বাসস
  ১০ মার্চ ২০২৩, ০৯:৪৯

গোপালগঞ্জে ভাইরাস আক্রমণের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে উচ্ছে চাষিরা

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ১০ মার্চ, ২০২৩ (বাসস) : গোপালগঞ্জে উচ্ছে ফসলে অজ্ঞাত ভাইরাসের আক্রমণের পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছে চাষিরা । কৃষি বিভাগের পরামর্শে ভাইরাস নাশক প্রয়োগ করে তারা উচ্ছে ক্ষেত রক্ষা করেছে। এখন উচ্ছে বিক্রির টাকা ঘরে তুলছেন। প্রতিকেজি উচ্ছে তারা মাঠে বসেই ফঁড়িয়াদের কাছে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। উচ্ছে বিক্রির টাকায়  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়ন ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের গ্রামীন অর্থনীতিতে তেজিভাব লক্ষ্যকরা যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ  উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, চলতি রবি মৌসুমে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের ২০০ হেক্টর জমিতে কৃষক উচ্ছের চাষবাদ করেন। ওই দুই ইউনিয়নের কৃষকরা বিগত ৩০ বছর ধরে উচ্ছের চাষ করে আসছেন। অতিরিক্ত শীতে উচ্ছে ক্ষেতে ভাইরাসের আক্রমণ হয়। পরে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরামর্শে কৃষক ক্ষেতে ভাইরাস নাশক প্রয়োগ করেন। শীতের তীব্রতা কমার পর কৃষক সেচ দিয়ে উচ্ছেক্ষেত রক্ষা করেন। এখান থেকে কৃষক উচ্ছের ফলন পাচ্ছেন। এ উচ্ছে বিক্রি করে তারা ঘরে নগদ টাকা তুলতে পারছেন।
রঘুনাথপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার বলেন, উচ্ছে এ এলাকার কৃষকদের অন্যতম অর্থকরী ফসল। তারা ৩০ বছর ধরে উচ্ছে চাষ করছেন। একই ফসল বছরের পর বছর আবাদ করলে রোগাক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে। এ মৌসুমে তেমন ঘটনা ঘটেছে। আমাদের পরামর্শে কৃষক শেষ পর্যন্ত উচ্ছে ফসল রক্ষা করতে পেরেছেন। তুলনামুলকভাবে উচ্ছের ফলন কম হয়েছে। তারপরও কৃষক উচ্ছে বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সিলনা গ্রামের কৃষাণী সুরূচী বিশ^াস (১৯) বলেন, আমাদের ১ বিঘা জমিতে (৩৩ শতাংশ) উচ্ছে চাষাবাদে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার উচ্ছে বিক্রি করেছি। আরো ১০ হাজার টাকার উচ্ছে বিক্রির আশা রয়েছে।
ওই কৃষাণী আরো বলেন, এ বছর উচ্ছেতে অজ্ঞাত রোগের উদ্ভব ঘটে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমরা উচ্ছেক্ষেত কোন রকমে রক্ষা করেত পেরেছি। উচ্ছের ফলন আশংকাজনক হারে কমে গেছে। তারপরও আমদের লাভ হয়েছে। কৃষি বিভাগ উচ্ছে চাষাবাদ ১/২ বছর বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু আমাদের এলাকার কৃষক এ পরামর্শে রাজিও হন। কিন্তু উচ্ছে চাষের মৌসুম এলে আমরা লাভের আশায় ওই প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যাই।
একই গ্রামের কৃষক কনিকা বিশ^াস (৪৯) বলেন, উচ্ছের লাভের টাকায় আমদের বছরের বছর উচ্ছেতে তেমন ভাল লাভ হয়নি। তাই আগামী বছর এ জমিতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে উচ্ছের পরিবর্তে  সরিষার আবাদ করব। তার পরের বছর আবার লাভজনক উচ্ছের আবাদে ফিরে আসব। ওই কৃষাণী আরো বলেন, উচ্ছে মৌসুমের শুরুতে ১২০ টাকা কেজি দরে উচ্ছে বিক্রি শুরু করি। এখন ৬০ টাকা দরে উচ্ছে বিক্রি করছি। উচ্ছের ভালো দাম থাকায় উৎপাদন কম হলেও লাভ হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, উচ্ছেতে ভাইরাসের আক্রমনের পরও কৃষকরা আমাদের পরামর্শ গ্রহণ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। উচ্ছে ক্ষেত থেকে উচ্ছে সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। এতে তাদের লাভ হচ্ছে। তারা আমাদের পরামর্শে চাষাবাদ করলে তাদের এ সমস্যা থাকবো না। অন্য ফসল করে তারা আরো বেশি লাভবান হতে পারবেন।
গোপালগঞ্জ শহরের  আড়তদার জাহিদ হোসেন বলেন, এ বছর বাজারে উচ্ছের আমাদনী কম। তারপরও বাজারে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে প্রতি কেজি উচ্ছে বিক্রি হচ্ছে। কৃষক উচ্ছের ভালো দাম পাচ্ছেন। এছাড়া গোপালগঞ্জে উৎপাদিত উচ্ছে ঢাকা, খুলনা,বরিশাল সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। তাই উচ্ছে চাষের গ্রামগুলোর অর্থনীতি এখন চাঙ্গা।