বাসস
  ১১ জুন ২০২৩, ১৬:৪৪

এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে : উপাচার্য

ঢাকা, ১১ জুন ২০২৩ (বাসস): এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার অবশ্যই রোধ করতে হবে। তা করতে না পারলে, ২০৫০ সাল নাগাদ মানুষের শরীর এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হওয়ার সন্ভাবনা থাকায় তখন  করোনার চাইতে দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর আশংকা করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)‘এন্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ’ শীর্ষক  মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো: শারফুদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আশঙ্কার বিষয় হলো বর্তমানে রোগীদের শরীরে আইসিইউতে রাখা রিজার্ভ এন্টিবায়োটিক (যেমন মেরোপেনাম) কাজ করছে না। এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করার বিকল্প নেই। 
উপাচার্য বলেন,এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিটেন্সের মতো বৈশ্বিক সমস্যা বিশ্ব নেতাদের সমন্বিত,সুপরিকল্পিত, বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিটেন্স থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ‘ওয়ান হেলথ সলিউশন’ প্রবর্তণের বাস্তবায়ন জরুরি। একই সাথে এই বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি। 
বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লক অডিটোরিয়ামে বিএসএমএমইউ সেন্ট্রাল সাব কমিটি এই সেমিনারের আয়োজনে  করে।
অনুষ্ঠানে এন্টিবায়োটিকের উপর পৃথক তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।  
ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জহিদুল ইসলাম উপস্থাপিত ‘এন্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ প্রোগ্রামস ফর ইনফেকশন কন্ট্রোল ইন এ টার্শিয়ারি কেয়ার হসপিটাল’ প্রবন্ধে বলেন, বিএসএমএমইউয়ের আইসিইউতে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের মাঝে সর্বোচ্চ শতকরা ৫২ শতাংশ রোগীদের অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স পাওয়া গেছে। হৃদরোগ, কিডনী, শিশু ও নবজাতক বিভাগের রোগীদের মাঝে এই হার ছিল ২১. ৫ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বে বছরে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্সে ভোগা রোগীদের মৃত্যুর হার ৭ লাখ। ২০৫০ সাল নাগাদ এই মৃত্যু হার বেড়ে ১ কোটিতে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। 
প্রবন্ধে আরো উল্লেখ করা হয়,অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স প্রতিরোধ শুধুমাত্র চিকিৎসকদের পক্ষে সম্ভব নয়, কেননা পোল্ট্রি শিল্পে উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রীতে বিশেষ করে মুরগীর মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত ৫৫ শতাংশ। মৎস্য, পশু ও পোল্ট্রি শিল্পে ১৯ ধরণের এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষিখাতও এর আশঙ্কার আওতামুক্ত নয়। এসকল খাবার খেয়ে মানুষের শরীর সহজেই এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। এন্টিবায়োটিক সেবনে রোগ নিরাময় হচ্ছে না। ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে সমগ্র বিশ্বে রোগীদের চিকিৎসায় বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার আশঙ্কা ২০৫০ সাল নাগাদ এই ব্যয় ১০০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। 
মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহেদা আনোয়ার এন্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ কমিটির কাঠামো ও মাইক্রোবায়োলজীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর হাসপাতালসমূহে এন্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। বিএসএমএমইউতেও এই  প্রোগামটি অতিদ্রুত চালু করা প্রয়োজন। এটি সফলভাবে চালু করতে পারলে হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর হার,  রোগীর হাসপাতালে অবস্থানের সময়কাল কমানো সম্ভব হবে এবং এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠার প্রবণতা কমানো সম্ভব হবে। এর জন্য দরকার রোগের জীবাণু শনাক্ত এবং এন্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা নির্ণয় করে সঠিক এন্টিবায়োটিক  প্রয়োগ করা। এর জন্য তিনি মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ক্লিনিক্যাল চিকিৎসবক, হাসপাতাল প্রশাসন, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের আহ্বান জানান। এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত অবশ্যই করতে হবে। কারণ নিকট ভবিষতে বাজারে আর নতুন  কোন এন্টিবায়োটিক আসবে না।
 ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ নাজমুল হাসান ‘ রেশনাল ইউজ অফ এন্টিবায়োটিকস: ক্লিনিশিয়ান্স রোল ইন এন্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ’ শীর্ষক প্রবন্ধে অপ্রয়োজনে আন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। 
তিনি বলেন, সঠিক ঔষধ, সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার না করার কারণে এ্যান্টিবায়োটিক এর কার্যকারিত কমে যাচ্ছে। তাই এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে যত দ্রুত সম্ভব নীতিমালার বাস্তবায়ন জরুরি। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালাটি অনুসরণেওর পরামর্শ দেন দেন। তিনি পশুপালন ও কৃষি ক্ষেত্রে এ্যান্টিবায়োটিক এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দেন।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী। 
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের  উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন,উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক,  কনসালটেন্ট, চিকিৎসক  ও রেসিডেন্টগণ উপস্থিত ছিলেন।