বাসস
  ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫০

টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় কচুরিপানার ভাসমান বেডে সবজির সমরোহ

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ১০ এপ্রিল,২০২৩ (বাসস) : কচুরিপানার ভাসমান বেডে সাধারণত গ্রীস্ম,বর্ষা বা শীতকালে শাক,সবজি ফলে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে এ বছর  গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার জলাভূমি জমিতে
বসন্তকালেই কচুরিপানার ভাসমান বোডে শাক-সবজি ফলেছে। ভাসমান বেডে এখন লাউ, মিষ্টি কুমড়া,কচু, কচুর লতি, লালশাক, ডাটাশাক,গিমা কলমি, শশা, করলা  উচ্ছে ও বাঙ্গি শোভা পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৭ জানুয়ারি  গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া সফরে এসে পাটগাতী ইউনিয়নের পূবের বিল পরিদর্শন করেন। এ জমিগুলো বছরের ৮ থেকে ৯ মাস জলাবদ্ধ থাকে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলাভূমির অন্তর্গত এ অঞ্চলের জমিগুলোতে কচুরিপানার ভাসমান বেডে শাক, সবজি ও অন্যান্য ফসল চাষের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার তত্ত্ববধানে তাঁর নিজ নির্বাচনী এলাকার টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া উপজেলার অনাবাদি ও  জলাভূমিতে নিমজ্জিত জমিতে ভাসমান বেডে চাষাবাদ শুরু করা হয়। তিন মাসের মধ্যে এসব পতিত জমি ভরে উঠেছে শাক,সবজি ও ফলে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জামাল উদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের পূবের বিলের সীমানার খালের ১ কিলোমিটার জুড়ে কচুরিপানার ভাসমান বেডে শাক ও সবজির আবাদ করা হয়েছে। এখানে এখন শাক,সবজির সমরোহ। এখান থেকে অন্তত ৭ লাখ টাকার সবজি উৎপাদিত হবে।  
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা দেবাশীষ দাস জানান, কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি-ধারবাসাইল খালের ৩ কিলোমিটার জুড়ে কচুরিপানার ভাসমান বেডে এ আবাদ করা হয়। এছাড়া কোটালীপাড়ার দেবগ্রাম ও কুঞ্জবন আশ্রয়ণ প্রকল্প সংলগ্ন  খালে ৬০ মিটার লম্বা  ৫০টি বেডে শাক সবজি ফলেছে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাসমান বেডে মসলা চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করণ প্রকল্পের আওতায় এগুলো করা হয়েছে। এখানে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার শাক, সবজি ও ফল উৎপাদিত হবে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা এটি করে দিলেও  কৃষক ও আশ্রয়ণের বাসিন্দারা এর সুফল পাচ্ছেন। তারা এখানে উৎপাদিত শাক-সবজি দিয়ে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছেন। বাড়তি শাক-সবজি তারা বাজারে বিক্রি করে অর্থ আয় করতে পারছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন,  বর্ষাকালে  টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া উপজেলার অধিকাংশ জমি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। তাই কৃষকরা কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে শাক- সবজি, ফল ও মসলার আবাদ করে আসছেন। সম্প্রতিকালে শীতের সবজিও ভাসমান বেডে উৎপাদিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মোঃ শহিদ উল্লা খন্দকারের দিক নির্দেশনা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদের সহযোগিতায় আমরা  আনাবাদি জমি চাষবাদের আওতায় আনতে কান্দি-ধারবাসাইল খাল পরিস্কার ও খনন করি। এ কারণে  কান্দি বিলের জলাবদ্ধ ও আনাবাদি ৪৪০ হেক্টর জমি ধান চাষাবাদের আওতায় এসেছে। খালের ওই কচুরিপানা দিয়ে খালের ৩ কিলোমিটার  জুড়ে  ভাসমান বেড তৈরি করি। আমাদের সহযোগিতায় কৃষকরা এখানে গত ২১ জানুয়ারী শাক, সবজি ও ফলের আবাদ করে। তাই বসন্তের এ অসময়ে এখানে প্রচুর শাক, সবজি ও ফল ফলেছে।  এছাড়া দেবগ্রাম ও কুঞ্জবন আশ্রয়ণ কেন্দ্র সংলগ্ন খালে আমরা ৫০টি বেড করে দিয়েছি। এখান থেকে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বসিন্দারা শাক, সবজি ও ফল খেতে পারছেন।  
কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের মাচারতারা গ্রামের প্রিয়তাজ বেগম ও পুস্প রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তাঁর জন্য আমরা গর্বিত। আমরা তাঁকে প্রাণের চেয়েও অধিক ভালবাসি। তিনি আনাবাদি জমি চাষাবাদের  আওতায় আনার আহবান জানান। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণের সহযোগিতায় ভাসমান বেডে সবজি করেছি। এ শাক সবজি দিয়ে সংসারের চাহিদা মিটাচ্ছি। বাড়তি সবজি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। জলাবদ্ধ ও আনবাদি জমিতে ধান চাষ করেছি। এখন আমাদের আবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।
তালপুকুরিয়া গ্রামের অমিতাভ মন্ডল ও মিলন মধু বলেন, অসময়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় ভাসমান বেডে চাষাবাদ করে আমরা শাক-সবজির এবং ফলের ভাল ফলন পেয়েছি। চৈত্র মাসে আমাদের তেমন কোন আয় থাকে না। তাই এখান থেকে আমাদের বেশ আয় হচ্ছে। আমাদের এ চাষাবাদ শিখিয়ে দেওয়ার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানাই।
দেবগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আল আমিন হোসন ও জুয়েল কাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর ও জায়গা দিয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ভাসমান বেড করে দিয়েছে। এখান থেকে শাক, সবজি ও ফল পাচ্ছি। অসময়ে এমন সরবরাহ পাব তা কল্পনাও করিনি। এগুলো খেয়ে আমরা ভালো আছি। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানাই।