শিরোনাম
ঢাকা, ১৮ মে, ২০২৩ (বাসস) : জেনেভা ভিত্তিক অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যূতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যূত হয় এবং ওই বছর বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান বন্যায় সবচেয়ে বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার বড় ধরনের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যূতি দেখা দেয় এবং ২০২২ সালেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ এই ধরনের বাস্তুচ্যূতি রেকর্ড করা হয়েছে- যা গত এক দশকে বার্ষিক গড় বাস্তুচ্যূতি ৬৩ লাখের প্রায় দ্বিগুণ।
প্রতিবেদনটি জানায়, ব্যাপক বন্যার কারণেই এতো বিপুল সংখ্যক লোক বাস্তুচ্যূত হয়। পাকিস্তানে বর্ষা মৌসুমে এই ঘটনা ঘটে।
সংঘাত এবং সহিংসতার কারণে ৩৫ হাজার লোক বাস্তুচূত হয়। সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যূতির ঘটনা ২০২১ সালের চেয়ে এ বছর ৯৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আফগানিস্তানে সংঘাত বন্ধ হওয়ার ফলেই এমনটা ঘটে। আফগানিস্তান ঐতিহাসিকভাবে এই অঞ্চলে সংঘাতজনতি কারণে বাস্তুচ্যূতির জন্য সর্বাধিক দায়ী ছিল।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বছরের শেষ পর্যন্ত প্রায় ৮৮ লাখ মানুষ দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যূত অবস্থায় বাস করছিল। যেখানে ৫৫ লাখ সংঘাত ও সহিংসতার ফলে এবং ৩৩ লাখ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে।
বন্যাজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ২০২২ সালে এই অঞ্চলে ৯০ শতাংশ বাস্তুচ্যূতির ঘটনা ঘটে। সারাদেশে বন্যায় স্থানচ্যূতির রেকর্ড করা হয়েছে। তবে, এই অঞ্চলের মধ্যে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বেশিরভাগ দেশে জন্য মৌসুমী বৃষ্টি স্বাভাবিক বা গড় থেকে কম ছিল। পাকিস্তান অবশ্য এর ব্যতিক্রম ছিল। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রেকর্ড পরিমান বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যার ফলে দেশটির ১০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে চলে যায় এবং এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাস্তুচ্যূতির ঘটনা ঘটে।
২০২২ সালে বন্যার কারণে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি বাস্তুচ্যূতি ঘটে। এই বন্যা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছে। এটি বাস্তুচ্যূত লোকদের মধ্যে রোগের হার বৃদ্ধির করে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অবকাঠামো, কৃষি ও জীবিকার ক্ষতির কারণে লাখ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও দারিদ্র্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগটির কারণে বহু মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বাস্তুচ্যূত ছিল।
ভারত ও বাংলাদেশ বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই বন্যার সম্মুখীন হয়-যা সাধারণত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে চলে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম মে মাসের প্রথম দিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং জুন মাসে আবারও একই এলাকা প্লাবিত হয়। ওই সময়ে রাজ্য জুড়ে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মে মাস থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আগাম বন্যার ফলে প্রায় ৭ লাখ ৪২ হাজান মানুষকে স্থানান্তরিত হতে হয়। মে মাসে ভারতে প্রবল ভারী বর্ষণের কারণে প্রতিবেশী বাংলাদেশের নদীগুলো উপচে পড়ে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলাকে প্লাবিত করে এতে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ জন বাস্তুচ্যূত হয়।
উভয় দেশে বর্ষা মৌসুমের বাকি সময়ে বৃষ্টিপাত ও বন্যা স্বাভাবিক বা গড়ের চেয়ে কম ছিল। জুলাই মাসে ভারতের কিছু অংশে ১২২ বছরের মধ্যে তাদের সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে।
২০২১ সালে বাংলাদেশে মৌসুমী বন্যায় অন্তত ৪ লাখ ৮২ হাজার লোক বাস্তুচ্যূত হয়েছে। বন্যার কারণে রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও পর্যাপ্ত নৌকার ঘাটতি ছিল আশ্রয়কেন্দ্র ও ত্রাণ শিবিরগুলোতে ত্রাণ সহায়তা সরবরাহে একটি বড় বাধা।