শিরোনাম
॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ১১ মার্চ, ২০২৩ (বাসস): চলতি মৌসুমে জেলার ৭ উপজেলায় ১৮ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে তরমুজের আবাদ হওয়ায় পাশাপাশি এবার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
বর্তমানে স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে তরমুজ উঠতে শুরু করেছে। আর প্রথম দিকের তরমুজ হওয়ায় দামও ভালো পাচ্ছে কৃষকরা। সামনের দিনগুলোতে এর বিক্রি আরো বাড়বে। বিশেষ করে আসন্ন রমজান মাসে তরমুজের কদর তুঙ্গে থাকে। এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হওয়ায় মাঠে তরমুজের অবস্থা বেশ ভালো রয়েছে।
এদিকে এবছর জেলায় তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ২৪৯ হেক্টর। হেক্টর প্রতি তরমুজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫২ টন করে। আর মোট তরমুজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেওয়া হয়েছে ৯ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭৬ টন। সব কিছু ঠিক থাকলে তরমুজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে এখানে তরমুজ চাষ শুরু করা হয়। অনেকে আবার আগাম তরমুজ আবাদ করেছেন। মূলত তরমুজ ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ঘরে তোলে কৃষকরা। ইতোমধ্যে তরমুজ বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। ভোলায় সাধারণত ধানের চাইতে কয়েক গুণ বেশি লাভ হয় তরমুজ চষে। তাই বহু কৃষক স্বল্প মেয়াদের এই ফসল চাষে লাভবান হচ্ছেন।
উপ-সহকারী উদ্বিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বাসস’কে বলেন, এই জেলায় সাধারণত বাংলা লিংক-১, লাকী ড্রাগন, গ্রেট-১, ট্রপিক্যল ড্রাগন, পাকিজা, আস্থা, জামিরা, থাইল্যান্ড-২, সুগার এমপি আর, বিগ ফ্রামলী, এশিয়ান-২ ইত্যাদী জাতের তরমুজ আবাদ বেশি হয়। প্রত্যেকটি তরমুজ ৩-৪ কেজি ওজন থেকে শুরু হয়ে ২০ কেজির উপরে হয়।
তিনি বলেন, জেলার মোট তরমুজ আবাদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১২২০ হেক্টর, দৌলতখানে ১৪৯ হেক্টর, বোরহানউদ্দিন ৭০০, লালমোহন ৪১৮, তজুমদ্দিন ৪০, চরফ্যাশনে ১৫ হাজার ৮৫০ ও মনপুরায় ৬ হেক্টর জমি রয়েছে। মূলত চারাঞ্চলগুলোতে তরমুজের আবাদ বেশি হয়।
উপজেলা সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের কৃষক হাবিব, লোকমান ও কবির বাসসকে বলেন, তারা প্রায় ৩ একর জমিতে এবছর তরমুজের চাষ করেছেন। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা তাদের সব ধরনের পরামর্শ সেবা দিয়ে আসছেন। আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যে তারা প্রথম পর্বের তরমুজ বিক্রি শুরু করবেন।
কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চরের তরমুজ চাষি লিয়াকত আলী, জাবেদ হোসেন, সুবেদ মিয়া, বাসেত মাঝি ও কুদ্দুস মিয়া বলেন, তারা প্রত্যেক বছরই তরমুজ আবাদ করে থাকেন। তরমুজ মাঠে প্রথম দিকে ভালো থাকে। কিন্তু শেষ সময়টাতে ভয় বেশি। কারণ শিলা বৃষ্টি ও অতি বৃষ্টি এর প্রধান শত্রু। যদি এই সময়টাতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হয় তবে তারা লাভবান হবেন।
তারা বলেন, শিলা বৃষ্টিতে তরমুজের ক্ষেতের উপর পলিথিন দিয়ে ডেকে রাখার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি অফিস। এছাড়া অতি বৃষ্টিতে পানি জমে যাতে গাছের গোড়া পঁচতে না পারে সে জন্য বিশেষ স্প্রে’র কথা বলা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাসান ওয়ারেসুল কবীর বাসস’কে বলেন, পুষ্টিগুণে ভরা রসালো এ ফলের প্রচুর চাহিদা থাকায় অনেক কৃষকই তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিককালে তরমুজের বাজার দাম ভালো থাকায় এর আবাদে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। এছাড়া উন্নত মানের বীজ, উদ্বুদ্ধকরণ প্রশিক্ষণ ও কৃষি উপকরণ বিতরণের ফলে আমাদের তরমুজ আবাদ প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যারা আগাম তরমুজ চাষ করেছেন সেসব তরমুজ ইতোমধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, প্রথমের দিকের ফলন হওয়ায় দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বরিশাল, ঢাকা হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ভোলার তরমুজ চলে যায়। আগামী মে মাস পর্যন্ত তরমুজের ফলন পাওয়া যাবে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে অবশ্যই এই জেলায় তরমুজের বাম্পার ফলন হবে বলে জানান তিনি।