বাসস
  ১২ মে ২০২৩, ১১:৩৪
আপডেট  : ১২ মে ২০২৩, ২২:১৫

ঠাকুরগাঁওয়ে কালের সাক্ষী জামালপুরের ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি মসজিদ

// মো. আসাদুজ্জামান আসাদ //
ঠাকুরগাঁও, ১২ মে, ২০২৩ (বাসস) : ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ির মসজিদটি অদ্যাবধি মানুষের কাছে এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরাতন কারুকার্যময় এ মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিভৃত পল্লীতে এর অবস্থান হলেও মানুষের  কাছে এর আকর্ষণ কমেনি। এখনো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ মসজিদটি একনজর দেখার জন্য এখানে পর্যটকরা ভিড় জমায়।
ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে জামালপুর গ্রামে অবস্থিত এই মসজিদটির স্থাপত্য শিল্প অত্যন্ত সুন্দর। নয়নাভিরাম এই মসজিদটি প্রাচীর স্থাপত্য কৃতি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এটি মুঘল স্থাপত্য রীতিতে তৈরি। তিন গম্ভুজ বিশিষ্ট মসজিদটির চারপাশে সুদৃশ্য মিনার ও কারুকার্য খচিত। গম্ভুজ সমূহ ভল্ট কায়দায় নির্মিত। স্থানীয় প্রবীণ ও বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিরা জানান, প্রথমে জমিদার আবদুল হালিম ও পরে হাজি নুনু মোহাম্মদ ১৮৬৭ সালে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। জমিদার নুনু মোহাম্মদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর পরবর্তীতে এই মসজিদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পড়ে জমিদার এমদাদুর রহমান চৌধুরী, জমিদার করিম উদ্দীন আহম্মদ চৌধুরী ও জমিদার বদিউদ্দীন আহম্মদ চৌধুরীর উপর।
তিনটি গম্বুজ ও এর চারদিকে ৩০ টি ছোট-ছোট মিনার রয়েছে এ মসজিদে। এর প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন হংসরাজ ও তার ছেলে রামহিত নামে দুই হিন্দু মিস্ত্রী। তারা দিল¬ী, আগ্রা, এলাহাবাদ ও লক্ষেèৗ এ নির্মিত মুসলিম ঐতিহ্যের বিভিন্ন কারুকার্যের অনুকরণে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিনি নিজেই এই নকশা সংগ্রহ করেন। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ৬ ইঞ্চি ও প্রস্থ ১১ ফুট ৯ ইঞ্চি। এর বারান্দা ২টি। প্রথম বারান্দার দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ২ ইঞ্চি, প্রস্থ্য ১২ ফুট ৩ ইঞ্চি। দ্বিতীয় বারান্দার দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১৯ ফুট ৫ ইঞ্চি। সামনে একটি খোলা আঙিনা রয়েছে। মসজিদটি স্থানীয় বাসিন্দারা এখনো ব্যবহার করে। একসাথে ২০০ মুসলি¬¬¬ এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদের খাদেম রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এটি অতি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। এই মসজিদ ও মসজিদের সাথে যাদুঘর ও জমিদারদের পুরোনো সংগ্রহশালাটি দেখতে প্রতিদিনই হাজার-হাজার মানুৃষ ভিড় জমান এখানে। তবে সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে ও মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলে দীর্ঘ সময় মসজিদটির সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।  
মসজিদ কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে এই মসজিদকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক হেরিটেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে শুনেছি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ির মসজিদটি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কালের স্বাক্ষী হয়ে দীর্ঘকাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। স্থাপত্য শিল্পের এই অনন্য নিদর্শন সদর উপজেলার অন্য কোথাও নেই। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে টুরিজম বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে এই ঐতিহাসিক মসজিদটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক হেরিটেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কাজও চলমান রয়েছে। আশা করি অনতি বিলম্বে প্রাচীন ও ঐতিহাসিক এ মসজিদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। আর এই মসজিদ কমিটির মাধ্যম্যে মসজিদের উন্নয়ন ও এর ঐতিহ্য রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।