বাসস
  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৩৩

থার্ড জেন্ডারের পলাশ সফল উদ্যোক্তা    

॥ মনোজ কুমারা সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ১৮ ফেব্রুয়ারি,২০২৩ (বাসস) : গোপালগঞ্জ বিসিক উদ্যোক্তা মেলায় স্টল বসিয়েছেন পলাশ। তার স্টলে রয়েছে ব্যতিক্রমী সব  আকর্ষনীয় পণ্য। সব বয়সের মানুষ তার পণ্যে আকৃষ্ট হচ্ছেন। দেদারছে কিনছেন তার স্টলের হাতে তৈরি আয়না, ঝাড়বাতি, কাঠের গহনাসহ বিভিন্ন পণ্য। প্রতিদিন তিনি গড়ে ৩০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করছেন এ মেলায়। পালাশ দেশের থার্ড জেন্ডার জনগোষ্ঠীর মধ্যে একমাত্র এমএমই উদ্যোক্তা।  তিনি উদ্যোক্তা হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ২ বার ও জাতীয় পর্যায়ে ৩ বার পুস্কার পেয়েছেন। তার উৎপাদিত পণ্য নিয়মিত নেপাল যচ্ছে। এছাড়া পুনাক ও আড়ংএ পলাশের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তিনি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ে এলএলবি ২য় বর্ষের ছাত্র।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্কে বিসিক উদ্যোক্তা মেলা শুরু হয়েছে। এ মেলা  আজ ১৮  ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।  
পলাশ বলেন, ভারতের রাজস্থান থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আমি এমএমই উদ্যোক্তা হয়েছি। ২০১৫ সালে কুষ্টিয়া শহরের থার্ড  জেন্ডারের কয়েক জনকে সংগঠিত করে  বেবী হ্যান্ডিক্রাফট প্রতিষ্ঠা করি । ভারত থেকে কাঁচা মাল আনি। সেইগুলোর সাথে বাংলাদেশী বিভিন্ন কাঁচা মালের সংমিশ্রণে ঝলমলে সব পণ্য তৈরি করি। আমার পণ্য আনকমন তাই চাহিদা বেশি। এখন আমার এ প্রতিষ্ঠানে থার্ড জেন্ডারের ৪৪ জন কাজ করছেন।   আমি প্রতিদিনের বেতন প্রতিদিন তাদের প্রদান করছি। তারা এখানে কাজ করে এখন বেশ ভালো আছেন। জীবন জীবিকার জন্য তাদের এখন আর কারো কাছে হাত পাততে হচ্ছে না। তারা আত্মমর্যাদা নিয়ে সমাজে বসবাস করছেন। তারা এখন আত্মপ্রত্যয়ী। আমার প্রতিষ্ঠানে  উৎপাদিত পণ্য নেপাল যাচ্ছে। এছাড়া এ পণ্য পুনাক ও আড়ংএ বিক্রি হচ্ছে। আমি উদ্যোক্তা হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ২ বার ও জাতীয় পর্যায়ে ৩ বার পুরস্কার পেয়েছি। উদ্যোক্তা ও এসএমই মেলায় অংশ নিয়ে অসংখ্য বার শ্রেষ্ঠ স্টলের সম্মাননা অর্জন করেছি।
পলাশ বলেন, আমি সারাদেশের থার্ড  জেন্ডারের জনগাষ্ঠেীর হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করতে চাই। সেই লক্ষ্যেই আমি কাজ শুরু করেছি। এদের মধ্যে থেকে উদ্যোক্তা ও ভালো কর্মী আমি সৃষ্টি করতে চাই। আমি গোপালগঞ্জে থার্ড জেন্ডারের জনগোষ্ঠীর সাথে কথা বলেছি। তারা উদ্যোক্তা ও কর্মী হতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া বরিশাল, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার থার্ড জেন্ডারের মানুষের সাথে মতবিনিময় করেছি। তারা উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আমি তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা ও কর্মী তৈরি করতে চাই।
পলাশ আরো বলেন, এ ব্যাপারে বিসিক আমাদের এ জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করলে তারা আর পিছিয়ে থাকবে না। তারা নিজেদের হাতকে কর্মীর হাতে পরিনত করতে পারবেন। পরের ওপর তারা নির্ভরশীল থাকবেন না। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তারা ভূমিকা রাখবেন।  
বিসিক গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের এজিএম গৌরব দাস বলেন, পলাশ থার্ড জেন্ডারের একজন সফল উদ্যোক্তা। তার প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্য গোপালগঞ্জ বিসিক উদ্যোক্তা মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। তার পণ্য খুবই আকর্ষণীয়। তাই তার স্টলে বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি। তিনি থার্ড জেন্ডার জনগোষ্টীর মধ্যে একমাত্র এমএমই উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তা হয়ে তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি সারাদেশের  থার্ড জেন্ডারের জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে জন্য কাজ করতে চাইছেন। আমরা তার এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। বিসিকের পক্ষ থেকে তাকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। আমি এ উদ্যোক্তার সাফল্য কামনা করছি।
গোপালগঞ্জ বিসিক উদ্যোক্তা মেলার দর্শনার্থী গৃহবধূ খাদিজা পারভীন বলেন, পলাশের স্টলের সব পণ্য খুবই চমৎকার। ডিজাইন আনকমন। প্রথম দর্শনেই পছন্দ হয়। দামও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। এ জন্য তার স্টলে কোন-বেচা বেশি। ভিড় লেগেই থাকছে। আমিও তার কাছ থেকে মনোরম   ডিজাইনের কাঠের গহনা কিনেছি।
মেলার দর্শনার্থী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মাঝিগাতী দশপল্লী নেছার উদ্দিন খান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রসাদ কুমার মৃধা বলেন, পলাশ থার্ড জেন্ডার জনগোষ্ঠীর আইকন হতে পারেন। তার মধ্যে সৃষ্টিশীলতা রয়েছে। এটি কাজে লাগিয়ে  তিনি পিছিয়ে পড়া ওই জনগোষ্ঠীক উন্নয়নের মূল ¯্রােতধারায় ফেরাতে পারেন। আর এটি করতে পারলে ওই জনগোষ্ঠী আর অবহেলিত থাকবে না। তারাও দেশের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখবেন ।