বাসস
  ০৩ মে ২০২৩, ১৩:২৪
আপডেট : ০৩ মে ২০২৩, ১৪:২১

কেরানীগঞ্জে অরগ্যানিক পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষে ব্যাপক সাফল্য

॥ মো. মোস্তফা কামাল ॥
কেরানীগঞ্জ , ৩ মে, ২০২৩ (বাসস) : ঢাকার কেরানীগঞ্জে উৎপাদিত হচেছ অরগ্যানিক পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি। কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে মানিক নগর, ঢালিকান্দি, আলীপুর ও কলাতিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অরগ্যানিক উপায় বিষমুক্ত সবজি চাষ করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষে উৎপাদন ভালো ও খরচ কম হওয়ায় কৃষকের মাঝে ব্যপক আগ্রহ দেখা গেছে।কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের তত্বাবধায়নে কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উদ্যোগে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ও কলাতিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ শতাধিক কৃষককে আইপিএম এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিষমুক্ত সবজি চাষে উৎসাহি করা হচ্ছে। এর ফলে এলাকার কুষকরা বিষমুক্ত সবজি চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। অরগ্যানিক পদ্ধতিতে বিষমুক্ত মূলা, লাল শাক, ডাটা, পাট শাক, শসা, লাউ, বরবটি, করলা, টমেটো, পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, আলু চাষ,পুঁই শাক,দুন্দলসহ সকল ধরনের সবজি চাষ করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কলাতিয়ায় কৃষক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে সমবায় ভিত্তিতে কয়েক জন যুবক একত্রিত হয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এ বিষমুক্ত সবজি চাষ করছে। হযরতপুর ইউনিয়নের আলীপুর এলাকার কৃষক ইব্রাহীম আইপিএম এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন একজন বিষমুক্ত সবজি চাষি। তিনি এ সবজি চাষ করে প্রসংসিত ও স্বা-বলম্বী হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সময় তার জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে ভালো লাভোবান হতে পারতেন না। কারন সবজি ক্ষেতে পোকা নিধনের জন্য আনেক টাকার বিষ কিনতে হতো। এখন প্রকৃতিক ভাবে বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে পোকা নিধন করায় বাজার থেকে টাকা ব্যায় করে বিষ কিনতে হয় না। তাই এ পদ্ধতিতে একদিকে কৃষক লাভোবান অপরদিকে মানুষ স্বাস্থ্য সম্মত সবজি পাচ্ছে। বিষমুক্ত সবজির গাছ, মাটি, ফুল ও ফল সব কিছুই ভালোভাবে  প্রকৃতিক নিয়মে বেড়ে উঠে। সার, কীটনাশক, ভিটামিন ও ছত্রাকনাশক বাড়িতেই তৈরি করতে হয়। এ পদ্ধতিতে বাজার থেকে পোকা নিধন বিষ কিনতে হয় না। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল কেরানীগঞ্জে বিষমুক্ত সবজি চাষের মাঠ পরিদর্শনে এসে সন্তোস প্রকাশ করে বলেন,  মানুষের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে বর্তমান সরকার বিষমুক্ত সবজি চাষের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সারা দেশে ব্যপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আলীপুর এলাকার কৃষক ইব্রাহীম বলেন, কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বিষমুক্ত সবজি চাষের উপর বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি বিষমুক্ত সবজি চাষ করছি। আমার এক একর জমিতে ৬ মাসে প্রায় ৮০ হাজার টাকার পটল উৎপাদন হয়। পোকা নিধনে বিষ ব্যবহার না করায় উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় একরে  প্রায় ৬০ হাজার টাকা লাভ হয়। আমি এ বছর ৫ একর জমিতে বিষমুক্ত পটলের চাষ করে ভালো লাভোবান হয়েছি। বিষমুক্ত সবজির চাহিদাও বেশি। আর চাহিদা বেশি থাকায় দামও ভালো পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল আমীন বাসসকে বলেন, কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের অওতায় আইপিএম এর মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সারা দেশে ২০টি মডেল ইউনিয়ন নির্ধারণ করে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জ উপজেলার হযরতপুর ইউনিয়নকে মডেল ইউনিয়ন হিসেবে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কেরানীগঞ্জে প্রায় পাঁচ শতাধিক কৃষককে এ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বিষমুক্ত সবজি প্রাকৃতিক উপায় চাষাবাদের জন্য জমি ভালো ভাবে তৈরী করতে হয়। এজন্য বাড়িতে ভালোভাবে জৈবসার তৈরী করতে হয়। জৈবসার মাটিতে ভালো ভাবে মিশ্রিত করে সবজি চারা/ বীজ রোপণ করতে হয়। এ পদ্ধতিতে জমিতে পোকা নিধনের জন্য  বাজার থেকে কোন কীটনাশক কিনতে হয় না কৌশলের মাধ্যমে জমি থেকে পোকা নিধন করা হয়। এ পদ্ধতি প্রথমে কৃষকের কাছে জটিল মনে হলেও নিয়মিত চাষাবাদে তা সহজ হয়ে যাবে। এ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন খরচ কম ও পুষ্টিগুণ থাকে অনেক বেশি। তবে বাজারে যেসব সবজি কিনতে পাওয়া যায় সেগুলোর বেশিরভাগই রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও ফরমালিনসহ ক্ষতিকর নানা পদার্থ মিশ্রিত থাকে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে এ উপজেলায় যারা বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন  তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।