বাসস
  ১৩ জুন ২০২৩, ২১:০৫
আপডেট  : ১৪ জুন ২০২৩, ২২:২২

সৈয়দপুরে কয়া গোলাহাট গণহত্যা দিবস পালিত

নীলফামারী, ১৩ জুন, ২০২৩ (বাসস) : জেলার সৈয়দপুরে আজ  কয়া গোলাহাট গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে । 
এ উপলক্ষেআজ বেলা ১২টার দিকে  বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রবাহমান সংগঠন আমরা একাত্তর এর প্রতিনিধি দল। পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সেখানে আলোচনা সভায় অংশ নেন । 
এরপর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।আমরা একাত্তরের প্রধান সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক হিলাল ফয়েজী এ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
হিলাল ফয়েজী বলেন, সৈয়দপুর হচ্ছে শহীদের শহর, সৈয়দপুরের মতো শহীদের শহর বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। এখানে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজাকার আলবদরদের হাতে ঘরে ঘরে শহীদ হয়েছেন। প্রতিটি বাড়ির ইটকাঠে হয়েছে শহীদের রক্তের দাগ। সেই কথাটি মনে রেখে ১৩ জুনকে গোলাহাট জেনোসাইড দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে । সেজন্য সবার আগে গোলাহাট জেনোসাইডের জাতীয় স্বীকৃতি আদায় করতে হবে। জাতীয় স্বীকৃতি আদায়ের জন্য আমরা একাত্তর , উত্তরবঙ্গ মিউজিয়াম, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, এখানে স্থানীয় যারা আছেন সবাই মিলে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।
সৈয়দপুরের সকল শহীদদের নাম শিগগিরই তালিকাবদ্ধ করা হবে উল্লেখ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়সহ অন্যান্য সরকারি বিভাগের সাথে সকল শহীদদের জাতীয় স্বীকৃতি অর্জনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য বিভিন্ন প্রবাসী সংগঠনের সহযোগিতায় ‘আমরা একাত্তর’ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫১তম অধিবেশনে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। আসন্ন ৫২তম অধিবেশনেও আমাদের দাবি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইইউ প্রতিনিধি দল ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টে তারা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি উত্থাপন করবেন ।
উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘আমরা জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।পাশপাশি আমাদের জাতীয় স্বীকৃতিটাও জরুরী। এজন্য আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে’।
এসময় তিনি কুড়িগ্রামে তাঁর প্রতিষ্ঠিত উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে দেশের ৬৪ জেলার বধ্যভূমি এবং গণকবরের মাটি মিশ্রিত একটি মানচিত্র করার ঘোষণা দেন।
আমরা একাত্তরের কেন্দ্রীয় সম্বয়কারী ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) বিশেষ প্রতিনিধি মাহফুজা জেসমিন বলেন, আমরা একাত্তরের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যে জেনোসাইড সংঘঠিত হয়েছে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়। কিন্তু এখানে এসে মনে হলো যে আমাদের নিজেদের ঘরে ঘরে যে গণহত্যাগুলো হয়েছে, যে জেনোসাইড হয়েছে, যে নির্মম স্মৃতি বহন করে চলেছেন আমাদের দেশের মানুষ তাদেরকে আলাদা আলাদা করে জাতীয় স্বীকৃতি জানানো প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে জেনোসাইডের স্বীকৃতি আদায়, লক্ষ লক্ষ মা-বোনের উপর যে নির্যাতন জুলুম হয়েছে তাদের এবং শহীদ পরিবারের স্বজনদের জন্য পাকিস্তানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় এবং বাংলাদেশ জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা একাত্তরের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
এসময় তিনি ১৩ জুনের গোলাহাট হত্যাকান্ডে শহীদ, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ এবং অত্যাচারিত মা-বোনদের প্রতি অতল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ।
পরে সংগঠনের সদস্যরা দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় শহীদদের স্মরণে স্থাপিত অদম্য স্বাধীনতায় পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে শহরের উপকন্ঠে কয়া গোলাহাট নামক স্থানে পৈশাচিক কায়দায় স্বাধীনতাকামী হিন্দু মাড়োয়ারী পরিবারের ৪৪৮ জন নিরীহ নারী, পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করা হয়। বর্বর ওই হত্যাযজ্ঞের স্থানটি এখন সৈয়দপুর গোলাহাট বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত ।
শহীদ পরিবারের সদস্য নিরঞ্জন কুমার আগরওয়ালা (৬০) জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৩ জুন সৈয়দপুর স্টেশনে একটি বিশেষ ট্রেন দাঁড় করানো হয় । প্রচারণা চালানো হয় ট্রেনটি সৈয়দপুর থেকে চিলাহাটি সীমান্ত হয়ে ভারতের হলদিবাড়ি স্টেশনে পৌঁছবে। এরপর ট্রেনটি শহরের উপকণ্ঠ গোলাহাট এলাকায় দাঁড় করিয়ে চালানো হয় গণহত্যা।
অপরদিকে দিবসটি উপলক্ষে শহীদ সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ’৭১,স্মরনিকা পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এ সব কর্মসূচির মধ্য রয়েছে শহীদ বেদিতে পুষ্পামাল্য অর্পণ, কালো ব্যাজ ধারণ, মোমবাতি প্রজ্বলন, আলোচনা সভা ও নিহতদের আত্মার স্মরণে প্রার্থনা।
ওই অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জেনোসাইড গবেষক ও শহীদ পরিবারে সন্তান প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার দত্ত, কুড়িগ্রাম  জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি জ্যোতি  আহমেদ, শহীদ পরিবারের সন্তান কয়া গোলাহাট গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী তপন কুমার দাস, শ্যাম সুন্দর সিংহানিয়া, সাংবাদিক ও শহীদ পরিবারে সন্তান এম আর আলম ঝন্টু প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন আমরা একাত্তরের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী এলামূল আজিজ রুমি, কাজী শরিফুল ইসলাম জুয়েল, আব্দুর রশিদ, উত্তম কুমার দাস, রুশো রাকিব, ইমরুল চৌধুরী।