বাসস
  ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১৭:২৮

সুনামগঞ্জে ৮৫ ভাগ বোরো ধান কাটা সম্পন্ন

সুনামগঞ্জ, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ (বাসস) সুনামগঞ্জের হাওরের ৮৫ ভাগ বোরো ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। 
কৃষিবিভাগ সূত্রে জানাগেছে,জেলার ১২টি উপজেলায় ১৫৪টি হাওরেই চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত ৭ এপ্রিল ধান কাটা শুরু হয়ে আজ ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় কাটা-মাড়াই শেষের দিকে। আগামী ৭ মে শতভাগ ধান কাটা ও মাড়াই শেষ হবে।এ জেলার ৩ লাখ ৫০ হাজার কৃষকের  গোলায় ৩ হাজার ৮শ’  কোটি টাকার ধান উঠতে যাচ্ছে। 
চলতি মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনে গতবছরের বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে সুনামগঞ্জে এবার ঘুরে দাঁড়ানোর কথা ভাবছেন কৃষকেরা। সরকারিভাবে প্রতি মন ধান ১২ শত ৩০ টাকা দরে  কেনা শুরু হয়েছে  জেনে কৃষকরা অনেক খুশি।
অপর দিকে  জেলার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতি মন ধান ৮ শত ৫০ টাকা  থেকে ৯ শত পঞ্চাশ টাকা দরে স্থানীয়ভাবে বিক্রি হচ্ছে।সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাযায়, এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হাজার  হেক্টর জমিতে  বোরো ধান আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৫৩ হাজার  মেট্রিক টন। যা চালের পরিমাণে দাঁড়ায় ৯ লাখ ২ হাজার  মেট্রিক টন। আর টাকার অংকে প্রায় ৩ হাজার ৮শ’  কোটি টাকা। 
জামালগঞ্জ উপজেলার  বেহেলী ইউনিয়নের মশালঘাট গ্রামের বাসিন্দা মাসুক মিয়া বলেন, হাওরে এবার তিনি ১৬  কেদার জমিতে বোরো ধান  রোপন করেছেন। তিনি হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটা শুরু করেছেন। প্রতি  কেদারে ২০ মন করে ধান পাওয়ার আশা করছেন। আকাশ ভাল হলে ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যে সব ধান  কেটে ঘরে তুলতে পারবেন। 
এবার হাওরের বাম্পার ফলন হয়েছে উল্লেখ করে দেখার হাওর পাড়ের কৃষক কমল মিয়া বলেন, ১৫ কেদার জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি তার মধ্যে ১০ কেদার জমির ধান কাটা হয়েছে ২/১ দিনের মধ্যে বাকী  ৫ কেদার ধান কাটা  শেষ হবে। 
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার করচার হাওর পাড়ে ডালিয়া  বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ৫ কেদার ফসল ফলাইছি। কাটা-মাড়াই  শেষ করেছি তবে ধান শুকানোর কাজ  শেষ হয়নি। ২/১ দিনের মধ্যে  শেষ হবে। আমার স্বামী  নেই। আমার সন্তান নিয়ে ধান কাটছি। ফসল তুলতে কষ্ট হলেও আনন্দের সীমা  নেই। বাজারে ধানের দাম ভালো থাকলে আমার  মেয়ের বিয়ে ও  ছেলের পড়াশুনার আর সমস্যা হবে না।’ 
জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সেলিম আহমদ ও যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক খন্দকার মঞ্জুর আহমদ জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শ্রমিক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সার্বক্ষনিকভাবে হাওরে কৃষক ভাইদের পাশে রয়েছেন এবং ফসল ঘরে উঠা পর্যন্ত  তারা মাঠেই থাকবেন। 
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম  বাসসকে বলেন, হাওরের ৮৩ ভাগ ধান কাটা  শেষ হয়েছে। এছাড়াও নন হাওরে ২৫ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। গড়ে ৮৫ ভাগ বোরো ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। 
তিনি বলেন, এ বছর ১ হাজার হারভেস্টার  মেশিনের পাশাপাশি ২ লাখ ৬৫ হাজার শ্রমিক হাওরে ধান কাটার কাজ করেছে। এবার হাওরে  বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। 
এব্যাপারে  জেলা প্রশাসক দিদারে আলম  মোহাম্মদ মাকসুদ  চৌধুরী  বাসসকে বলেন, ‘সুনামগঞ্জে প্রায় তিন লাখ কৃষি শ্রমিক রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন  জেলা  থেকেও কয়েক হাজার শ্রমিক এসেছে। হাওরের  বোরো ধান দ্রুত কর্তনের জন্য ৭০ শতাংশ সরকারি ভর্তুকিতে কৃষকদের চলতি বছর ১০৫টি নতুন হারভেস্টার ও ৩৩টি রিপার  দেওয়া হয়েছে, যা দিয়ে হাওরে দ্রুত ধান কাটা ও মাড়াই করা সম্ভব হচ্ছে। এতে কৃষকদের সময় ও খরচ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছেএবং দ্রুত হাওরের ধান কাটা সম্পন্ন হচ্ছে।’