শিরোনাম
ঢাকা, ১১ মে, ২০২৩ (বাসস) : ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রমকে হত্যার ঘটনায় করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১২ জুন দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট রশিদুল আলম মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এদিন ধার্য করেন।
এরআগে বুধবার (১০ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলাটি করেন নিহতের মেয়ে ও সংসদ সদস্য নাহিদ ইজহার খান। মামলায় ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর (অব.) আব্দুল জলিলকেও আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত নামা আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদি নাহিদ ইজহার খান উল্লেখ করেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আমার বয়স ৫ বছর এবং আমার বড় ভাইয়ের বয়স ৮ বছর, তখন আমার বাবা সেনাবাহিনীর ৭২ বিশেষ কমান্ডার হিসেবে রংপুরে কর্মরত অবস্থায় ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনীর বিপথগামী, বিশৃঙ্খল সদস্যদের হাতে নিহত (শহীদ) হন। তার সঙ্গে অপর দুই সেক্টর কমান্ডার শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ, বীর উত্তম এবং বীর উত্তম শহীদ লে. কর্নেল এ.টি.এম হায়দার নিহত (শহীদ) হন।’
পরবর্তীতে আমরা বড় হয়ে বাবার কোর্সমেট, কলিগ এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে নিজেদের অনুসন্ধানে জানতে পারি, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, সকালবেলা বাবাসহ অপর দুই সামরিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন ১০ ইস্ট বেঙ্গলের অফিসে, যেটি তখন জাতীয় সংসদ ভবনের এমপি হোস্টেলে অবস্থান করছিল। সকালে বাবাসহ তারা নাস্তা করা অবস্থায় দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারী থেকে একটি টেলিফোন আসে দশম ইস্ট বেঙ্গলের সিও লে. কর্নেল নওয়াজেশের কাছে।
এরপর বাবাসহ অপর দুই সামরিক কর্মকর্তাকে বাইরে নিয়ে আসে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তারা। আমাদের অনুসন্ধানে আমরা আরও জানতে পারি তৎকালীন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জাসদের নেতা লে. কর্নেল আবু তাহেরের (অব:) নির্দেশে ১০ম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও ও সৈনিকরা সংঘবদ্ধভাবে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ড ঘটায়।
ততকালীন ক্যাপ্টেন লে. কর্নেল সিরাজ ও মেজর মুকতাদির, ততকালীন ক্যাপ্টেন সাবেক পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। আমরা আরও জানতে পারি, ১০ম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা জেসিও এবং সৈনিকদের সঙ্গে মেজর মো. আসাদউজ্জামান (অব:), এই তিন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গুলি করার পর বেয়নেট চার্জ করা হয়।
তিনি এজাহারে আরও উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধে তার বাবা যোগদান করেন এবং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন যশোর ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টর কমান্ডার। তার সরাসরি নেতৃত্বে পরিচালিত বিখ্যাত গরিবপুরের ট্যাঙ্ক যুদ্ধ, চৌগাছা যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরাজিত হয়েছিল এবং ৬ ডিসেম্বর বাবার নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রথম জেলা হিসাবে যশোর মুক্ত হয়।
আমাদের জন্য সময়টা এতটাই প্রতিকূল ছিল যে, একবার ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার কাছে আমার ভাই গিয়েছিলো বাবার নামে রাস্তার নামকরণের জন্য। তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রাস্তার নামকরণ করা হচ্ছিল। তিনি ভাইয়ের আবেদন পত্র হাতে নিয়ে আমার বাবার নাম দেখে ভাইকে তার অফিস কক্ষ থেকে থেকে বের করে দেন।
মামলার বাদি আরও বলেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার ক্ষমতায় আছে। সকল দেশবাসী ন্যায়বিচার পাচ্ছে। তাই আমি আমার বাবাসহ তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক কর্মকর্তার হত্যার বিচার দাবি করছি। আসামিদের মধ্যে কেবল মেজর (অব.) আব্দুল জলিল বেঁচে আছেন। আর যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা কেউ বেঁচে নেই।