বাসস
  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:০৬

কোটালীপাড়ায় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাঁড়িয়া স্মৃতি জাদুঘর

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাঁড়িয়া স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। 
কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর প্রকল্পের আওতায় এ জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। 
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) গোপালগঞ্জ ৮০ লাখ ২০ হাজার ৩০৫ টাকা ব্যয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাঁড়িয়া স্মৃতি জাদুঘরটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে।  
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাঁড়িয়া বীর বিক্রম হেমায়েত বাহিনীর একজন সম্মুখ সারির যোদ্ধা ছিলেন। তিনি কোটালীপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেন। 
শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাড়িয়ার ছেলে ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, ১৯৭১ সালে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর  ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয় অর্জিত হয়। এর আগেই ৩ ডিসেম্বর আমার বাবা ও মুক্তিযোদ্ধারা কোটালীপাড়া উপজেলাকে পাকিস্তান হানাদার মুক্ত করেন। এরপর ৭ ডিসেম্বর আমার পিতা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাড়িয়া তার কর্মস্থল খুলনায় চলে যান। ১৩ ডিসেম্বর খুলনার রূপসা নদীর পাড় থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আমি আমার বাবাকে খুঁজে পাইনি। আমার ধারণা হানাদার বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে  খুলনার গল্লামারি বধ্যভূমিতে হত্যা করে। তার লাশ পর্যন্ত পাইনি। সেই কষ্ট বুকে নিয়ে বড় হয়েছি।বাবার স্মৃতি ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি স্মৃতি জাদুঘর করে দিয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। 
আশুতিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আকবর আলী বলেন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাড়িয়ার নামে জাদুঘর নির্মাণ করায় আমরা আনন্দিত। এ জাদুঘরের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানান দেবে। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাড়িয়ার অম্লান স্মৃতি ধরে রাখা সম্ভব হবে। এ জাদুঘরে যাতায়াতের  সড়কটি  চালাচলের অনুপযোগী। আমি গ্রামবাসীর পক্ষে থেকে এ সড়কটি দ্রুত চলাচলের উপযোগী করে দেওয়ার জন্য এলজিইডির কাছে  দাবি জানাচ্ছি। 
হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজাহারুল আলম পান্না বলেন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাড়িয়া আশুতিয়া  গ্রামে জন্ম গ্রহণ করে আমাদের গর্বিত করেছেন । সরকার এ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাড়িয়ার স্মৃতি সংরক্ষণে একটি জাদুঘর করে দিয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে সরকার  এ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মানিত করেছেন। এতে আমাদের এলাকার সম্মান অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। এ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করায় আমি এলজিইডি ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী  কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাড়িয়া স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) কোটালীপাড়া উপজেলার ভাঙ্গারহাট তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের জনসভাস্থল থেকে  এ জাদুঘরটি উদ্বোধন করবেন।  
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)  গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ এহসানুল হক বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা  জাতির সূর্য সন্তান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তাদের ত্যাগ ও বীরত্বে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। মোক্তার হোসেন দাড়িয়া একজন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিজয় দিবসের প্রাক্কালে পাকিস্তানী বাহিনী তাকে খুলনা থেকে ধরে নিয়ে যান। তারপর পরিবারের সদস্যরা তাঁর কোন খোঁজ পাননি । জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তানের স্মৃতি চিহ্ন প্রায় মলিন হতে চলেছিল। তাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায়  এ জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস জানান দেবে। আর আমরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জন্য এ প্রকল্পের কাজ করতে পেরে আমরা গর্বিত।  শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাড়িয়া স্মৃতি জাদুঘরে যাতায়াতের সড়কটি চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া  হবে।