শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২ মার্চ, ২০২৩ (বাসস) : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি হেক্টরে বারি সরিষা ১৮ দুই মেট্রিক টন ফলেছে। কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্যাহপুর ইউনিয়নের পাইকেরবাড়ী গ্রামে আজ আয়োজিত মাঠ দিবসে ওই গ্রামের কৃষক পরেশ ওঝার জমিতে উৎপাদিত বারি সরিষা ১৮ কর্তন শেষে পরিমাপ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় এ তথ্য জানান।
কোটালীপাড়া উপজেলার পাইকেরবাড়ী গ্রামে আজ সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত মাঠ দিবসে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার নিশাত রহমান মিথুন।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায়ের সভাপতিত্বে অনষ্ঠিত এ মাঠ দিবসে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা দেবাশীষ দাস, সুবর্ণা বিশ্বাস, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রশান্ত বাড়ৈ, ইউপি সদস্য বিকাশ মল্লিক, নমিতা হালদার, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রমেন হালদার,করুনা বৈদ্য, কৃষক পরেশ ওঝাসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন।
এ মাঠ দিবসে কোটালীপাড়া উপজেলার পাইকেরবাড়ী গ্রামের ২শ’ কৃষক ও কৃষাণী অংশ নেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনায় ছিলেন কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কৃত্তিবাস পান্ডে।
কৃষক পরেশ ওঝা বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা আবদে খরচ কম। লাভ বেশি। বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেশি । তাই এ বছর ১ হেক্টর জমিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি ১৮ জাতের সরিষা আবাদ করি। মাত্র ১২০ দিনে হেক্টরে এ জাতের সরিষার ২ মেট্রিক টন ফলন পেয়েছি। সরিষা আবাদে হেক্টর প্রতি প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ২ টন সরিষা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারব। খরচ বাদে সরিষায় আমার ১ লাখ টাকা লাভ হবে। আমার দেখাদেখি আগামী বছর অনেকে এ লাভজনক সরিষা চাষাবদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তারা আমার কাছে এ জাতের সরিষার বীজ চাচ্ছেন। আমি এ বছর সরিষার বীজ সংরক্ষণ করব। আগামী বছর এ বীজ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেব। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমাকে বীজ,সার, প্রযুক্তি ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছে। তাই আমি সরিষার বাম্পার ফলন পেয়েছি।
সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা করুনা বৈদ্য বলেন, পাইকেরবাড়ী মাঠে আগামীতে সরিষার হলুদ ঢেউ উঠবে। এ বছর ওই মাঠে যারা সরিষার আবাদ করেছেন, তারা সরিষার বাম্পার ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন। তাই ওই মাঠের অন্যান্য কৃষক ও কৃষাণীরা আমার কাছে বারি ১৮ জাতের সরিষার খোঁজ নিচ্ছেন। আগামী বছরের জন্য এ সরিষার বীজের ব্যবস্থা করে দিতে বলছেন। আগামীতে তারা এ জাতের সরিষার আবাদ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, সরকার ভোজ্য তেল আমদানী নির্ভরতা কমাতে তেল জাতীয় ফসলের আবাদ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। সরকারের এ আহবানে সাড়া দিয়ে কোটালীপাড়া উপজেলার কৃষকরা ৩৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ করেন। আমরা সরিষার মাঠ দিবস করলাম। এখানে সরিষা কেটে পরিমাপ করে দেখাগেছে প্রতি হেক্টরে বারি ১৮ জাতের সরিষা ২ মেট্রিক টন ফলন দিয়েছে। এখানে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ফলন পেয়ে কৃষক সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। আগামীতে লাভজনক সরিষার চাষ সম্প্রসারণ করতে মাঠ দিবসে উপস্থিত কৃষক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এইভাবে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষার আবাদ বৃদ্ধি করা গেলে দেশে তেলের উৎপাদন বাড়বে। ভোজ্য তেলের আমাদনী নির্ভরতা কমে আসবে। বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয় হবে। এটি আমাদের কৃষির ভিত্তিকে আরো মজবুদ করবে।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কৃত্তিবাস পান্ডে বলেন, আমাদের উৎসাহে কৃষকরা এ বছর প্রণোদনার সার,. বীজসহ অন্যান্য উপকরণ পেয়ে সরিষা আবাদ বাড়িয়েছেন। তারা সরিষার বাম্পার ফলন পেয়ে বেশ লাভবান হয়েছেন। তাই আগামী বছর এ উপজেলায় সরিষার আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে। ভোজ্য তেলের আমাদনী নির্ভরতা কমাতে কৃষকরা ভ’মিকা রাখবেন।