শিরোনাম
॥ মো. মোস্তফা কামাল ॥
কেরানীগঞ্জ, ৮ এপ্রিল, ২০২৩ (বাসস) : ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লীর পোশাক কারখানাগুলোতে চলছে ঈদের পোশাক তৈরির ধুম। সব বয়সের মানুষের জন্য নানা ধরনের ঈদের পোশাকতৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কারিগররা। বাচ্চাদের জন্য বাহারি রঙের পোশাক, ছেলেদের জন্য জিন্স প্যান্ট,সাট ও পাঞ্জাবি, মেয়েদের জন্য হাল ফ্যাশনের পোশাক সবই তৈরি হচ্ছে এখানে। যা ইতিমধ্যে শোভা পাচ্ছে পাইকারি শোরুমে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলার পাইকাররাও এখানে ভিড় করছেন ঈদের পোশাক কিনতে।
এবার ঈদে করোনার প্রভাব না থাকায় ব্যবসা ভালো হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ এবার করোনার প্রভাব না থাকায় শহর ও গ্রামের সাধারন জনগন রাত দিন কর্ম ব্যস্ত থাকছে। আর কর্মব্যস্ততার কারণে বেশিরভাগ সময় ঘরের বাইরেই থাকতে হয় সাধারণ মানুষের। তাই এবার ঈদের কাপড়ের কদর বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে বিক্রিও ভালো হবে বলে আশা করছে ব্যবসায়ীরা।
কেরানীগঞ্জের পোশাক কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেকটি কারখানায় ঈদের পোশাক তৈরির ধুম লেগেছে। নাওয়া খাওয়া ভুলে কারিগররা তৈরি করছেন বাহারি ডিজাইনের ঈদ পোশাক। এমন একটি পোশাক কারখানা শাফিন প্যান্ট হাউস। সেখানে কারিগর তৈরি করছেন বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক। কেউ সাইজ করে কাটছেন কাপড়। কেউ আবার সেই কাপড় সেলাই করে তৈরি করছেন জিন্স প্যান্ট । অন্য স্থানে করা হচ্ছে ডিজাইনভিত্তিক অ্যাম্ব্রয়ডারির কাজ। সব শেষে লাগানো হচ্ছে মাপ মতো বোতাম ও চেইন। কারখানার সেলাই মেশিনের শব্দ বলে দিচ্ছে কারিগরদের ব্যস্ততা। জানা গেছে, কেরানীগঞ্জের পোশাক কারখানার মালিকরা দেশি-বিদেশি কাপড় কিনে নিজেদের কারখানায় ঈদ পোশাক তৈরি করে থাকেন। আবার চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পোশাক এনেও বিক্রি করেন।
নোভা গার্মেন্টস এর সত্বাধিকারী মোঃ আবুল কাশেম বাবলু বলেন, আমরা কারখানায় বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি কাপড় দিয়ে ঈদ পোশাক তৈরি করছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তৈরী পোশাকের মার্কেট এটি। চলতি ঈদ মৌসুমকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই পাইকার আসা শুরু হয়েছে এবং এবছর ব্যবসা ভালো হওয়ার সম্ভাবনার কথাও তিনি জানান। বিগত বছরগুলোতে বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে তাদেরকে অনেক সমস্যায় পড়তে হত। কিন্তু কেরাণীগঞ্জে এখন আর কোন বিদ্যুৎ সমস্যা নাই। যে কারণে তাদের উৎপাদন এবছর আগের তুলনায় অনেকটাই বেশী।
এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুসলিম ঢালী বাসসকে বলেন, এখানে কোন শ্রমিক অসন্তোষ নেই। নেই কোন চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী। নৌ-পথ ও সড়ক পথে দেশের যে কোন অঞ্চলে সহজে যোগাযোগ এবং যানজটমুক্ত এলাকা হওয়ায় দেশের যে কোন এলাকার পাইকাররাই মন খুল্ েপছন্দ মাফিক কেনাকাটার জন্য এখানে আসেন। এবারের ঈদে ছেলেদের জিন্স প্যান্ট, সাট ও পাঞ্জাবীর পাশাপাশি মেয়েদের জন্যও রয়েছে বাহরী ডিজাইনের সব ধরনের পোশাক। যে কোন রুচিশীল তৈরী পোশাক এখানে অত্যন্ত সহজ মূল্যে পাওয়ার কারণে পাইকারদের তেমন বেশী ঘোরাঘুরি করতে হয়না। তা ছাড়া রাজধানীর যে কোন পাইকারী বাজারের তুলনায় আমাদের এখানে কেনাকাটা করে পাইকার কোনরকম যানজট ছাড়াই নিরাপদে তাদের গন্তব্যে পৌছতে পারে। যে কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাইকারদের কাছে দিন দিন আমাদের কদর বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি হাজী মো.স্বাধীন শেখ বাসসকে বলেন, কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা এখন রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত। ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বাধীন মতো ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারছে। কেরানীগঞ্জের পোশাক পল্লীতে বিক্রয় কেন্দ্র ও কারখানার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজারের বেশি। এখানকার বিক্রয় কেন্দ্র ও কারখানায় দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া দেশের ঈদের পোশাকের প্রায় ৭০ শতাংশ কেরানীগঞ্জ থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হবে না। এবার করোনার প্রভাব না থাকায় ঢকার বাহিরে থেকে ঈদের কাপড়ের প্রচুর অর্ডার আসছে। আশা করা যাচ্ছে এবার ঈদে ব্যবসা ভালো হব।