শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) ,২৭ মার্চ, ২০২৩ (বাসস) : চৈত্রের শুরুতে সিয়াম সাধনার মাস রমজান শুরু হয়েছে। দিনের ভাগে হালকা গরম পড়ছে। আর তাতেই শরবতের কদর বেড়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত সিডলেস বারমাসী সুগন্ধি বারি লেবু-৪ শরবতে সর্বাধিক ব্যবহৃত হচ্ছে। রমজানে লেবুর চাহিদা বেড়েছে। বাগানে বারি লেবু-৪ এর বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই সাথে ভালো দাম পেয়ে চাষি নগদ টাকা ঘরে তুলতে পারছেন। এ লেবু চাষে বাজিমাত করেছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামের সফল কৃষক মোঃ সামাউল ইসলাম (৫৫)। প্রতিদিন তিনি তার বাগান থেকে ৮ থেকে ১০ হাজার লেবু বিক্রি করছেন। সপ্তাহে ৫ দিন তিনি বাগান থেকে লেবু সংগ্রহ করেন। লেবু থেকেই বছরে তার আয় হচ্ছে প্রায় কোটি টাকা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তার লেবু যাচ্ছে। লেবু বাগান করে মোঃ সামউল ইসলাম এলাকায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রতিদিন পাইকেররা তার বাগান থেকে লেবু কিনে নিয়ে যান। এ লেবু তারা গোপালগঞ্জ ঢাকা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। লেবু ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িতরাও ভালো লাভ করছেন।।
সফল কৃষক মোঃ সামাউল ইসলাম বলেন, গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের সহযোগিতায় ৩ বছরে আগে আমি কদমপুর গ্রামের ১৬ একর জমি লিজ নিয়ে সিডলেস বারমাসী বারিলেবু-৪ এর চাষাবাদ শুরু করি। আমরা বাগানে ১২ হাজার লেবু গাছ আছে। প্রথম বছর থেকেই আমি লেবুর ফলন পেতে শুরু করি। ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এ লেবুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এখন রমজানে লেবুর চাহিদা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সাইজ ভেদে প্রতিটি লেবু ৬ থেকে ৯ টাকা দরে পাইকারী বিক্রি করছি। এ মাসে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকার লেবু বিক্রি হবে। সারা বছর এখান থেকে কোটি টাকার লেবু বিক্রি করি। বাগানে এসে পাইকেররা নগদ টাকায় লেবু কিনে নিয়ে যায়। তারা এ লেবু গোপালগঞ্জ , ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। আমার বাগানের লেবুর ফ্লেভার ভালো। লেবুতে কোন বিঁচি নেই। এছাড়া এ লেবুতে প্রচুর রস আছে। লেবুটি সালাদ ও শরবতে বেশি ব্যহৃত হয়। এ কারণে বাজারে আমার লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। লেবুর বাগান করে আমি লাভবান হয়েছি। আমার দেখাদেখি মুকসুদপুর ও আশপাশের উপজেলা গুলোতে অন্তত ১০টি বাণিজ্যিক লেবু বাগান গড়ে উঠেছে। তারাও লেবুর চাষাবাদ করে ভালো আছেন।
গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড.এমএম কামরুজ্জামান বলেন, মোঃ সাউল ইসলাম একজন সফল কৃষক। তিনি ৩ বছরে আগে আমাদের উৎসাহে সিডলেস বারমাসী বারি লেবু-৪ চাষ শুরু করেন। আমরা তাকে চারা, সার, ছত্রাক নাশক, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছি।
গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এইচ এম খায়রুল বাশার বলেন, আমাদের এ জাতের লেবু প্রতিটি গাছের ডালে থোকায় থোকায় ফলন দেয়। ৩৬৫ দিনে এ জাতের একটি লেবু গাছ ৫০০ থেকে ৬০০টি লেবু ফলন দিতে সক্ষম। তাই প্রতিদিন গড়ে একটি গাছ থেকে ২টি লেবু সংগ্রহ করা যায়। লেবুটি সুগন্ধযুক্ত তাই শরবত ও সালাদে এ লেবু সবচেয়ে বেশি সমাদৃত। সারাদেশে বারমাসী এ লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এ লেবু চাষ করে সামাউলসহ আরো অনেকে লাভবান হয়েছে। এ কারণে গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর অঞ্চলে লাভজনক এ লেবুর চাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে।
কদমপুর গ্রামের কৃষক মোঃ ওবায়দুর রহমান (৫২) বলেন, সামাউল একজন সফল কৃষক। তিনি ১৫ বছর আগে যশোর থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে আসেন। তিনি এখানে কলা, পেয়ারা, মাল্টা, কুল চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। এখন লেবুতে বাজিমাত করেছেন। তিনি একই জমিতে বারবার এক জাতীয় ফসল আবাদ করেন না। তাকে আমাদের এলাকার অনেক কৃষক অনুকরণ করে লাভবান হচ্ছেন।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা সদর বাজারের আড়তদার টুটুল বলেন, সামাউলের লেবুর সাইজ বড়, রস বেশি ও সুগন্ধি। এ কারণে তার লেবু একটু বেশি দামে বিক্রি করা যায়। বাজারে চাহিদাও বেশি। আমি তার লেবু বিভিন্ন জেলায় চালান করি।