শিরোনাম
॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ৯ মার্চ, ২০২৩ (বাসস) : জেলার শতবর্ষের খাদি পণ্য আধুনিকতার সংমিশ্রণে প্রতিযোগিতার বাজারে চাহিদা ধরে রেখেছে। কুমিল্লার বাজারে খাদি কাপড়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। দৃষ্টিনন্দন, আরামদায়ক এবং কম দাম হওয়ায় খাদি কাপড়ের চাহিদা বেড়েই চলছে। কুমিল্লার লাকসাম রোড ও নগরীর মনোহরপুরে খাদিপণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি শাড়ি তৈরি করছে কুমিল্লার প্রাচীন প্রতিষ্ঠান খাদিঘর।
গৃহিনী মরিয়ম আক্তার বাসসকে বলেন, তিনি পরিবারে জন্য ফতুয়া ক্রয় করেন। নিজের জন্য খাদির শাড়ি সংগ্রহ করেন। খাদির শাড়ি দেখতে সুন্দর, গরমে পরতে আরামদায়ক এবং দামেও কম। কলেজ শিক্ষক তাজুল ইসলাম বলেন, খাদি কুমিল্লার ঐতিহ্য। খাদির বর্ণিল ডিজাইনের কারণে দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। খাদির শাড়ি এখন উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কুমিল্লা নগরীর খাদির প্রবীণ ব্যবসায়ী সুনীল চন্দ্র বাসসকে বলেন, শতবর্ষের খাদি পণ্য তার গুণগত মান বজায় রেখে আধুনিকতার সংমিশ্রণে প্রতিযোগিতার বাজারে চাহিদা ধরে রেখেছে। পৃথিবীর যেখানে বাঙালি কমিউনিটি আছে সেখানে খাদি কাপড়ের প্রসার ঘটেছে। বাংলাদেশের বিদেশি দূতাবাসে খাদিসহ দেশীয় পণ্যের প্রদর্শনী করলে তা পণ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটাবে।
সূত্র আরো জানায়, খাদির সাথে জড়িয়ে আছে ভারতবর্ষের স্বাধিকার আন্দোলন ও বাঙালি ঐতিহ্য। এ কাপড় খাদে (গর্তে) বসে তৈরি করা হয় বলে এর নাম দেয়া হয় খাদি। শতবর্ষের ঐতিহ্যের খাদি আলোচনায় আসে ১৯২১ সালে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময়। তখন মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদি শিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার জন্য ডাক উঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। কুমিল্লার খাদি এখন শৈল্পিকতার ছোঁয়ায় দেশ-বিদেশে সমাদৃত হয়ে আসছে। খাদির কাপড় যাচ্ছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এ সুনাম অর্জিত হয়েছে বহু বছর ধরে অনেক কারিগর আর ব্যবসায়ীর অক্লান্ত পরিশ্রমে। খাদি কাপড়ের সাথে এখন কয়েকটি দিক জড়িত রয়েছে। তা হচ্ছে তাঁতী, সুতা কাটুনী, ব্লক কাটার ও রঙের কারিগর। সবাই মিলে তৈরি করেন নান্দনিক খাদি কাপড়। বর্তমানে কুমিল্লায় দেড় হাজার পরিবার এ পেশায় জড়িত। মহানগরে খাদি কাপড়ের দোকান রয়েছে শতাধিক। খাদি কাপড় বিক্রির আলাদা মার্কেট রয়েছে নগরীর রাজবাড়ি এলাকায়।
খাদি শিল্পের প্রসারে উল্লেখ্যযোগ ভূমিকা রেখেছেন কুমিল্লা মহানগরের খাদি ঘরের তরুণী মোহন রাহা, খাদি কুটির শিল্পের শংকর সাহা, খাদি ভবনের দীনেশ দাশ, বিশুদ্ধ খদ্দরের মনমোহন দত্ত ও রাম নারায়ণ স্টোরের কৃষ্ণ সাহা। কারিগর আনু মিয়া বাসসকে বলেন, খাদির শাড়ির রঙ পাকা। দাম ১৫শ’ থেকে দুই হাজার টাকা। একবার যিনি পরবেন তিনি পুনরায় সংগ্রহ করবেন।
খাদিঘরের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার বাসসকে বলেন, বিভিন্ন দিবস উপযোগী শাড়ি তৈরি করেন তারা। আগে মুক্তিযুদ্ধের সাথে সমন্বয় করে বিচ্ছু নামের শাড়ি বাজারে আনেন। এবারে এনেছেন ‘ভূমিকম্প’ নামের শাড়ি। তার বিশ্বাস বিদেশি পোশাককে তার খাদির শাড়ি বড় ধাক্কা দিবে।