় এসে এসব পণ্য দেখে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। 
ফরিদপুরের আলেয়া জুট এ্যান্ড হ্যান্ডিক্রাফ্টের উদ্যোক্তা আলেয়া বেগম বলেন, আমি বিসিকের প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৮ বছর আগে উদ্যোক্তা  হই। এখন আমি  উদ্যোক্তা প্রশিক্ষক। সেই সাথে পাটজাত পণ্য উৎপাদন করে দেশের উদ্যোক্তা মেলায় অংশ গ্রহণ করে আসছি। গোপালগঞ্জে স্টল দিয়েছি। এখানে বেচা-কেনা বেশ ভালো হচ্ছে। আশা করছি ১০ দিনে অন্তত ৪ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারব। আমার প্রতিষ্ঠানে বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা, অসহায় নারী, প্রতিবন্ধীরা কাজ করছেন।  মেলার স্টলে আমাদের পণ্য দেখে গোপালগঞ্জের ২/৪ জন উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। আমি তাদের উদ্বুদ্ধ করেছি। প্রশিক্ষণ দিয়ে  আমি তাদের উদ্যোক্তা  হতে সহায়তা করব। তারা উদ্যোক্তা হলে তাদের কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি তাদের প্রতিষ্ঠানে আরো মানুষ কাজ করতে পারবেন।
পাবনার ফিহা ক্রাফ্ট বিডি এ্যান্ড লেডিস টেইলাসের উদ্যোক্তা মোছা. শাপলা খাতুন বলেন, আমি একজন সিঙ্গেল মাদার। আমার ২ মেয়ে ও ১ ছেলে। তারা পড়াশোনা করছে। স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পর আমি টেইলারিং দিয়ে কাজ শুরু করি। এখন বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করছি। এ পণ্য অফ লাইন ও অন লাইনে বিক্রি করছি। মেলায় অংশ নিচ্ছি। পণ্য বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। শ্রম ও মেধাকে যুগলবন্দী করে এখন আমি হস্তশিল্পে জায়গা করে নিয়েছি ।  গোপালগঞ্জের মেলায় আমি ভালো বিক্রি করছি। ছেলে-মেয়েকে মানুষ করে আমি সমাজে উদ্যোক্তা হিসেবে  প্রতিষ্ঠিত হব। 
নারায়নগঞ্জের জামদানী ওয়াল্ডের উদ্যোক্তা নাইম ভূইয়া বলেন, জামদানী পণ্যের গোপালগঞ্জের বিসিক উদ্যোক্তা মেলার প্রথম দিকে ক্রেতা কম ছিল। দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি ছিল।  এখন মেলা শেষের দিকে। তাই বেচা বিক্রি অনেক বেড়েছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশাকরছি মেলার বাকী দিনগুলোতে কেনাবেচা বেশ ভালো হবে। 
গোপালগঞ্জ শহরের  ঘোষেরচর এলাকার গৃহবধূ খাদিজা পরিভীন বলেন, বিসিক উদ্যোক্তা মেলায় তাঁত, মৃৎ, পাট, চামড়া ও  হস্তশিল্পের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। এখানে পছন্দের পণ্যের দাম বাজারের তুলনায় একটু কম। তাই সুলভ মূল্যে এখান থেকে  হস্তশিল্পের বিভিন্ন পণ্য কিনেছি। প্রতিবছর এ ধরনের মেলার আয়োজন করা হলে আমরা স্বল্পমূল্যে পণ্য কিনতে পারব। তাই প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।
শহরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের আনার্স ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া অফিরিন রিয়া বলেন, এখানে হস্তশিল্পে উৎপাদিত পণ্য খুবই আকর্ষণীয় ও মানসম্পন্ন । চাহিদাও বেশ ভালো। তাই বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী। উদ্যোক্তা হয়ে  পাটজাত পণ্য উৎপাদন করতে চাই। দেশের সোনালী আঁশের সুদিন ফিরিয়ে এনে বড় উদ্যোক্তা হব এটিই আমার এ্যাম্বিশন।  
বিসিক গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের এজিএম গৌরব দাস বলেন, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে এ মেলার মূখ্য উদ্দেশ্য । পণ্যের  বাজার সৃষ্টিতে   উদ্যোক্তা ও ক্রেতাদের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে দিচ্ছে এ মেলা। উদ্যোক্তা সৃষ্টি হলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। বিসিক দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে এ মেলার আয়োজন করেছে। মেলায় উদ্যোক্তা ও  ক্রেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অনেকেই নতুন উদ্যোক্তা হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা আগ্রহীদের উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ করছি। আমরা তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। তাদের উদ্যোক্তা হতে সবধরণের সহযোগিতা করা হবে।