বাসস
  ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৯:৩১

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে মুগ্ধতা ছড়ানো লাল কন্ঠি ঘুঘু

হবিগঞ্জ, ৩১ মার্চ, ২০২৩ (বাসস): জেলার বানিয়াচং উপজেলার নাগুড়া এলাকায় অবস্থিত ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বড়-বড় গাছে আছে হরেক রকম পাখি। ব্রির ডরমেটরিতে উড়ে আসে একটি সুন্দর পাখি। পাখিটি ধরে ফেলেন ব্রির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোবারক হোসেন। সবাই অবাক হয়ে দেখছিলেন সুন্দর এই পাখিটি। কিন্তু এটি ঘুঘু জাতীয় পাখি হবে অনুমান করলেও কেউ চিনতে পারেননি পাখিটি। এমন পাখি তারা আর দেখেনওনি কোনদিন। পাখির ছবি তুলে আবার ছেড়ে দেন এটি। মুহুর্তের মাঝেই উড়ে গিয়ে একটি গাছে আশ্রয় নেয় পাখিটি। পরে দেখা যায় গাছে আরও এ ধরনের বেশ কয়েকটি পাখি আছে। মুগ্ধতা ছড়ানো এই পাখির খোঁজ নিয়ে ব্রির সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাইন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস ছবিটি পোস্ট করেন ফেসবুকে। পরে তারা এই পাখির পরিচিত পেয়ে যান।
‘লাল কন্ঠি ঘুঘু’ পাখির ইংরেজি নাম: ‘রেড টার্টল ডাব’, এরা ‘লাল রাজঘুঘু’ এবং ‘জঙ্গলা ঘুঘু’ নামেও পরিচিত।
দেশের বিখ্যাত পাখি ফটোগ্রাফার ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জালাল আহমেদ বলেন, এই পাখিটি এক সময় প্রচুর পরিমাণে ছিল। এখন অনেক কম। তবে আইসিউউএন এর মতে এটি এখনও মহাবিপন্ন নয়।
হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দেব জানান, খুব বেশি সময়ের কথা নয়, তখন ‘লাল ঘুঘু’র বিচরণ ছিল দেশের যত্রতত্র। হালে এদের নজরে পড়ছে না সেরকমটি। অনেকটাই কমে গেছে প্রজাতিটি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বন-বনানী, জোপ-জঙ্গল উজাড় হওয়া এবং শিকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়া। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সমগ্র বিশ্বেই এদের সংখ্যা ধীরে-ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। যার ফলে আইইউসিএন লাল ঘুঘুকে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এদের স্থায়ী নিবাস বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, জাপান, তাইওয়ান ও চীন।
লাল ঘুঘু পাখিটি নিরীহ এবং শান্ত। দেখতে খুবই সুন্দর। ঝোপ-জঙ্গল, খোলা মাঠ প্রান্তর কিংবা কৃষিজমিতে এদের উপস্থিতি দেখা যায়। জোড়ায়-জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে এটা-সেটা কুড়িয়ে খায়। ভোর ও গোধূলিতে খাদ্য সংগ্রহে তৎপর থাকে। পুরুষ পাখি প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করে, ‘ক্রুর- ক্রুর-ক্রুর সুরে ডকে। এই পাখি লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার। মাথা নীলাভ-ধূসর। ঘাড়ে মোটা কালো বন্ধনী। বন্ধনীর উপরে-নিচে থাকে সরু সাদা বন্ধনী। পিঠ ও ডানার পালক ইট রঙের লালচে। ডানার প্রান্ত পালক কালচে। নিতম্ব নীলাভ-ধূসর। বুক ও পেট হালকা গোলাপী। লেজ ধূসর। লেজের নিচের দিকটা সাদা। স্ত্রী পাখির রঙ ভিন্ন। দেহের উপরের দিকে গাঢ় হলদে-বাদামি। নিচের দিকে হলদে-ধূসর। উভয়ের ঠোঁট কালো, পা বেগুনি-কালো। ওড়ার পালক কালো।