শিরোনাম
॥ মো. শফিকুল ইসলাম ॥
ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১০ মার্চ, ২০২৩ (বাসস) : ফলটি দেখতে অনেকটা আপেলের মতো বড়। ওপরের অংশে রয়েছে হালকা সিঁদুর রঙ। ফলটি খেতে বেশ সুস্বাদু। নাম ‘বল সুন্দরী’ কুল বরই। এক একটি গাছ ৫-৬ হাত লম্বা। গাছের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত থোকায়-থোকায় ঝুলছে শুধু বরই আর বরই। কঠোর পরিশ্রম আর ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বাণিজ্যিক ভাবে বল সুন্দরী কুল বরই চাষ করে ভাগ্য বদল করেছেন মো. মনির হোসেন নামে এক চাষি। মনির উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের আজমপুরের রামধননগর এলাকার মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে।
বল সুন্দরী ফল চাষ করে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক লোকজন এসে দেখে এ বিষয়ে নানা পরামর্শ তার কাছ থেকে নিচ্ছেন। বাগানের বল সুন্দরী বিক্রি শুরু হয়েছে। এই পর্যন্ত প্রায় লাখ টাকার উপর তিনি এই বল সুন্দরী বিক্রি করেছেন বলে জানান।
স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকায় পাইকারী দরে বিক্রি করছেন। বাজারে এই কুলের চাহিদা বেশি। কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে এই বাগান থেকে ২ লাখ টাকার অধিক উপর বরই বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ পাতার ফাঁকে লুকিয়ে রয়েছে বল সুন্দরী কুল বরই। যে দিকে দৃষ্টি যায় শুধু ফল আর ফল চোখে পড়ছে। দেখতে অনেকটা মাঝারি সাইজের আপেলের মতো। রঙ আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল। খেতে অনেক সুস্বাধু ও মিষ্টি। গাছের পরিচর্যাসহ ফল বিক্রি নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। প্রতি গাছে প্রায় ২০-২২ কেজির উপর করে আপেল কুল বরই ধরেছে।
চাষি মনির জানান, দীর্ঘদিন ধরে কৃষির পাশাপাশি এলাকায় ব্যবসা করে আসছেন তিনি। গত দুই বছর আগে বন্ধুদের সঙ্গে এক জায়গায় বেড়াতে গিয়ে বল সুন্দরী বরই দেখে তার এই চাষের প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ তৈরি হয়। এরপর বরই চাষ করতে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। তাদের পরামর্শে বাড়ি সংলগ্ন রামধননগর রেলওয়ে গেইট এলাকায় প্রায় ৩৫ শতাংশ জায়গার মধ্যে প্রায় দেড় ১ শতাধিক বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি মিশ্র জাতের আপেল কুলের গাছের চারা রোপণ করেন। জায়গা প্রস্তুত, কুল গাছের চারা রোপণসহ তার প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়।
চারা রোপণ করার ৬ মাসের মাথায় ফলন আসে। গত বছর তিনি এই বাগান থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার কুল বরই বিক্রি করেন। এ বছর তার বরই গাছে তুলনামুলক ভাবে ভালো ফলন এসেছে। গত এক মাসের অধিক সময় ধরে চলছে বরই বিক্রি। এই ফলটি অতি মিষ্টি, খেতে আপেলের মতোই ও সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বিক্রিতেও ভালো সাড়া পাচ্ছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, একদিন পর পর ৩-৪ হাজার টাকার ওপর রবই বিক্রি করছি। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় স্থানীয়দের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে বাগান থেকে সুন্দরী বল নিয়ে যাচ্ছেন। এই পর্যন্ত প্রায় এক লাখ টাকার উপর সুন্দরী বল বরই বিক্রি করেছি। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এই মৌসুমে দুই লাখ টাকার উপর বিক্রি করতে পারবো।
এই ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহানা বেগম জানান এই উপজেলায় অনেকেই বাণিজ্যিক ভাবে এই চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছেন। এর মধ্যে কৃষক মনির হোসেন একজন সফল চাষি। বেকার ও শিক্ষিত যুবকরা কুল চাষে এগিয়ে এলে একদিকে বেকারত্ব যেমন দূর হবে, অপরদিকে আসবে উপজেলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।