শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ (বাসস) : চট্টগ্রামে ২১ দিনব্যাপী একুশের বইমেলা আগামীকাল শেষ হচ্ছে। এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে বিকেল সাড়ে ৪ টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
৭ ফেব্রুয়ারি শুরু এবারের বইমেলায় গতকাল পর্যন্ত ১৯ দিনে প্রায় আড়াই কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, কবি সাহিত্যিক লেখক ও মেলায় আগত দর্শনার্থীরা সার্বিকভাবে মেলাকে সফল ও গোছানো বলে মন্তব্য করেছেন।
মেলা কমিটির আহবায়ক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন মঞ্জু আজ বাসস’কে জানান, ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে গত পাঁচ বছর ধরে সম্মিলিত বইমেলার আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিবারই আগের বছরের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভালো ও গোছনো হচ্ছে মেলা। আগের বছরের ভুল-ত্রুটি পরের বছরে সংশোধন করে আমরা মেলা অধিকতর আকর্ষণীয় ও পাঠকবান্ধব করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। এবারের মেলায় প্রথম ১৯ দিনে ১৪০ টি স্টলে মোট আড়াই কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকার তুলনায় অনেক ছেট পরিসরে বইমেলার আয়োজন করি। আমাদের চেষ্টা থাকে কম জায়গার মধ্যে একটি রুচিশীল ও গোছানো মেলা আয়োজনের। গতকাল একুশে পদকপ্রাপ্ত আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় মেলায় এসেছিলেন। তিনি আলোচনা পর্বে বলেছেন, চট্টগ্রামের বইমেলা ছোট পরিসরে হলেও ঢাকার তুলনায় অনেক পরিপাটি। এখানে ঢাকার মতো ধুলাবালির উৎপাত নেই।’
মেলায় ইটের পরিবর্তে কার্পেটে মাঠ ঢেকে দেয়ার কারণে ধুলাবালি কম হয়েছে উল্লেখ করে ড. নিছার বলেন, ‘আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে আমরা এবার ইটের পরিবর্তে কার্পেটে মাঠ ঢেকে দিয়েছি। ইট বিছানো হলে অনেক সময় কিছ কিছু স্থান উঁচু-নিচু হয়ে যায়। এতে বয়স্করা সমস্যায় পড়েন। অনেকে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান।
শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন আজ ইটের বদলে কার্পেট বিছানোয় সুবিধা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এবার ঢাকা থেকে ৫০টি প্রকাশনা সংস্থা চট্টগ্রামের বইমেলায় অংশ নিয়েছে। গতবারের মেলায় ছিল ৩৮টি। আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি। বিজয়ীদের তাৎক্ষণিকভাবে বই পুরস্কার দেয়া হয়েছে। এছাড়া, এলইডি স্ক্রিনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ও দেশাত্মবোধক চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা নিয়েছি, যা আগতদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।’
এবার মেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পুরস্কাপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক বিশ^জিৎ চৌধুরীর দু’টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে, ‘আশালতা’ ও ‘দুঃসম্পর্ক’। দু’টি বইই মেলায় বেশ কাটতি পেয়েছে।
বাসস’র সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ‘বইমেলার আঙ্গিক সুন্দর ও গোছানো হয়েছে। স্টলগুলো মোটামুটিভাবে আগের বারের তুলনায় বেশি সাজানো হয়েছে। এতে উৎসবের একটা আমেজ এসেছে। তবে অনুষ্ঠানের মান আরো ভালো হতে পারতো। এজন্য একটু সময় নিয়ে, আরো মনোযোগ দিয়ে অনুষ্ঠান সাজানোর প্রয়োজন। জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ চট্টগ্রামের বিশেষায়িত সংগঠনগুলোকে দিয়ে অনুষ্ঠান সাজালে আরো আকর্ষণীয় হতো। এছাড়া, দেশবরেণ্য লেখক সাহিত্যিকদের একুশের আলোচনা পর্বে আরো বেশি যুক্ত করার সুযোগ ছিল। সিটি কর্পোরেশন খুব সহজে এ উদ্যোগ নিতে পারতো। এতে মেলার গাম্ভীর্য আরো বেড়ে যেতো।’
কবি ও ছড়াকার কামরুল হাসান বাদল বাসস’কে বলেন, ‘প্রয়োজনে স্টলের সংখ্যা কমিয়ে এগুলোকে আরো ভালো করে সাজিয়ে মেলাতে উৎসবের আমেজ বাড়ানো যায়। মেলায় আগত লেখক, পাঠকদের জন্য বাথরুম মানসম্মত নয়। এছাড়া, কাগজ ও প্রিন্টিং খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার বইয়ের দাম অপেক্ষাকৃত বেশি। ফলে এবার কম বই বিক্রি কম হয়েছে।’
এবার মেলা উপলক্ষে বাদলের দু’টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশকরা জানিয়েছেন, শেষ মুহূর্তে এসে বিক্রি বেড়েছে। আজ ও কাল আরো বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
গল্প, উপন্যাস, ছড়া-কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের প্রায় সব শাখার বইয়ে সাজানো মেলার ১৪ টি স্টল। দেশের প্রতিষ্ঠিত লেখক থেকে শুরু করে তরুণ লেখকদের অনেক বই বেরিয়েছে। এদের ভিড়ে বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান লেখকদের সাড়া জাগানো বইগুলো সমানতালে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অনুবাদের বইয়েরও কাটতি রয়েছে এবার।
আয়োজক কমিটি সূত্র জানিয়েছে, মেলার সময় আর বাড়বে না। আগামীকালই শেষ দিন। সমাপনী অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ প্রধান অতিথি থাকবেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফা ও চসিক মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী।