শিরোনাম
॥ এস এম মজিবুর রহমান ॥
শরীয়তপুর, ২ মে, ২০২৩ (বাসস) : স্বল্প ব্যয় ও কম ঝুঁকিতে ভালো ফলন পাওয়া যায় বলে এবার শরীয়তপুরের জাজিরায় উচ্চ মূল্যের ফসল ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে দশগুণেরও বেশি। জাজিরার মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী ও সহজে আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়াতে পারে বলে জাজিরার কৃষকরা এখন বিঘার পরিবর্তে একরে একরে আবাদ করে এক ফসলী জমিকে দুই ফসলী ও দুই ফসলী জমিকে করে তুলছেন তিন ফসলীতে। খরচ ও ঝুঁকি কম হওয়ার ফলে কৃষকরাও অর্থনৈতিকভাবে বেশি লাভবান হচ্ছেন। বহুমুখী খাদ্যপণ্যে ব্যবহার হওয়া ভুট্টার আবাদ সম্প্রসারণের এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশেই কমে আসবে বলে মনে করছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।
জাজিরা উপজেলার পালেরচর ইউনিয়নের ইয়াছিন আকনকান্দি গ্রামের কৃষক দাদন মিয়া বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে গত বছর আমি ৩ বিঘা জমিতে ৩২ হাজার টাকা খরচ করে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। সে কারণে এবার আমি ৯ বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। ভুট্টা চাষে অন্যান্য ফসলের চেয়ে ঝুঁকিও কম খরচও কম। আর ফলনও ঘরে তোলা যায় সহজে। আশা করছি বাজার দরে ব্যাপক কোন পরিবর্তন না হলে এবার সাড়ে ৪ লক্ষ টাকারও বেশি বিক্রি করতে পারব।
একই এলাকার কৃষাণী শাহিনূর আক্তার বলেন, আগে আমার জমিতে দুইটি ফসল করতাম। এখন কৃষি বিভাগের পরামর্শে পেঁয়াজের সাথে ভুট্টা আবাদ শেষে আবার পাট আবাদ করতে পারছি। এতে করে ভুট্টার জন্য অতিরিক্ত কোন সার ও সেচ ছাড়াই ফসলটি পেয়ে যাচ্ছি। ফলে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে ভুট্টার ফলনে আমরা বেশি লাভবান হচ্ছি।
একই উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের কৃষক খায়রুজ্জামান বলেন, জমির প্রকার ভেদে কোন কোন জমিতে আমরা আগে শুধু বোরো আবাদ করতাম। কিন্তু এখন ভুট্টা আবাদ শেষে আমরা ওই জমিতে আবার পাট আবাদ করতে পারছি। দুইটি ফসল পেয়ে এখন আমরা বোরো আবাদের চেয়ে দেড়গুণ লাভবান হচ্ছি। তাছাড়া ভুট্টার সাথে কিছু উপযোগী জমিতে আন্তঃফসল হিসেবে সবজিও আবাদ করতে পারছি।
জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জামাল হোসেন বাসস’কে বলেন, উচ্চ মূল্যের ফসল ভুট্টা আবাদ অন্যান্য ফসলের চেয়ে কম ঝুঁকি, স্বল্প খরচ, আন্তঃফসল ও অতিরিক্ত ফসল হিসেবে আবাদ করা যায় বলে জাজিরা উপজেলায় ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে ভুট্টার আবাদ। ভুট্টা আবাদে জমিতে সার, কীটনাশক ও সেচ কম লাগায় কৃষকরাও অর্থনৈতিকভাবে বেশি লাভবান হচ্ছেন। ফলে গত মৌসুমের তুলনায় এবার জাজিরায় ১০ গুণেরও বেশি ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি বিভাগও মাঠ পর্যায়ে কারিগরি সহয়তাসহ সার্বক্ষণিক কৃষকদেরকে পরামর্শ প্রদান করে আসছে। উপজেলায় এ বছর ৭০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যাত্রা থাকলেও লক্ষত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৭শ’ ৭৫ হেক্টরে। প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করতে কৃষকের ১০ হাজর টাকা খরচ হলেও তা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ হাজার টাকায়। তাছাড়া ভুট্টা শিশু খাদ্য, কনফেকশনারী, গো-খাদ্য, পোলট্রি ও ফিস ফিডসহ বহুমুখী খাদ্যপণ্যে ব্যবহার হওয়ায় বাজার ব্যবস্থাও বেশ ভালো। ভুট্টা আবাদ সম্প্রসারণের এ ধারা অব্যাহ রাখতে পারলে আমদানি নির্ভরতা কমে অনেক বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয় হবে। আর কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের এ সময়ে ভুট্টা আবাদ সম্প্রসারণের মধ্যদিয়ে কৃষকরাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন বলে আমরা বিশ^াস করি।