শিরোনাম
॥ রোস্তম আলী মন্ডল ॥
দিনাজপুর, ১৫ মে, ২০২৩ (বাসস): মৌসুম শুরুর আগেই দিনাজপুরের হাট-বাজারে উঠেছে অপরিপক্ক লিচু। বেশি দামের আশায় পাকার আগেই লিচু বাজারে এনেছেন বিক্রেতারা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন,অপরিপক্ক লিচু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব লিচু কোনোভাবেই শিশুদের হাতে দেয়া যাবে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের লিচু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, মে মাসের ২০ তারিখের পর বাজারে আসবে মাদ্রাজি লিচু। জুন মাসের ১০ তারিখের পর বাজারে আসবে বেদানা জাতের লিচু, ২০ জুনের পর বোম্বে এবং এরপরের সপ্তাহে চায়না থ্রি লিচু বাজারে আসবে। সবশেষে বাজারে আসবে কাঁঠালি ও মোজাফ্ফর লিচু।
অথচ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাজারে উঠেছে লিচু। ইতোমধ্যে জেলার কালিতলা, বাহাদুরবাজার ও হকার্স মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় লিচু বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। মাদ্রাজি জাত বলে এসব লিচুর শ’ ২২০-২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা।
এসব লিচুর স্বাদ যারা নিয়েছেন কিংবা খেয়েছেন তারা বলছেন, এখনও টক। মিষ্টতা আসেনি। আঁটি ভরপুর হয়নি। তবু নতুন ফল হিসেবে অনেকে কিনছেন।
হকার্স মার্কেটের সামনে দেখা গেছে, সাদা ও লালচে লিচু নিয়ে বসেছেন কয়েকজন ফল বিক্রেতা। দিনাজপুরের লিচু, মিষ্টতায় ভরপুর, দাম মাত্র ২৫০ টাকা। এভাবেই হাঁকডাক দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তারা।
সেখানে কথা হয় রানা আহমেদ নামের এক বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নতুন ফল বাজারে উঠেছে। তাই দাম বেশি। কেউ-কেউ কিনছেন, অনেকে কিনছেন না।’
এবার এক সপ্তাহ আগে লিচু পেকেছে দাবি করে এই বিক্রেতা বলেন, ‘বৃষ্টি নেই, প্রচ- রোদ। এই তাপে লিচু পেকেছে। ১০০ লিচু ২২০-২৫০ টাকা বিক্রি করছি। তিন ঝুড়ি ঢাকায় পাঠিয়েছি। সেখান থেকে বিক্রি হবে। এ ছাড়া অনেকে ঢাকা, সিলেট, রংপুর ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন।’
লিচু ক্রেতা সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন ফল বাজারে উঠেছে, তাই ৫০টি কিনলাম ১২৫ টাকায়। খেয়ে দেখেছি, টক। টক হলেও সমস্যা নেই, ভিটামিন সি। পরিবারের সবাই খাবে, খুশি হবে। এটি অপরিপক্ক কিনা তা আমার জানা নেই।’
দাম একটু বেশি তবু নতুন ফল দেখে কিনলাম উল্লেখ করে আলাল মিয়া বলেন, ‘এসব লিচু সাদা ও লালচে। দেখে মনে হচ্ছে পুরোপুরি পরিপক্ক হয়নি।’
দামাদামি করেও বেশি হওয়ায় কেনেননি শহরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ক্ষতি কতটুকু জানি না। যদি বিষ না দিয়ে থাকে তাহলে তেমন ক্ষতি নেই। দাম বেশি, এজন্য কিনিনি। আরও কয়েকদিন পর কিনবো।’ বাহাদুরবাজার এলাকার রিপন ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মো. রিপন বলেন, এখনও স্থানীয় লিচু পাকেনি। তবে বাজারে উঠেছে। দাম বেশি। আমরা ১৯০ টাকায় শ’ কিনে বিক্রি করছি ২২০-২৫০ টাকায়।
বাগান থেকে লিচু নিয়ে এসেছি দাবি করে বাহাদুরবাজার এলাকার লিচু বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এবার বাগানে ফল কম। তবে চাহিদা আছে। সামনে আরও দাম বাড়বে। আবহাওয়ার কারণে এবার আগেভাগেই লিচু পেকেছে। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি পাকবে। লিচুতে ফরমালিন কিংবা কীটনাশক দেয়া হয় না। তবে বাজারে আসা লিচুতে মিষ্টতা কম, একটু টক। কয়েকদিন পর আর টক লাগবে না, পাকলে পুরোপুরি মিষ্টি হবে।’
অপরিপক্ক লিচু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম বোরহান-উল-ইসলাম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘অপরিপক্ব লিচুতে একপ্রকার এনজাইম থাকে। এনজাইমের কারণে পেটব্যথা, মাথাব্যথা ও যে কেউ অসুস্থ হতে পারে। খালি পেটে বেশি খেলে মৃত্যুও হতে পারে। তাই অপরিপক্ক লিচু না খাওয়াই ভালো। বিশেষ করে শিশুদের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে।’
এ বছর প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে বলে জানালেন- জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. নূরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আরও এক সপ্তাহ পর লিচু পাকবে। তাপমাত্রা বেশি থাকায় সেচ দিতে বলেছি চাষিদের। এখন বাজারে ওঠা অপরিপক্ক লিচু না খাওয়াই উত্তম।