বাসস
  ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ১০:১৬
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ২১:২১

পদ্মার ভাঙন কবলিত নড়িয়ার জয়বাংলা এভিনিউ এখন ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত

॥ এস এম মজিবুর রহমান ॥
শরীয়তপুর, ২৬ এপ্রিল, ২০২৩ (বাসস) : ২০১৮ সালে শরীয়তপুরে পদ্মার আগ্রাসী ভাঙনে নড়িয়া উপজেলার সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি পরিবারের সর্বস্ব খোয়ানোর যে চিত্র বিশ^বাসী দেখেছিল তা যেন এখন কেবলই ভুলে যাওয়া অতীত। নড়িয়া-জাজিরার পদ্মার ডানতীর রক্ষা বাধের ১০.২ কিলোমিটার ব্যাপী দেশের সবচাইতে বড় নদী ভিত্তিক পর্যটন এলাকা নড়িয়ার ‘জয়বাংলা এভিনিউ’ এখন ভ্রমণ পিপাসুদের অবসর বিনোদনের অন্যতম ভালোলাগার ঠিকানা। শুধু ঈদ কেন্দ্রিক নয়, সরকারি ছুটিসহ অবসরে বিনোদনপ্রেমীরা বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত জয়বাংলা এভিনিউতে পরিবার নিয়ে আনন্দমুখর সময় কাটান। তবে ভ্রমণ পিপাসুদের ঈদ উৎসবকে বর্ণিল করতে এখানে পর্যটকদের ভিড় বেড়ে যায় বহুগুণ। জয় বাংলা এভিনিউ ছাড়াও বর্ষার পরে পুরো বাধ এলাকা জুড়ে কাশ ফুলের মন ভোলানো দৃশ্য আকর্ষণ সব বয়সের পর্যটকদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র হাত ধরে গড়ে ওঠা দেশের বৃহৎ এ নদী ভিত্তিক পর্যটন এলাকায় এখন ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে পর্যটন ভিত্তিক বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাধের ১০.২ কিলোমিটার নান্দনিক ওয়াক ওয়াকওয়েকে ঘিরে ‘জয়বাংলা এভিনিউতে’ ঈদ অসর উদযাপনে হাজারো পর্যটক ও দর্শনার্থীরা ওয়াকওয়েতে  হেঁটে, বসে এবং বাধের ব্লকের ওপর বসে পদ্মার পানিতে পা ভিজিয়ে ও স্পর্শ করে যার পর নাই আনন্দ উপভোগ কছেন। পদ্মা পাড়ের সৌন্দর্যকে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখতে যে যার মতো ছবি তুলছেন। আর শিশুদের ছোটাছুটি ও কোলাহল জয়বাংলা এভিনিউকে করে তুলছে আরো অপরুপা। পর্যটকদের সব বাহারি খাবার যোগান দিতে ইতিমধ্যে এখানে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য খাবারের দোকান। আতংকিত জনপদ এখন দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলছে কর্ম সংস্থানের উজ্জল সম্ভাবনার দিকে।
ঈদ উপলক্ষে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা মোক্তারেরচর ইউনিয়নের সাগর সারয়ার বলেন, পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাধ, জয়বাংলা এভিনিউ ও ওয়াকওয়ে সম্পর্কে অনুভুতি প্রকাশ করার ভাষা আমার নেই। ২০১৮ সালে পদ্মার আগ্রাসী রুপের যে দৃশ্য দেখে দর্শনার্থীরাও কেদেছে, এখন ওই দৃশ্যকে মনে করাটাও দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। এখন পর্যটকদের আনন্দমুখর পদচারণা দেখলে কে বলবে এটিই ছিল সেই দুঃস্বপ্নের প্রতিচ্ছবি? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এনামুল হক শামীমের পরিশ্রমের সোনালী ফসল পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাধ এখন আর স্বপ্ন নয়। চোখ জুড়ানো ওয়াকওয়ে ও জয়বাংলা এভিনিউ এখন শরীয়তপুরের ভাঙন কবলিতদের কাছে যুগ থেকে যুগান্তরের ইতিহাস হয়ে থাকবে। 
জয়বাংলা এভিনিউ সংলগ্ন খান মিনি চাইনজি রেষ্টুরেন্টের স্বত্তাধিকারী নড়িয়ার আমেরিকা প্রবাসী সালমা খান বলেন, ২০২১ সালে করোনার মধ্যে প্রবাস থেকে দেশে এসে এখানকার সম্ভাবনা দেখে রেষ্টুরেন্টটি শুরু করি। প্রথম দিকে খুব একটা লাভবান না হলেও ধীরে ধীরে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এখন আমি আমেরিকা থেকেও ভালো আছি। আমার এখানে এখন ১৬ জন লোক কাজ করছে। যেভাবে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে তাতে আগামীতে রেষ্টুরেন্টের পরিধি ও লোক সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। 
নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিহীর চক্রবর্তী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা, দিক নির্দেশনা ও  পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীমের প্রচেষ্টায় শুধু প্রমত্তা পদ্মার ভাঙন স্থায়ী রোধ হয়নি, দেশের সবচাইতে বড় নদী ভিত্তিক পর্যটন এলকা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। মাত্র ৪ বছরের ব্যবধানে ভয়াল পদ্মা পাড় এখন এ অঞ্চলের মানুষের উপার্জনের দ্বারও উন্মোচন করে দিয়েছে। এখানে এখন আর ভাঙন কবলিতদের আর্তনাদের চিত্র দেখা যায় না, এখানে এখন পর্যটকদের আনন্দ ধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। 
পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন ,ধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পদ্মার ভাঙন রোধে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও কঠোর নির্দেশনার ফলই ভয়াল পদ্মা পাড় এখন আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।  ১০.২ কিলোমিটার পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাধ প্রকল্পের কাজ সময়ের আগেই আগামী মে মাসের মধ্যে শেষ হবে। এছাড়াও পদ্মা সেতুর জিরো পয়েন্ট থেকে চাঁদপুরের মেঘনার মোহনা পর্যন্ত বাকি ২১.৯৮ কিলোমিটার ভাঙন প্রবন এলাকার মধ্যে আগামী মাসেই সখিপুরের উত্তরতারাবুনিয়া এলাকার ৫.৮ কিলোমিটার স্থায়ী রক্ষা বাধের কাজ শুরু করব। বাকি জাাজিরা অঞ্চলের ১৬ কিলোমিটার এলাকার স্থায়ী রক্ষা বাধ প্রকল্পও সরকারের এ আমলেই শুরু করা হবে। এ কাজ শেষ হলে পদ্মা পাড়ের ৩২ কিলোমিটার জুড়ে বিশে^র দীর্ঘতম নদী ভিত্তিক পর্যটন এলাকায় পরিণত হবে। যা বাংলাদশের পর্যটন শিল্পকে অনেকদূর এগিয়ে নেবে।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শুধু শরীয়তপুরের নদী ভাঙ্গনই নয় সারা দেশের নদী ভাঙনের স্থায়ী প্রতিকারের জন্য কাজ করে চলেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে সারা দেশে নদী ভাঙনের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর। চৌদ্দ বছর একটানা আমরা নদী ভাঙন রোধে কাজ করার ফলে সারা দেশে এখন নদী ভাঙ্গনের পরিমাণ সাড়ে ৩ হাজার হেক্টরে নেমে এসেছে। যা বাংলাদেশের যে কোন সরকারের আমলের তুলনায় অবিস্মরণীয় ঘটনা। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে ডেল্টা প্লান ২১০০ বাস্তবায়নের কাজে হাত দিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ ডেল্টা প্ল্যান বাস্তয়ন শেষে বাংলাদেশ থেকে নদী পাড়ের মানুষের ভাঙ্গনে সহায় সম্বল হারানোর ইতিহাস মুছে যাবে।