বাসস
  ১১ এপ্রিল ২০২৩, ১১:২৫
আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ১২:১১

দু’দিন পরেই বাংলা নববর্ষ : বরগুনায় পহেলা বৈশাখকে ঘিরে নানা পরিকল্পনা

বরগুনা, ১১ এপ্রিল, ২০২৩ (বাসস) : আর দু’দিন পরেই আগামী ১৪ এপ্রিল বাংলা সালের প্রথম দিন; -বাংলা নববর্ষ। বাঙ্গালি ব্যবসায়ীদের কাছে বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখে বকেয়া আদায় করে ‘নতুন খাতা’ খোলার রীতি শত বছরের। বরগুনার ব্যবসায়ীরা এখনো বাংলা বছরের হিসেব-নিকেশ করেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে  রয়েছে নানা পরিকল্পনা ও আচার-প্রথা । বছরের প্রথম দিনটি সবচেয়ে গুরুত্ব পায় ব্যবসায়ীদের কাছে। তাই পুরনো বছরের শেষ মাস অর্থাৎ চৈত্র মাস থেকে শুরু হয়েছে বকেয়া আদায়। 
পহেলা বৈশাখের বকেয়া আদায় উৎসব ক্রেতা-বিক্রেতার সুহৃদ বন্ধন অটুট রাখে। উপকূলীয় বরগুনা জেলার ব্যবসায়ীদের মধ্যে চৈত্র মাসের শুরু থেকেই নববর্ষ বরণ ও আচার ও প্রথা পালনের প্রস্তুতি শুরু হয়। শেষ মুহূর্তের ঝার-মোছ শেষ করে ফেলেছে। লালসালুর মলাট দেয়া নতুন খাতা শোভা পাচ্ছে ব্যবসায়ীদের গদি বা ক্যাশ টেবিলে। ইতোমধ্যে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে গেছে হালখাতার নিমন্ত্রণপত্র। ক্রেতারাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন বকেয়ার খাতা থেকে নাম কাটার।
চৈত্রের শুরু থেকেই জমজমাট বৈশাখী বাজার। ক্রেতাদের ভিড়ে দম ফেলার ফুসরত নেই বিক্রেতাদের। বাজারের বিপণী বিতানগুলো নতুন করে ফিরে পেয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বাংলার আবহে তৈরি ফতুয়া, পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, শাড়ি ও লুঙ্গিসহ বিভিন্ন পোশাক ও সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। অনেক দোকানি দোকানের সামনে কিংবা ফুটপাতে বসিয়েছেন বিশেষ মূল্য ছাড়ে ‘চৈত্র সেল’। 
বরগুনার বিশিষ্ট পুস্তক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কথামালা লাইব্রেরির প্রধান এনামুল হায়দার বাবুল বলেন, নিজের প্রতিষ্ঠানে হাল খাতা খুলেছি। পাশাপাশি এ পযন্ত নানা ব্যবসায়ীর কাছে কয়েক লাখ টাকার লালসালুর মলাট দেয়া ‘হালখাতা’ এবং হালখাতা অনুষ্ঠানের ছাপানো ‘কার্ড’ ও ‘চিঠি’ বিক্রি করেছি।
হালখাতা অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করে রাখতে নতুন করে সাজানো হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। জ্বলে আলোক সজ্জা। আমন্ত্রিতদের বসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়। মিষ্টিমুখ করার জন্য থাকে ব্যাপক আয়োজন। সাউন্ড বক্সে বাজতে শুরু করেছে গান।
বরগুনা শহরের মুদি ব্যবসায়ী শ্যামল দাস জানান অনেক ক্রেতা রয়েছে যারা সারাবছর বাকিতে মালামাল কেনেন। বছর শেষে হালখাতা অনুষ্ঠানে তারা পুরাতন সকল বকেয়া শোধ করেন। এরা কিন্তু আমাদের আত্মীয়ের মতো। বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন  এলে যেমন আপ্যায়ন করি, এদেরও তেমনি আপ্যায়ন করতে হয়।
হালখাতা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাওয়া বেতাগী শহরের সাইদুল ইসলাম মন্টু জানান, পুরাতন খাতার নাম কেটে 
হালখাতায় নাম তোলার মধ্যে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি রয়েছে।
আমতলী শহরের এসএ ড্রাগ হাউজের মালিক শাহজাহান কবির বলেন, শুধু বকেয়া পাওনার জন্যই নয়। বছরের প্রথম দিনে বন্ধু-বান্ধবদেরও নিমন্ত্রণ থাকে। ঈদ বা পূজার মতো নববর্ষও আমাদের কাছে আনন্দমুখর একটা দিন।
আমতলী বকুল নেছা ডিগ্রি কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান, সহকারী অধ্যাপক ফেরদৌসি আকতার জানু জানান, বাঙ্গালি হিসেবে পহেলা বৈশাখ আমাদের কাছে সার্বজনীন উৎসব। সকল শ্রেণী পেশার মানুষই এ দিনটি বিভিন্নভাবে আগ্রহে পালন করে। বছরের এদিনটি সকলেই ভালোভাবে কাটাতে চান। মফস্বল এলাকায় মানুষের প্রাণের আন্তরিকতা নিয়ে পহেলা বৈশাখ কেটে যায়।