শিরোনাম
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ৪ এপ্রিল,২০২৩ (বাসস) : মার্চের শেষ ৩ দিন বৃষ্টিপাত হয়েছে । এপ্রিলের শুরুতে আকাশ মেঘলা থাকছে । কখনো কখনো বৃষ্টি নামছে । এ অবস্থায় দিনে তাপমাত্র বাড়ছে । রাতে তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে । ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। এটি ক্ষেতের বোরোধানের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে । এ অবস্থায় বোরোধান ক্ষেতে, পাতাপোঁড়া, খোলপঁচা, খোলপোঁড়া রোগ ও মাজড়া, গান্ধী,বাদামী গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণের আশংকা দেখা দিয়েছে । এসব রোগ ও পোকার হাত থেকে বোরোধান রক্ষায় পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিস ।
এ টিমের সদস্যরা হলেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ হামিদুল ইসলাম, সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল কুদ্দুস মোল্লা ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ লিয়াকত হেসেন ।
এছাড়া বোরোধানের রোগবালাই ব্যবস্থাপনায় সার্বক্ষণিক মাঠ পর্যবেক্ষণের জন্য সব ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বোরোধানের মাঠে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাফরোজা আক্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাফরোজা আক্তার বলেন, মার্চের শেষে ও এপ্রিলের শুরুতে তাপমাত্রা বেশ ভালো থাকে। ধানের জন্য এ তাপমাত্রা খুবই উপকারী । কিন্তু এ বছর এ সময় দিনে তাপমাত্রা বাড়ছে। রাতে তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে । এ ধরণের আবহাওয়া ধানের জন্য অনুকূল নয় । এ আবহাওয়ায় বোরোধানের ক্ষেতে, পাতাপোঁড়া, খোলপঁচা, খোলপোঁড়া রোগ ও মাজড়া, গান্ধী,বাদামী গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণের আশংকা দেখা দিয়েছে । তাই এসব রোগ ও পোকার হাত থেকে বোরোধান রক্ষায় পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করেছি। এছাড়া বোরোধানের রোগবালাই ব্যবস্থাপনায় সার্বক্ষণিক মাঠ পর্যবেক্ষণের জন্য সব ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বোরোধানের মাঠে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছি। আমি টিমের সদস্যদের নিয়ে মাঠে মাঠে যাচ্ছি । উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও মাঠে থাকছেন । আমরা সমন্বিত উদ্যোগে বোরোধান ক্ষেতে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি নিরুপন করছি । এছাড়া অন্যান্য রোগ আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করছি । তারপর রোগ ও পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষায় কৃষককে পরামর্শ দিচ্ছি । কৃষক এসব পারামর্শ নিয়ে তা ক্ষেতে প্রয়োগ করছেন । এভাবে আমরা কৃষকের কষ্টের ফসল রক্ষায় সহায়তা করছি ।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, বোরোধানের বিআর-২৮ জাতের ধানে এধরণের সমস্যা হয়েছে । নতুন জাতের ধানে এ সমস্যা নেই । তাই আমরা পুরনো এ বিআর-২৮ জাতের ধান চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করেছিলাম । তারপরও সামান্য কিছু জমিতে এ ধানের আবাদ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা ।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের কৃষক আসাব চৌধূরী (৬০) বলেন, বছর ১ বিঘা জমিতে বোরোধানের আবাদ করেছি । গত ৭/৮ দিন ধরে আবহাওয়া খারাপ যাচ্ছে । ক্ষেতে রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ হতে পরে । এ আশংকায় কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে আসছেন । ক্ষেতে ধানের রোগবালাই পরীক্ষা করছেন । তারপর পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের পরামর্শে আমরা প্রতিষেধক ব্যবহার করে রোগ ও পোকা দমন করছি । এভাবেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে ক্ষেতের বোরোধান রক্ষা করছি ।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বোড়াশী গ্রামের কৃষক সুকুমার সরকার (৬৫)বলেন, আমার জমির বেরোধানের ক্ষেতে কিছু ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি দেখা দেয় । পোকাগুলো ক্ষতি করার আগেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে বালাইনাশক প্রয়োগ করে ক্ষেতের ফসল রক্ষা করতে পেরেছি । এ জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানাই ।
পর্যবেক্ষণ টিমের সদস্য ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ লিয়াকত হেসেন বলেন, এ আবহাওয়ায় বোরোধানের ক্ষেতে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে । তাই এসব পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষায় আমরা মাঠে যাচ্ছি । কৃষকের সাথে কাজ করছি । তাদের পরামর্শ দিচ্ছি । এ পরামর্শ নিয়ে কৃষক পোকা দমন ও রোগ প্রতিরোধ করে তাদের বোরোধান রক্ষা করছেন ।
গোপালগঞ্জ সদর উপেজেলার রঘুনাথপুর ইউপির রঘুনাথপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার বলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তারের নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে আমরা মাঠে রয়েছি । মাঠ পরিদর্শন করছি । কৃষকদের পারামর্শ দিচ্ছি । কৃষকরা আমাদের পরামর্শেই কাজ করে ক্ষেতের ফসল রক্ষা করছেন ।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক অপূর্ব বিশ্বাস (৫৫) বলেন, বোরোধান আমাদের প্রধান ফসল। এ ফসল দিয়ে আমাদের সারাবছরের খাবার জোটে। বাড়তি ধান বিক্রি করি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বোরোধানে পোকার আক্রমণ ও রোগ আক্রান্ত হওয়ার আগেই মাঠে নেমেছে । তারা পোকা ও রোগের হাত থেকে এ ধান বাঁচাতে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন । তাদের এ উদ্যোগে আমরা উপকৃত হচ্ছি । ফসল রক্ষা করতে পারছি । আশা করছি শেষ পর্যন্ত ধানের বাম্পার ফলন পাব । এ জন্য আমি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ।