শিরোনাম
ঢাকা, ৫ এপ্রিল, ২০২৩ (বাসস) : ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেছেন, আগামীকাল থেকে রাজধানীর সুপার মার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেটসহ ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোতে সার্ভে শুরু করা হবে। তিনি বলেন, ‘রাজধানী সুপার মার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেটসহ বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট রয়েছে। বিএমডিসি কোড অনুযায়ী, এসব মার্কেটে প্রবেশ কিংবা বের হওয়া এবং অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা থাকার কথা, সেই ব্যবস্থা আছে কিনা, দেখা দরকার। আপাতত দৃষ্টিতে আমার কাছে মনে হচ্ছে, ওই সব মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ। সেই সব মার্কেটে মার্কেটের মালিকপক্ষকে নিয়েই এ সার্ভে করা হবে এবং পরবর্তী করণীয় বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
ডিজি বলেন, গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে আগুন নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট এখনও কাজ করছে। এনেক্সকো টাওয়ারের চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় যেহেতু গুদাম ঘর, তাই এখনো সেখানে ফায়ার ইউনিটের সদস্যরা আগুন নেভানোর কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল ও আজ সব মিলিয়ে ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ৭শ’ সদস্য আগুন নেভানোর কাজ করেছে। ডিজি আজ বুধবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সামনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
মাইন উদ্দিন বলেন, এনেক্সকো টাওয়ারের ৫ ও ৬ তলায় গোডাউন রয়েছে। সেখানে এখনো মাঝে মাঝে আগুন দেখা যাচ্ছে। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্বিতীয় দিনের মতো কাজ করছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য প্রত্যেকটা স্থাপনাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা গ্রুপে গ্রুপে ভাগ করে, এক একটা গ্রুপ এক এক জায়গায় কাজ করেছি। একসঙ্গে একশ ফায়ার ফাইটার জড়ো হলেও সেটা কাজের জন্য কিন্তু অন্তরায়। আপনারা দেখেছেন, পুলিশ হেডকোয়ার্টারে একটি তিনতলা ভবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের পাশেই এনেক্সকো টাওয়ারের বর্ধিত ভবন, সেটি কিন্তু পুড়েনি। সেটা কিন্তু আমরা রক্ষা করেছি।’
প্রতিবারই আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস থেকে পানি সংকটের বিষয়টি সামনে আসে কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের বর্তমান অবস্থা আপনারা জানেন। আমরা রাজউক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সঙ্গে আগামী সপ্তাহে বসে বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) কোড যেন মেনে চলার ব্যবস্থা করা যায়, সেটা করবো। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ডিজি বলেন, একটি পরিকল্পিত নগরায়নের জন্য ওয়াটার হাইড্রেন থাকা বিশেষ করে অগ্নিনির্বাপণের জন্য অতীব জরুরি। ঢাকা শহরে মিল-কারখানা ছাড়া কোথাও ওয়াটার হাইড্রেন নেই বললেই চলে।
বঙ্গবাজারে আগুন নেভাতে পানির স্বল্পতা পোহাতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগুন নেভাতে আমাদের পাশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদুল্লাহ হল থেকে পাম্প দিয়ে পানি আনতে হয়েছে। বিমান বাহিনীও হেলিকপ্টারে করে হাতিরঝিল থেকে পানি এনে আগুন নেভাতে সহযোগিতা করেছিল। আমরা বুড়িগঙ্গা থেকেও পানি এনেছিলাম। এই কাজে তিন বাহিনীর পাশাপাশি ওয়াসাও আমাদের সহযোগিতা করেছে।’
এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে ডিজি বলেন, ‘এই তদন্ত কমিটি আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। এরপর আমরা এই বিষয়ে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানাতে পারব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি হচ্ছে বলে শুনেছি। সেখানেও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি থাকবে।’
ডিজি বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ী তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন। আপনারা তাদের আহাজারি দেখেছেন। আমরাও এই ঘটনায় ব্যথিত। আমরা দুর্ঘটনা-দুর্যোগে সবার আগে সবার পাশে থাকি। কোনো দুর্ঘটনা কাম্য নয়।’
ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরে হামলার দুঃখ প্রকাশ করে ডিজি মো. মাইন উদ্দিন জানান, ‘আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরের প্রায় সবাই ঘটনাস্থলে ছিলেন। তখন সদরদপ্তর অনেকটাই অরক্ষিত ছিল। শুধু কয়েকজন আরপি সদস্য ছিলেন। আমরা কখনো আক্রান্ত হবো ভাবিনি। কিন্তু আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। আমাদের ১৪টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এর মধ্যে একটি গাড়ির দামই প্রায় আট কোটি টাকা।’ আগুন ও হামলায় ফায়ার সার্ভিসের ১০ জন সদস্য আহত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আহতদের মধ্যে একজন পরিচালকও ছিলেন। এখনো দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুধু ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরে নয়, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের কোণায় আমরা আক্রান্ত হয়েছিলাম। সেখানে আমাদের একজন ডিডি আহত হন। তার হাত ফ্র্যাকচার হয়েছে। এই ঘটনায় আমি খুবই মর্মাহত।’ ডিজি বলেন, ‘আমরা তো সর্বদা মানুষের পাশেই আছি। সবসময় মানুষকে সহযোগিতা করছি, মহড়া করছি, বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এবার আপনারা (জনগণ) একটু আমাদের সহযোগিতা করুন, যেন আমরা একটি নিরাপদ দেশ গড়তে পারি।’
এরআগে, আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১২টায় বঙ্গবাজার এনেক্সকো ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আগুনের প্রকৃত উৎস আমরা এখনও খুঁজে বের করতে পারিনি। মালামাল বের করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, এখনও কোথাও কোথাও আগুন জ্বলছে, ধোঁয়া হচ্ছে। পুরোপুরি নেভাতে না পারলেও আগুন সম্পর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’ মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ঘটনাস্থলে এখনও ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করছে। আমাদের পানির স্বল্পতা রয়েছে। কাছাকাছি পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ার কারণেও আগুন নেভাতে দেরি হচ্ছে। তবে আমরা আশা করি, আজকের মধ্যে আগুন পুরোপুরি নেভাতে পারবো।’ অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের ফায়ার ফাইটারা রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি জায়গায় তারা অবস্থান করছে। ভবন থেকে মালামাল বের করতে তারা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে। সব মালামাল বের করতে পারলেই আগুন সম্পর্ণরূপে নির্বাপণ হবে।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভবনগুলো অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এনেক্সকো টাওয়ারের বিভিন্ন পিলারে ফাটল ধরেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং রাজউকের অনুমতি ছাড়া ভবনগুলো পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না।
মঙ্গলবার ভোর ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণের কথা জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক। আগুন নেভাতে ২২টি ফায়ার স্টেশন থেকে মোট ৪৮টি ইউনিট সকাল থেকে রাতভর কাজ করে। এরপর সেখানে নিয়ন্ত্রণের কাজে যোগ দেন সেনাবাহিনী সাহায্যকারি দল, বিমান বাহিনীর সদস্য, র্যাব, বিজিবি, আনসার, ওয়াসা, বিদ্যুৎসহ অনেক সংস্থার সদস্য।