বাসস
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:০৩

প্রতিবন্ধিতা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে চায় নাটোরের জীম

নাটোর, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : প্রতিবন্ধিতা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে চায় নাটোরের জীম। জীমের এ সংকল্প উপলব্ধি করে তার পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ আজ সকাল ৯টায়  জীমকে প্রদান করেছেন একটি ব্যাটারি চালিত থ্রি-হুইলার।
আবু সাঈদ জীমের মা জানান, ওর বয়স তখন এক বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু ও দাঁড়াতে পারেনা। শরীরের ভর বহনের শক্তি যেন নেই। ডাক্তারের কাছে যাওয়া হলে তিনি বললেন, পোলিও। এরপর অনেক চেষ্টা আর চিকিৎসা-সবই বিফলে গেছে। আজো জীম নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারেনা।
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার চন্দ্রকোল গ্রামের কৃষক লুৎফর শেখ এবং গৃহবধু আজমেরা বেগমের ঘর আলো করে এসেছিল প্রথম সন্তান জীম। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধিতায় মিলিয়ে যায় এ আনন্দ আলো। ‘আমাদের চোখের পানি যেন বাঁধ ভাঙা জোয়ার’-ঐ সময়ের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন লুৎফর শেখ।
বাবা-মায়ের কষ্ট বুঝতে পেরেই হয়তো জীম জেদ ধরে পড়াশুনা করার। পায়ের উপরে ভর দিয়ে দাঁড়াতে না পারলেও পড়াশুনা করে নিজের অবলম্বনে দাঁড়ানোর ইচ্ছা। জীমকে ভর্তি করে দেওয়া হয় বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে। জীম এখন এসএসসি ভোকেশনাল শাখায় ড্রেস মেকিং এন্ড টেইলরিং ট্রেডে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। চলাচলের প্রতিবন্ধকতায় স্কুলে ওর উপস্থিতি হয়ে পড়েছিল অনিয়মিত।  
প্রধান শিক্ষক আব্দুল গনি বলেন, জীম পড়াশুনায় মেধাবী, কিন্তু অনিয়মিত। জেলা প্রশাসক চলাচলের ব্যবস্থা হিসেবে থ্রি-হুইলার দেওয়াতে পড়াশুনার প্রতি অদম্য ইচ্ছা  পোষনকারী জীমের স্কুলে আসতে না পারার দুঃখ ঘুচবে এখন। আশাকরি পড়াশুনা করে ও অনেক দূর যেতে পারবে।
জীমের কণ্ঠেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়, শুধু নিজের পায়ে দাঁড়ানো নয়, মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই।
নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ নাদিম সারওয়ার জানান, ৪০ হাজার টাকায় জীমকে ব্যাটারি চালিত থ্রি-হুইলার দেওয়া হয়েছে আজ। আধুনিক সুবিধার এ থ্রি-হুইলারে জেলা প্রশাসক আর আমার ব্যক্তিগত অর্থায়ন অনেক প্রশান্তির। একজন অসহায় শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।
জীমকে থ্রি-হুইলারে বসিয়ে দেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, অনেকের মত জীম আমার দপ্তরে এসেছিল গণশুনানীর দিনে। অন্যদের আবেদন গতানুগতিক হলেও জীমের প্রত্যাশা ছিলো, ‘পড়াশুনা করতে চাই’। আমরা জীমের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে থ্রি-হুইলার প্রদান করেছি। প্রয়োজনে আগামীতেও পড়াশুনার সহযোগিতায় তার পাশে থাকবো।