বাসস
  ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:৫০

হবিগঞ্জে লন্ডন প্রবাসীর মা ও স্ত্রী হত্যা মামলায় দুই যুবকের যাবজ্জীবন

হবিগঞ্জ, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩ (বাসস) : জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার সাদুল্লাপুর গ্রামে লন্ডন প্রবাসীর মা মালা বেগম ও স্ত্রী রুমি বেগমকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় তালেব মিয়া ও জাকারিয়া আহমেদ শুভ নামে দুই হত্যাকারীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৫ বছরের শ্বশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছে আদালত।
সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আদালতের বিচারক মো. আজিজুল হক।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৩ মে রাতে জাকারিয়া আহমেদ শুভ ও তালেব মিয়ানবীগঞ্জ উপজেলার সাদুল্রাপুর গ্রামে লন্ডন প্রবাসী আখলাক চৌধুরীর বাড়ীতে যায় তার স্ত্রী রুমী বেগমকে ধর্ষণ করার পরিকল্পনা নিয়ে। ওই বাড়িতে গিয়ে প্রথমে তালেব মিয়া প্রবাসীর মা মালা বেগমকে দাদী সম্বোদন করে ডাক দেয় এবং গেইট খুলতে বলে। গেইট খুলার পর তালেব মিয়ার
সাথে শুভও ভেতরে চলে যায়। তখন মালা বেগম ওই ছেলের পরিচয় জানতে চাইলে শুভ মালাকে হাতে থাকা ছোরা দিয়ে আঘাত করে। মালা বেগম দৌঁড়ে ঘরে গেলে পিছনে গিয়ে তারা দুইজন তাকে ওড়ানা দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং ছোরা দিয়ে আঘাত করতে থাকে। তার চিৎকার শুনে পাশে থাকা গৃহবধূ রুমী বেগমও চিৎকার শুরু করেন। এ সময় শুভ রুমী বেগমকেও ছোরা দিয়ে আঘাত করে। রুমী বেগম দৌঁড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসলে তালেব মিয়াও তাকে আঘাত করে। ঘটনার সময় ওই বাড়ির পাশে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের বাড়িতে মিটিং ছিল। সেখান থেকে লোকজন চিৎকার শুনে এসে মৃতদেহ দুটি দেখতে পান। পুলিশ এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করতে গিয়ে তালেব মিয়া ও জাকারিয়া আহমেদ শুভকে গ্রেফতার করলে তারা হবিগঞ্জের তখনকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পা বেগমের আদালতে ১৬৪ ধরায় জবানবন্দি প্রদান করে।
পরে রুমি বেগমের ভাই নজরুল ইসলাম নবীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন নবীগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত হাবিবুর রহমান। পরে হবিগঞ্জ ডিবির ওসি শাহ আলম ২০১৮ সালের ১১ আগস্ট অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বিজ্ঞ আদালত ৩২ জনের মাঝে ৩১ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে সোমবার এই রায় প্রদান করেন।
রায় প্রদানকালে বিজ্ঞ বিচারক এই ঘটনাকে অমানবিক হিসাবে উল্লেখ করেন এবং মামলার আসামীদের অপরাধ মৃত্যুদন্ড যোগ্য উল্লেখ করেন। তবে বয়স কম থাকায় যাবজ্জীবন আদেশ প্রদান করেন। রায় ঘোষণাকালে আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিল।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও সহকারী পিপি এডভোকেট পারভীন আক্তার।
সহকারী পিপি এডভোকেট পারভীন আক্তার বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এই আদেশে খুশি। এতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্টিত হয়েছে। অপরাধীরা অপরাধ করতে ভয় পাবে।
তিনি আরও বলেন, আসামীরা এই মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য নিজেদেরকে শিশু দাবী করেছিল। পরে রাষ্ট্রপক্ষ তাদেরকে যুবক হিসেবে আদালতে তথ্য উপাত্ত প্রদান করলে দায়রা আদালতে মামলাটির বিচার হয়।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামী তালেব হোসেন নবীগঞ্জ উপজেলার আমতৈল গ্রামের আমীর হোসেন এর ছেলে এবং জাকারিয়া আহমেদ শুভ বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে।