শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ১৫ মাচর্, ২০২৩ (বাসস): জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, আমাদের সামনে রয়েছে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতার জায়গা তৈরি করতে হবে। এজন্য যুগোপযোগী শিল্পায়ন যেমন করতে হবে তেমনি করের আওতাও বাড়াতে হবে।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের প্রাক্কালে দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য ও স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। আজ ১৫ মার্চ সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমাদের কাছে যেসব প্রস্তাবনা এসেছে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সবকিছু বাস্তবায়ন করতে পারবো না। কিন্তু ভবিষ্যতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে আগামীতে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে। সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে দেশের ক্রমবর্ধমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা এবং সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে এনবিআর কর, শুল্ক এবং ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর কাজ করছে। পাশাপাশি এনবিআরের উইংসগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য চট্টগ্রামে দৃষ্টিনন্দন কাস্টমস হাউস ভবন, কর ভবন, ট্যাক্স একাডেমি আধুনিকায়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ভ্যাট ভবনের জন্যও প্রকল্প নেয়া হবে।
চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. মাসুদ সাদিক, ড. সামস উদ্দিন আহমেদ ও জাকিয়া সুলতানা, চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, পরিচালক এ কে এম আক্তার হোসেন, অঞ্জন শেখর দাশ ও মো. রকিবুর রহমান (টুটুল), চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক আবুল বশর চৌধুরী, চেম্বারের প্রাক্তন পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবিদা মোস্তফা, কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি মো. আবু মোরশেদ চৌধুরী, রাঙামাটি চেম্বারের সভাপতি মো. আব্দুল ওয়াদুদ, রিহ্যাব, চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু, শিপ বিল্ডিং-এর পক্ষে ইঞ্জিনিয়ার গোলাম সরওয়ার, শিপ রিসাইক্লিং’র পক্ষে নওশির হাসান, চিটাগাং ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশনের পক্ষে মো. নুর হোসেন, বিজিএপিএমইএ’র পক্ষে পরিচালক তৌফিকুল আলম, লুব-রেফ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউসুফ, বিএসআরএম’র পক্ষে শেখর রঞ্জন কর, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের পক্ষে আশরাফ হোসেন মাসুদ, মোটর পার্টস এন্ড টায়ার টিউব মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের পক্ষে লিয়াকত আলী চৌধুরী, রাবার-গার্ডেন ওনার্স এসোসিয়েশনের পক্ষে মো. কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সালামত আলী, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, রিলায়েন্স এসেট্স্ এন্ড ডেভেলপমেন্টস (বিডি) লি.-এর পরিচালক ওমর মুক্তাদির ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবসায়ী গ্রুপের এম ইলিয়াছ খান আইয়ুব।
সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ও অন্যান্য সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চট্টগ্রামের কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কমিশনার, চেম্বার পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), মো. ইফতেখার ফয়সাল, মোহাম্মদ আদনানুল ইসলাম, মোহাম্মদ নাসিরুল আলম (ফাহিম), খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কনজরী চৌধুরী, চেম্বারের প্রাক্তন পরিচালকবৃন্দসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতৃবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় স্বাগতঃ বক্তব্যে চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতীয় বাজেট সাজানো, বিশেষ করে আমরা বর্তমানে যে সকল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি তা হ্রাস করা এবং দীর্ঘমেয়াদী টেকসই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে দেশের স্বনির্ভর রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়ার আহবান জানান তিনি।
চেম্বার সভাপতি আরো বলেন, সরকারের রাজস্ব যেমন বাড়াতে হবে তেমনি যারা রাজস্ব যোগান দেয় তাদের সুযোগ সুবিধা মাথায় রেখে ভ্যাট, শুল্ক ও ট্যাক্স বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। তিনি ব্যক্তি পর্যায়ে করসীমা ৩ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, পরবর্তী ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ৫ শতাংশ, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ এবং তদূর্ধ্ব ২৫ শতাংশ হারে নির্ধারণ, ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্স এডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম প্রবর্তন, অগ্রিম কর বা অগ্রিম ভ্যাট সমন্বয় করে দ্রুত রিফান্ড করা, এইচএস কোড সমস্যা নিরসনের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম শুল্ক জরিমানা এবং সময়ক্ষেপণের জটিলতা দূর করার প্রস্তাব করেন। পণ্যের বিবরণ সঠিক থাকলেও এইচএসকোড এ অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে প্রায় ২০০-৪০০% জরিমানা করা হয়। পণ্যের বিবরণ যদি সঠিক প্রমাণিত হয় তাহলে এইচএস কোডের অনিচ্ছাকৃত ভুলে জরিমানা না করা, রপ্তানি খাতকে আরো সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ, রপ্তানি বহুমুখীকরণে গবেষণা খাতের বিনিয়োগকে করমুক্ত করার সুপারিশ করেন চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।
এনবিআর সদস্য মো. মাসুদ সাদিক বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য যেন সহজ হয় এবং বাধাগ্রস্ত না হয় সেইজন্য এইচএস কোড জটিলতা নিরসন করা হবে। এছাড়া কাস্টমস বিষয়ক যেসব প্রস্তাবনা এসেছে তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে এনবিআর।
আমরা ‘বদলে যাব, বদলে দিব’ এই শ্লোগানে দেশের রাজস্ব আয় বাড়াতে করের ক্ষেত্র বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে এনবিআর সদস্য ড. সামস উদ্দিন আহমেদ বলেন, আয়কর দেয়ার সংস্কৃতি বাড়াতে হবে। এজন্য দেশের করনেট সম্প্রসারণের জন্য আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি করমুক্ত আয়সীমা ৩ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা করার প্রক্রিয়া বিবেচনাধীন আছে বলে জানান।
এনবিআর সদস্য জাকিয়া সুলতানা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে ঋণের নির্ভরতা কমাতে হবে। এই জন্য ট্যাক্সের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।
অন্যান্য বক্তারা এইচএস কোড জটিলতা নিরসন, বিকল্প সার্ভারের ব্যবস্থা করা, নারী উদ্যোক্তাদের আয়কর সীমা ও এসএমই খাতে জামানতহীন ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ২৫ লক্ষ টাকা থেকে ৫০ লক্ষ টাকা করা, সকল কাস্টমস স্টেশনে একই পণ্যের সমমূল্যে শুল্কায়ন নিশ্চিত করা, রাজস্ব আইন পরিবর্তনের কমিশন গঠন, রড, সিমেন্ট ইত্যাদি নির্মাণ সামগ্রীর দাম স্থিতিশীল রাখা, আগাম করের ক্ষেত্রে দ্রুত রিফান্ড, ভ্যাট সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি সময়সীমা নির্ধারণ, রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ব্যতিরেকে শুধু মূসক ৬.৩ এর মাধ্যমে আসবাবপত্র বিপণনের সুযোগ প্রদান, লবণ শিল্পের উন্নয়নে হাইটেক প্রযুক্তি আনায়নে শুল্কমুক্ত রাখা, বিষমুক্ত অর্গানিক শুটকি উৎপাদনে কর অবকাশ সুবিধা, ভ্যাটের হার কমিয়ে সর্বস্তরে চালু করা, চট্টগ্রাম কাস্টমস-এর জনবল বৃদ্ধি ইত্যাদি দাবি উত্থাপন করেন।