বাসস
  ২৪ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৩৮

গোপালগঞ্জে জনপ্রিয় হচ্ছে ব্রি হাইব্রিড ধান

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২৪ এপ্রিল, ২০২৩ (বাসস) : গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত ব্রি হাইব্রিড ধান জনপ্রিয় হচ্ছে। এ ধান সর্বোচ্চ ফলন দেয়। ধানে রোগ বালাই নেই। তাই এ ধান চাষাবাদ করে কৃষক লাভবান হয়। এ কারণে প্রতি বছর গোপালগঞ্জে ব্রি হাইব্রিড ধান  জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আঃ কাদের সরদার জানিয়েছেন, চলতি বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৫৩ হেক্টর জমিতে ব্রি হাইব্রিড ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ব্রি হাইব্রিড ধান-৩ এ জেলার ৪৮৩ হেক্টরে ও ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ কৃষক ৫৭০ হেক্টরে চাষাবাদ করেছেন।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ব্রি হাইব্রিড ধান-৩  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৭ হেক্টরে, মুকসুদপুরে ১১০ হেক্টরে ও কোটালীপাড়া উপজেলায় ৩৪৬ হেক্টরে চাষাবাদ হয়েছে।  ব্রি হাইব্রিড ধান-৫  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩৫ হেক্টরে, মুকসুদপুরে ১১০ হেক্টরে, কাশিয়ানীতে ১১৫ হেক্টরে ও কোটালীপাড়া উপজেলায় ৩১০ হেক্টরে আবাদ হয়েছে। এ ধান সর্বোচ্চ ফলন দেয়। ধানে রোগ বালাই নেই। তাই এ ধান চাষাবাদ করে কৃষক লাভবান হয়। এ কারণে প্রতি বছর গোপালগঞ্জে ব্রি হাইব্রিড ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান ওই কৃষি কর্মকর্তা। বীজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারলে এ ধান আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন ওই কৃষি কর্মকর্তা।
কোটালীপাড়া উপজেলার হরিণাহাটি গ্রামের কৃষক ঠান্ডা শেখ বলেন, ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে বীজ,সার, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ  পেয়ে আমার ১ একর ১৫ শতাংশ জমিতে ব্রি হাইব্রিড ধান-৩ ও ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ জাতের  আবাদ করি। এ ধানে সার কম লেগেছে এবং রোগ ও পোকার আক্রমণ হয়নি। তাই কম খরচে বেশি বেশি ধান উৎপাদন করে আমি লাভবান হয়েছি। আমার ক্ষেতে ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ হেক্টর প্রতি ১০.৮৬ মেট্রিক টন ফলন দিয়েছে। এছাড়া ব্রি হাইব্রিড ধান-৩ হেক্টরে সাড়ে ৯ মেট্রিক টন ফলেছে । এ ফলন দেখে  প্রতিবেশি কৃষকরা আগামী বছর এ ধান চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমি গত ৪ বছর ধরে এ ধানের চাষাবাদ করে লাভবান হয়ে আসছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন, ধান গবেষণার এ দুই জাতের হাইব্রিড ধান গত ৪ বছর ধরে কোটালীপাড়ায়  সর্বোচ্চ ফলন দিয়ে আসছে। তাই এ জাত জনপ্রিয় হচ্ছে। এ জাত ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে ধান উৎপাদনে বিপ্লব ঘটবে। এ ক্ষেত্রে আগামীতে এ ধানের বীজ সহজলভ্য করতে হবে।
ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৃজন দাস  বলেন, এ জাতের ধান চিকন। বাজারে এ ধান একটু বেশি দামে বিক্রি হয়। ধানের ফলন প্রচলিত জাতের তুলনায় বেশ ভালো । তাই এ ধান গোপালগঞ্জে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএডিসি এ ধানের বীজ উৎপাদন শুরু করলে কৃষকের বীজের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।
ব্রি, আঞ্চলিক কার্যালয়, গোপালগঞ্জ এর প্রধান ও উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালে আমরা  গোপালগঞ্জে মাত্র ১৫ একর জমিতে  ব্রি হাইব্রিড ধানের দুইটি জাতের ৫০টি প্রদর্শনী প্লট করি। ওই বছর ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ প্রতি হেক্টরে ১০.৮৬ মেট্রিক টন (১৪%আদ্রতায়) ও ব্রি হাইব্রিড ধান-৩ হেক্টর প্রতি ৯.৬৭ মেট্রিক টন (১৪%আদ্রতায়) ফলন দেয়। প্রচলিত হাইব্রিড ধান হেক্টরে ৭ থেকে ৮ টন ফলন দেয়। সেখানে আমাদের উদ্ভাবিত হাইব্রিড রেকর্ড ফলন দিয়ে আসছে। এ জন্য বিগত ৪ বছরে গোপালগঞ্জে ব্রি হাইব্রিড ধানের আবাদ ১৫ একর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৫৩ হেক্টরে সম্প্রসারিত হয়েছে। এ বছর গোপালগঞ্জে আমরা বিনা মূল্যে ১০ মেট্রিক টন দুই জাতের ব্রি  হাইব্রিড ধান বীজ বিতরণ করেছি। সেই সাথে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় সার, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়েছি। এ কারণে এ বছরও কৃষক ব্রি হাইব্রিড ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছেন। এছাড়া বিদেশী হাইব্রিড ধান বীজ বাজারে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা  কেজি দরে বিক্রি হয়। ব্রি হাইব্রিড ধানের বাণিজ্যিক বীজ উৎপাদনের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাহলে ব্রি হাইব্রিড ধান বীজ প্রতি কেজি কৃষক ৬০ থেকে ৭০ টাকায় কিনতে পারবেন। এতে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়। ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য নিরাপত্তা ও এসডিজি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।