শিরোনাম
॥ মোঃ মামুন ইসলাম ॥
রংপুর, ২৭ মে, ২০২৩ (বাসস) : আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় রংপুর বিভাগে স্থাপিত ৪৬,৯৩০ টি পুনর্বাসিত পরিবারের জন্য কেবল মাথা গোঁজার ঠাঁই নয়। তাদের আত্মমর্যাদারও প্রতিক।
জন্ম থেকেই জন্মান্ধ তিন ভাই রংপুরের পীরগাছা উপজেলার নরসিংহ গ্রামের অন্ধ আব্দুল কাদের মিয়ার ছেলে শাহ আলম, সাইদুল ইসলাম ও মামুন মিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে উপহার হিসেবে নতুন বাড়ি পেয়ে আনন্দে আপ্লুত। তিন দরিদ্র ভাই এর আগে নিজেদের একটা বাড়িতে থাকার স্বপ্নও দেখেননি।
জন্মান্ধ শাহ আলম বলেন, "আমাদের দুখী মা আমাদের জন্ম দিয়েছেন এবং আরেকজন সহৃদয় মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়ি দিয়ে আমাদের জীবনকে অর্থবহ করার পাশাপশি মর্যাদার সাথে জীবনযাপন করার জন্য নতুন শক্তি দিয়েছেন।"
মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে উপহার হিসেবে জমির মালিকানাসহ নিজস্ব বাড়ি ও স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছে রংপুর বিভাগের ৪৬,৯৩০পরিবার। সরকারের পুনর্বাসিত এসব পরিবারের সদস্যরা এখন আত্মমর্যাদা নিয়ে বসবাস করছেন। নিজের ঠিকানা পেয়ে এখন তারা সরকারের সহায়তায় বিভিন্ন প্রকার আয়বর্ধক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়ে ভাগ্য পুনর্গঠনের জন্য কাজ করছেন।
আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসিত এসব পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন আয়বর্ধক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত করার জন্য তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করছে। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যরা আয় বৃদ্ধির জন্য বৃক্ষরোপণ, বসতবাড়ির বাগান, শাকসবজি ও ফলের চাষ, হাঁস-মুরগি পালন, পশুপালন ও মৎস্য চাষ শুরু করার পাশাপাশি শিক্ষা, উপানুষ্ঠানিক বয়স্ক শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেতে শুরু করেছেন।
বাসস’র সাথে আলাপকালে, পুনর্বাসিত লোকেরা তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে দুটি শোবার ঘর, একটি করে রান্নাঘর, একটি স্যানিটারি ল্যাট্রিন, বারান্দা এবং বিদ্যুৎ সুবিধাসহ নতুন বাড়ি উপহার দেয়ার জন্য সন্তুষ্টি প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের ভাঙ্গাগড়া গ্রামের ষাটোর্ধ বিধবা নাজিরা বেওয়া জানান, বহু বছর ধরে অন্যের জমিতে সীমাহীন কষ্টে তাকে বসবাস করতে হয়েছে।
তিনি বলেন,“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর আমাকে একটি নতুন বাড়ি উপহার দেয়ায় আমার জীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এখন আমি নিজের বাড়িতে আত্মমর্যাদার সাথে জীবনযাপনের পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস ও নতুন করে বেঁচে থাকার শক্তি ফিরে পেয়েছি, ” ।
একই উপজেলার ষাটোর্ধ আবুল কাশেম জানান, নিজের কোন জমিজমা ও বাড়ি-ঘর না থাকায় তাকে বছরের পর বছর অন্যের জমিতে অনেক কষ্টের মধ্যে বসবাস করতে হয়েছে। এমন একটি সময়ে, সরকারের দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই নতুন বাড়িটি তার জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এটি তার স্বাচ্ছন্দ্য জীবনযাপনেরও শক্তি ।
নিজের ঘর না থাকায় বছরের পর বছর যেখানে-সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করেতে বাধ্য হয়েছেন একই উপজেলার খামার মোহনা গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যুবক মিঠুন। তিনি বলেন,“আমার মায়ের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে একটি বাড়ি উপহার পেয়ে এখন শান্তিতে ঘুমানোর জায়গা ও নিজের স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছি।”
জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার কাজীপাড়া এলাকার বিধবা আকলিমা বেগম (৬০) জানান, তিন মেয়ে রেখে স্বামী মারা যাওয়ায় গত দু’দশক ধরে তাকে অন্যের জমিতে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে বসবাস করতে হয়েছে। কাজীপাড়া আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে জমির মালিকানার দলিলসহ একটি নতুন বাড়ি পেয়ে তার জীবনটাই বদলে গেছে। তিনি নতুন করে বেঁচে থাকার শক্তি ও প্রেরণা পেয়েছেন। মেয়েদের নিয়ে নিজের বাড়ীতে আত্মমর্যাদার সাথে জীবনযাপন করছেন।
সদর উপজেলার সদ্যপুস্করিনি ইউনিয়নের বিধবা নুর বানু (৫৫) জানান, জমির মালিকানাসহ বাড়ি উপহার পেয়ে তিনি এক অর্থবহ জীবন ফিরে পেয়েছেন। এ উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আবু সাঈদ জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি উপহার পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগের জন্য তাঁর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
একই ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিধবা সাইমুন নাহার জানান, বহু বছর ধরে এখানে- সেখানে অন্যের জমিতে বসবাস করার পর জীবনের এই পর্যায়ে তিনি কখনো নিজের ঘরে ঘুমানোর কথা স্বপ্œেও ভাবেননি। তিনি জীবনের এ পর্যায়ে এসে একটি নতুন বাড়ী পাওয়ার ঘটনাকে একটি বিস্ময় হিসেবে উল্লেখ করে সরকারের এ উদ্যোগের সাফল্য কামনা করেন।
কালাপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ পরিতোষ চন্দ্র, পঞ্চগড় সদরের যোগী পাড়া গ্রামের বিল্লাল হোসেন, দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার জাবারীপুর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী রহিদুল ইসলাম, অদিতা বেগম,
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার পশ্চিম বোড়াগাড়ী গ্রামের ভূমিহীন দম্পতি মাহমুদা আক্তার (৩০) ও শেখ ফরিদ (৩৫) এবং লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী এলাকার বিধবা জয়নব বেগম (৬০)-এর মতো শত শত পরিবার এখন আত্মমর্যাদার সাথে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন।
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার পশ্চিম বোড়াগাড়ী গ্রামের ভূমিহীন দম্পতি মাহমুদা আক্তার (৩০) ও তার স্বামী শেখ ফরিদ (৩৫) সরকারের দেয়া নতুন বাড়ি পেয়ে তাদের দু’সন্তানকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন।
রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত চার ধাপে জেলার আটটি উপজেলার গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে মোট ৫ হাজার ৭৯টি বাড়ি বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। প্রকল্পটি সকল গৃহহীন মানুষের জন্য আশ্রয় নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি তাদের জীবন পুনর্গঠনে সহায়তা প্রদান, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা এবং আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে দক্ষতা বিকাশের লক্ষ্য নিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মোঃ ইব্রাহিম খান বাসস’কে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই রংপুর বিভাগের গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় চার ধাপে ৪৬,৯৩০টি নতুন বাড়ি হন্তান্তর করেছেন। সকল গৃহহীন মানুষের স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এটি সরকারের একটি চলমান কার্যক্রম।
তিনি বলেন, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় প্রথম দফায় ১৩,১৩০টি গৃহহীন পরিবার, দ্বিতীয় দফায় ১২,৪৩৬টি পরিবার, তৃতীয় দফায় ১৫,৯৫৬টি পরিবার এবং চতুর্থ দফায় প্রথম কিস্তিতে ৫,৪০৮টি পরিবারকে বাড়ি দেয়া হয়েছে।
আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আয়বর্ধক কার্যক্রমের মাধ্যমে পুনর্বাসিত পরিবারগুলোকে স্বাবলম্বী করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছেন বলে তিনি জানান।