শিরোনাম
দিনাজপুর, ৭ এপ্রিল, ২০২৩ (বাসস) : জেলার হাকিমপুর উপজেলার পল্লীতে এক বেকার যুবক ছাগল পালনে স্বাবলম্বী হয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তাকে লক্ষ্য করে এখন অনেক বেকার যুবক এ ধরণের খামারি হতে উৎসাহ পেয়েছে।
হাকিমপুর উপজেলা সদরের দক্ষিণ বাসুদেবপুর মহল্লার মৃত আলহাজ আব্দুর জব্বারের পুত্র শিবলী নোমান (৩০) এর সাথে কথা বলে জানা যায়, তার বসতবাড়ীর পাশে গড়ে তুলেছেন ছাগলের খামার। নিতান্ত শখের বসেই গত ৩ বছর পূর্বে ৪টি ছাগল ক্রয় করে লালন পালনের পর অল্প খরচে বেশী লাভের মুখ দেখায় মনে-মনে সিদ্ধান্ত নেন ছাগলের খামার গড়ে তুলবেন। যেমনই ভাবনা, তেমনি কাজ, হাট থেকে আরো ৮টি ছাগল ক্রয় সেই ছাগল পালন শুরু করেন।
তিনি জানান, ওই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তাকে আর কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। নিজে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এরপর নিজেই ছাগলের পরিচর্যা করতে থাকেন। এখন তার খামারে দেশী ও বিদেশী প্রজাতির মোট ১০০টি ছাগল রয়েছে। যার বর্তমান আনুমানিক মূল্য ২০ লাখ টাকা। নোমান জানান, গত ৩ বছর পূর্বে শখের বসে ১৪ হাজার টাকায় ৪টি ছাগল কিনে লালন-পালন করেন। এরপর ১ বছরের মধ্যে ছাগল ৪’টি ছয়মাস পরপর ৪টি করে মোট ১৬ টি বাচ্চা দেয়।
পরে ওই ছাগলগুলো বিক্রি করে ৮০ হাজার টাকা আয় হয়। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন ছাগলের খামার করে অনেক আয় করবেন। এরপর উপজেলা প্রাণী সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শক্রমে একটি করে যমুনাপাড়ি, তোজাপাড়ি, হরিয়ান ও ব্লাক বেঙ্গল প্রজাতির ছাগল ক্রয় করে মাচং পদ্ধতিতে খামার গড়ে তোলেন। এখন তার খামারে চার প্রজাতির মোট ১০০ টি ছাগল রয়েছে। বাড়ির পাশের পতিত জায়গায় আবাদ করেছেন হাইড্রোপ্রোনিক (মাটি ছাড়া ট্রেতে আবাদ করা ঘাস) ঘাস। এই ঘাস ছাগলের জন্য উৎকৃষ্টমানের খাবার।
তিনি আরো জানান, এই গৃহপালিত প্রাণীটির বছরে ২ বার প্রজনন ক্ষমতা রয়েছে। প্রতিবার প্রজননে একাধিক বাচ্চা দেয়। রোগ বালাইও কম। বছরে একবার পিপিআর, গডপক্স ভ্যাকসিন দিলেই কোন প্রকার ওষুধ লাগেনা। তাই অল্প খরচে বেশি আয় করা সম্ভব। সেখানে একটি বিদেশী গাভী পালন করলে প্রতিদিন ৪শ’ টাকার খাবার খায়। সেখানে ৪’শ টাকা হলে প্রতিদিন ৪০ টি ছাগলকে খাওয়ানো যায়। ছাগলের খাদ্য হিসেবে খাওয়ানো হয় গম, ভুট্টা ও ছোলা বুটের গুড়ো সেই সাথে সয়াবিন ও খড়ের ছানি। যা ছাগলের জন্য খুবই পুষ্টিকর।
তিনি জানান, দেশের বাজারে ছাগলের চাহিদার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই ছাগল রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা উপার্জন করা সম্ভব।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস ছামাদ জানান, আমরা নিয়মিত ওই ছাগলের খামারে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পরামর্শ দিয়ে দিচ্ছি। ছাগলের খামার করে নোমানের সফলতা দেখে এখন অনেকেই খামার গড়ে তোলার পরামর্শের জন্য আমাদের কাছে আসছেন। আমরা বেকারত্ব দূর করতে নতুন করে তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে যুবক-যুবতী উভয়কে এসব ছাগল পালনসহ বিভিন্ন ধরনের খামারী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই সীমন্তবর্তী এ উপজেলা একাধিক খামারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে।
হাকিমপুর উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন রশিদ জানান, তার এলাকায় বেকার যুবক শিবলী ছাগলের খামার করে দৃষ্টান্ত করেছে। তার খামারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প কার্যালয় হতে ছাগল পালনে স্বল্প সুদে ৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের উপজেলা কর্মকর্তা জেসমীন আরা তার খামার পরিদর্শন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আগামী ১ বছরে মধ্যে এই উপজেলায় এ ধরনের আরো খামার সৃষ্টি হয় সে বিষয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।