শিরোনাম
// আরিফ রিজভী //
ফেনী, ১৪ জুন, ২০২৩ (বাসস): আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে অভ্যন্তরীণভাবে কোরবানির পশুর শতভাগ চাহিদা মেটাতে পারবে বলছেন ফেনীর গো-খামারিরা। ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, জেলার বাইরে থেকে পশু না এলে লাভের মুখ দেখবেন তারা।
কোরবানীতে ফেনীর চাহিদা প্রসঙ্গে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনিসুর রহমান জানান, চলতি বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার। জেলাজুড়ে গো-খামারগুলোতে লালন পালন করা হচ্ছে ৮৮ হাজার ২৩টি গবাদি পশু। ফলে ফেনীতে এবার কোরবানির পশু সংকট হবার কোনো আশংকা নেই। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এক বা একাধিক কোরবানির পশু লালন-পালন করছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস দেয়া তথ্যমতে, জেলায় ৫ হাজার ১৫৪ জন তালিকাভুক্ত খামারি রয়েছে। যেখানে চলতি বছর ২৮ হাজার ৯১৬টি ষাঁড়, ৩০ হাজার ৬৯৪ বলদ, ২৫৬১টি মহিষ এবং ১৬ হাজার ৩৫৪টি ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
ছাগলনাইয়া উপজেলার খামারি বাদল জানান, এবার কোরবানির জন্য ২০০টির মত পশু পালন করছি। তুলনামূলক অন্যান্য বছরের চেয়ে খরচের পরিমাণ বেশি। তবুও বাইরে থেকে গরু প্রবেশ না করলে লাভবান হওয়া যাবে।
পরশুরামের খামারি মো. মীর হোসেন মিরু বলেন, কোরবানির জন্য ১৫টি গরু এবং ১০টি ছাগল প্রস্তুত করছি। এখনকার মত ঈদের বাজারদর অনুকূলে থাকলে আশাকরি খরচ বাদ দিয়ে বড় পরিমাণ লাভ করতে পারব।
আজিজুল হক নামে অন্য আরেক খামারি বলেন, গত বছরও একদম শেষ সময়ে বাইরে থেকে গরু প্রবেশ করার কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এমন হলে মুখ ফিরিয়ে নেবে। সেজন্য সীমান্তে নজরদারি প্রয়োজন।
কোরবানির পশু বিক্রিতে খামারি নিচ্ছেন ভিন্ন-ভিন্ন কৌশল। ফুলগাজী চৌধুরী এগ্রোর সত্ত্বাধিকারী মাজহারুল হক জানান, এবার ক্রেতা চাইলে গরুর দৈহিক ওজন মেপে খামার থেকে গরু কিনতে পারবে। সেজন্য লাইভ ওয়েট পদ্ধতির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া কোরবানির আগের দিন পর্যন্ত গরু কেনে খামারে রাখতে পারবেন।
কোরবানি পশু লালন-পালনে নিয়মিত খামারিদের সহযোগিতা করছে প্রাণিসম্পদ অফিস। পরশুরাম উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ঈসমাইল জানান, মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন রোগের টিকা, খামারি প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহযোগিতা, কেমিক্যাল, হরমোন ও স্টোরয়েড সংক্রান্ত জনসচেতনতা তৈরি করতে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া দপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর রাখছে।
সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধে নজরদারি বাড়িয়েছে বিজিবি সদস্যরা। এ তথ্য জানিয়ে বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল রকিবুল হাসান বলেন, সীমান্ত দিয়ে কোরবানের ঈদে গরু বেশি আসে। অবৈধভাবে যেন কোন গরু প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি সতর্ক রয়েছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরাও এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে। আশা করছি দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর পারস্পরিক সহযোগিতায় গরু চোরাচালান বন্ধ থাকবে।
কোরবানিতে গরু-ছাগলের পাশাপাশি রয়েছে মহিষেরও চাহিদা। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, কোরবানির জন্য জেলার উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীসহ বিভিন্ন জায়গায় ২ হাজার ৫৬১টি মহিষ প্রস্তুত করা হয়েছে।
কোরবানীতে প্রত্যাশার কথা জানিয়ে সোনাগাজী উপজেলার মহিষ খামারি সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, এখানে অন্যান্য পশুর সাথে মহিষ পালনের জন্য বেশি উপযোগী। খরচের পরিমাণও তেমন বেশি না। এবার ঈদে বিক্রির জন্য ১৩টি মহিষ প্রস্তুত করছি। প্রতিটি মহিষ গড়ে ৭৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন তিনি।
পশুর যোগান বেশি থাকায় ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থাকবে বলে ধারণা করছেন জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, দেশের বাইরে থেকে অবৈধ উপায়ে গরু আমদানি বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। তা না হলে দেশীয় খামারিরা লাভবান হবেন না।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও জানান, এছাড়া কোরবানি উপলক্ষে জেলার ১৮০ জন পেশাদার ও মৌসুমি কসাইকে প্রশিক্ষণ এবং চামড়া সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে অবহিতকরণ সভা করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।