শিরোনাম
ঢাকা, ৫ মার্চ, ২০২৩ (বাসস) : রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির পাশে একটি বাণিজ্যিক ভবনে বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তিন জন নিহত হয়েছেন। শিরিন ম্যানশন নামে ওই ভবনে বিস্ফোরণের ফলে তিন তলার দেয়ালের একাংশ ধসে পড়েছে।
এ ঘটনায় আহতদেরকে স্থানীয় পপুলার হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা করা হচেছ। বিস্ফোরণের পর স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে পপুলার হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে এই তিন জন মারা যান। নিহতরা হলেন, শফিকুজ্জামান (৪৪), আব্দুল মান্নান (৬৪) মো:তুষার (২৪)।
এ ছাড়াও আহত হয়ে অন্তত ১৪ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ধানমন্ডি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইকরাম আলী তিন জন মারা যাবার বিষয়টি বাসসকে নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন জানান, এ ঘটনায় ওয়ার্কশপ ইঞ্জিনিয়ার খাইরুলসহ কমপক্ষে ১৪ জন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় দগ্ধ নুর নবী (২৩), আকবর আলী (৫২), আশরাফুজামান (৩৬), আশা (২৫), হাবিবুর রহমান (৩২) ও জহুর আলীকে (৫২) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীনরা হলেন, জাকির হোসেন জুয়েল (৩৫), মেহেদী হাসান (২৫), তাজ উদ্দিন (৩০), কবির হোসেন (৩০), রাবেয়া খাতুন (২৫), নুর নবী (২৪), কামাল হোসেন (৪০) ও অজ্ঞাত একজন (৪০)। আহতদের অধিকাংশই পথচারী ও দোকান কর্মচারী। আহতদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে।
নিহতদের মধ্যে শফিকুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে। তিনি নিউ জেনারেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন। আব্দুল মান্নান একই প্রতিষ্ঠানে পিয়ন এবং তুষার কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন। মান্নান রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা এবং তুষারের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে।
ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ বাসসকে জানান, আজ সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডি সায়েন্সল্যাব মোড়ে শিরিন ম্যানশন ভবনে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তিন তলা বিশিষ্ট ভবনটির একটি দেয়াল আংশিক ধসে পড়ে এবং ভবনটিতে আগুন লেগে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের চেষ্টায় বেলা ১১টা ১৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপন করা হয় ১১ টা ৪৪ মিনিটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আইশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, বিস্ফোরণের কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো এলাকায় গ্যাসের তীব্র গন্ধ ভেসে আসে। তিনতলা এই ভবনটির নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় বেশ কয়েকটি কাপড়ের দোকান রয়েছে। এছাড়াও এর পাশেই সুউচ্চ আবাসিক ভবন ও প্রিয়াঙ্গন শপিংমল রয়েছে। বিস্ফোরণে দেয়ালের ইট ও কাঁচ ছিটকে সড়কে পড়ে। এতে করে ফুটপাতে থাকা পথচারী ও সিএনজিচালকসহ ১৪ জন আহত হয়েছেন।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের জানান, ‘আমাদের এখানে এখন পর্যন্ত ছয় জন চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের কয়েক জনের স্বল্প বার্ন রয়েছে। এছাড়াও কয়েক জন ২০ থেকে ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছেন।
ঢামেকের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত আট জনকে পেয়েছি। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদের অধিকাংশরাই নিউরো সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন। তাদের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ইনজুরি রয়েছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ভবনটিতে কী ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছে তা খুঁজতেই মূলত বোম ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে এসেছে।
বোম ডিসপোজাল ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, এসি, সিলিন্ডার নাকি অন্য কিছুর বিস্ফোরণ ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে সিআইডিসহ অন্যান্য সংস্থার এক্সপার্টগণ উপস্থিত আছেন, এখানে তারাও কাজ করছেন ।
অপরদিকে, ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, শিরিন ম্যানশন নামে এই ভবনটির তিন তলায় ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অফিস রয়েছে। কী কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তা এখনও জানা যায়নি। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসেছেন, তদন্তের পর জানা যাবে কী কারণে এই বিস্ফোরণটি ঘটে।