শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ১৩ মার্চ, ২০২৩ (বাসস): চারিদিকে সবুজের সমরোহ। তারমধ্যে উকি মারছে সূর্যমুখি। সূ র্যমুখি অপরূপ শোভা ছড়াচ্ছে। গোটা এলাকা বসন্তের এ মনোরম পরিবেশে সবুজ, হলুদের আভায় মুখরিত। লাল শাক ও ডাটা শাক লাল-সবুজের গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে । ড্রাগন ফলের সবুজ ক্যাকটার্স মাথা তুলে দাড়িয়েছে। সেই সাথে আর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত লাউ,মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, ওলকপি ও শিমের প্রচুর্যতা শেষ হয়েছে। সংগ্রহ করা হয়েছে উৎপাদিত সরিষা। এখন সেখানে ঢ্যাড়শ, পুইশাক, করলা,শশা,চিচিঙ্গা ও মিষ্টি কুমড়া আবাদ শুরু হয়েছে। এ ভাবেই গোপালগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসাপাতাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট কৃষি খামারে পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একইঞ্চি জমিও পরিত্যক্ত না রেখে ফসল আবাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মায়ের নামের এ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত বছরের নভেম্বরে হাসাপাতালের ১৫ একর জমির মধ্যে ৫ একর জমিতে কৃষি পণ্য উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারপর থেকেই এ হাসাপাতালটিতে অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ অব্যাহত রয়েছে।
গোপালগঞ্জ বঙ্গমাতা চক্ষু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. নাহিদ ফেরদৗসী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে গত নভেম্বর থেকে আমরা এখানে মানব দেহের জন্য নিরাপদ ও বিষ মুক্ত শাক-সবজি উৎপাদন শুরু করি। তখন লাউ,মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, ওলকপি, সরিষা ও শিমের আবাদ করি। ওই সব ফসল সংগ্রহ করা প্রায় শেষ হয়েছে। আমাদের ক্যাম্পাসে এ মুহুর্তে সূর্যমুখি, লাল শাক,ডাটা শাক রয়েছে। চাষাবাদ করা হয়েছে ড্রাগন ফল। এখন ঢ্যাড়শ, পুইশাক, করলা,শশা,চিচিঙ্গা ও মিষ্টি কুমড়া আবাদ শুরু হয়েছে। এখানে উৎপাদিত শাক-সবজি চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খাচ্ছেন। নিরাপদ এসব শাক-সবজি খেয়ে তারা পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছেন। শাক-সবজি, ফুল ও বৃক্ষরাজিতে হাসপাতাল ক্যাম্পাসটি এখন মুখরিত। এটি গোপালগঞ্জের প্রকৃতি প্রেমিদের কাছে একটি প্রিয় স্থানে পরিণত হয়েছে। রোগী বান্ধব এ হাসাপাতালে রোগীর স্বজনরা মনোরম পরিবেশে সময় কাটাচ্ছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউপি চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান চৌধূরী টুটুল বলেন, বঙ্গমাতা চক্ষু হাসপাতাল চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের চক্ষু সেবায় বিশাল অবদান রাখছে। সেই সাথে প্রথানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে শাক,সবজি উৎপাদনেও পিছিয়ে নেই এই প্রতিষ্ঠানটি। ফুল ও সবুজ বৃক্ষ হাসাপাতালের শোভা ছড়াচ্ছে। হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ সবজি চাষ করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি একটি পরিবেশবান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। এলাকার মর্যাদাপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি দাঁড়িয়ে আছে। আমরা মনে করি এটি আমাদের গর্ব।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল কাদের সরদার বলেন, হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসাপাতালটিতে শাক-সবজি উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। এখানে উৎপাদিত সবজি নিরাপদ। এটি খেয়ে ওই হাসপাতালে কর্মরতরা পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছেন। এতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কৃষির জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি অনুকরণ করে সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়া ওই এলাকার অনেক কৃষক হাসপাতালের বিষমুক্ত নিরাপদ শাক-শবজির চাষাবাদ গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
গোবরা গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান চৌধূরী বলেন, আমি বঙ্গমাতা চক্ষু হাসাপাতালের শাক-সবজি চাষাবাদ দেখছি। এখানে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। সবজি উৎপাদনে অর্গানিক সার ও জৈব বালাই নাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। সবজির ফলনও ভালো। তাই ভবিষ্যতে আমরা এ সবজির আবাদ বৃদ্ধি করব।
গোবরা ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া গ্রামের কৃষক মনিরুল আলম বলেন, বঙ্গমাতা চক্ষু হাসাপাতাল সবুজে সেজেছে। সেই সাথে এখানে শাক-সবজি ফলানো হচ্ছে। এ ক্যাম্পাসে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। হাসপাতালের পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে এখন সুর্যমুখির রাশি রাশি হাঁসি। বাইরে থেকে হাসাপাতালটিকে একটি আদর্শ কৃষি খামারের মতো দেখা যাচ্ছে। হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের শাক-সবজির চাষ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমিও আমার বাড়ির আঙ্গিনার পতিত জমিতে শাক-সবজির আবাদ করব।
রোগীর স্বজন ঝিনাইদহ জেলার শৈলকোপা উপজেলার নাগিরহাট গ্রামের নাজিব আহম্মেদ খান বলেন, বঙ্গমাতা হাসাপাতালটিতে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে সবাই হাঁসিমুখে মানসম্মত চক্ষুরোগের চিকিৎসা সেবা দেন। সেই সাথে হাসপাতালের ক্যাম্পাসটি চমৎকার। এখানে সবুজ পরিবেশ আছে। এখানে সুর্যমুখি ফুল ফুটেছে। এ ফুল হাসপাতালের পরিবেশকে আরো মনোরম করে দিয়েছে। অসম্ভব এ সুন্দর পরিবেশে আসলে আমার মত, সবার খুব ভালো লাগে। মন ভালো হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও বঙ্গমাতা চক্ষু হাসাপাতাল নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা প্রফেসর ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, হাসাপাতালটিতে আমরা আরো নতুন নতুন বিভাগ চালু করে এটিকে একটি বিশ^মানের হাসপতালে পরিণত করব। প্রফেসর ডা. নাহিদ ফেরদৌসী ১ বছর আগে এ হাসপাতালে যোগদান করেছে। সে এ হাসপাতালকে অনণ্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাইছে। তাই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে শাক-সবজি উৎপাদন আব্যাহত রেখেছে। সে হাসাতালের প্রাকৃতিক পরিবেশ বদলে দিয়েছে। তাই এ প্রতিষ্ঠানটি গোপালগঞ্জ বাসীর কাছে একটি প্রিয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ বঙ্গমাতা চক্ষু হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। তারপর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠির আধুনিক চক্ষু চিকিৎসা সেবায় ব্যাপক অবদান রাখছে এ হাসপাতালটি। ইতিমধ্যেই এ হাসাপাতালটির সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।