বাসস
  ২২ মে ২০২৩, ২০:৪৬

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিই পারে বিশ্বকে গণহত্যার নৃশংসতা থেকে বাঁচাতে : হ্যারি ভ্যান বোমেল

ঢাকা, ২২ মে, ২০২৩ (বাসস) : বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় প্রতিনিধি হ্যারি ভ্যান বোমেল বলেছেন, বাংলাদেশে ’৭১-এর গণহত্যার ‘আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ই পারে গণহত্যার নৃশংসতা থেকে বিশ্বকে রক্ষা করতে  পারে।  ইউরোপীয় প্রতিনিধি বোমেল ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাথে রোববার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।  
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। সভায় ইউরোপীয় প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নেদারল্যান্ডের সাবেক সংসদ সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী হ্যারি ভ্যান বোমেল, যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ  সাংবাদিক,  মানবাধিকারকর্মী ক্রিস ব্লাকবার্ন ও সর্ব-ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইউরোপীয় ফোরাম ফর বাংলাদেশ-এর সভাপতি আনসার আহমেদ উল্লাহ।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ভাষাসংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী সমাজকর্মী আরমা দত্ত, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, শহীদ সন্তান ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, শহীদ সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা, শহীদ সন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন প্রমুখ। 
সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির সফরকারী গণহত্যা বিষয়ক ইউরোপীয় প্রতিনিধিদলের কাছে ১৯৭১-এ সংঘটিত বাংলাদেশের গণহত্যা এবং বিভিন্ন দেশে এখনও চলমান গণহত্যাসমূহের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি গণহত্যাকারীদের শাস্তি দিয়ে ভিকটিমদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং দেশে দেশে গণহত্যার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করার দাবি জানান। তিনি বলেন, ১৯৭১-এ বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার পিছনে রয়েছেÑ সুনির্দিষ্ট রাজনীতি ও দর্শন। এটা পশ্চিমাদের অনেকে বুঝতে চান না। ’৭১-এ গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল ধর্মের নামে। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এবং তাদের এদেশীয় প্রধান দোসর জামায়াতে ইসলামী এই গণহত্যা করেছে ইসলামের দোহাই দিয়ে। শাহরিয়ার কবির যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশসমূহে আশ্রয় গ্রহণকারী চৌধুরী মঈনুদ্দিন, আশরাফুজ্জামান ও মোবারকের মতো শীর্ষ গণহত্যাকারীদের বাংলাদেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে স্ব স্ব দেশের আইন প্রণেতা ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনার জন্য সফরকারী ইউরোপীয় প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ করেন ।
যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন  বাংলাদেশের গণহত্যাকারীদের বিচার এবং গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রতি সমর্থন জানান।  বাংলাদেশে যে বর্বর, নৃশংস ও ন্যাক্কারজনক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, তা যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়- সেজন্যই  ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রয়োজন।
নেদারল্যান্ডের সাবেক সংসদ সদস্য ও মানবাধিকার নেতা হ্যারি ভ্যান বোমেল বলেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিই পারে গণহত্যার নৃশংসতা থেকে বিশ্বকে রক্ষা করতে। একাত্তরের গণহত্যায় পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরা যে নির্মমতা নৃশংসতা ও বর্বরতার উদাহরণ রেখেছে, তা সকলের জানা উচিত। 
আরমা দত্ত এমপি বলেন, ‘১৯৪৮ সালের ২৫ আগস্ট পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনের সকল কার্যবিবরণী ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাভাষায়ও  অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবি উত্থাপন করে বলেন, সেদিন ভাষা সংগ্রামী ও পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত পার্লমেন্টে যে তীর ছুড়েছিলেন পাকিস্তানিদের বুকে, তার অসহ্য যন্ত্রণায় হায়েনারা হতবাক হয়ে গিয়েছিল। মূলত সেখান থেকেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে যে সমস্ত যুদ্ধাপরাধী বিলাসী জীবন যাপন করছেন, তাদেরকে যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী পাসপোর্ট বাতিল করলে, তারা বাংলাদেশে ফিরে আসতে বাধ্য এবং তাদের বিচার করাও সম্ভব।’