শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ১৫ জুন, ২০২৩ (বাসস) : চট্টগ্রামের জামাল খান মোড়ে সড়কের পাশে দেয়ালজুড়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের আলোকচিত্র নিয়ে তৈরি ম্যুরালসহ ৫০ টি চিত্রকর্ম ভাংচুরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ চট্টগ্রাম। আজ নগরীর বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুরকারীদের রাজপথেই মোকাবেলা করা হবে, তাদের রেহাই দেয়া হবে না।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও কাউন্সিলরবৃন্দ এক বিবৃতিতে এই ভাংচুরের জন্য বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠন যুবদল, ছাত্রদলকে দায়ী করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এক যৌথ বিবৃতিতে মেয়র ও কাউন্সিলরবৃন্দ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিপ্ল¬বী জীবনের ইতিহাসকে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে জামালখানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ ৫০টি চিত্রকর্ম স্থাপন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশকে উন্নয়নের স্বর্ণশিখরে নিয়ে যাচ্ছেন তখন দুষ্কৃতিকারীরা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুরের মাধ্যমে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কেবল কোন রাজনৈতিক দলের নেতা নন, তিনি আমাদের জাতির পিতা। তার সাথে দেশের স্বাধীনতার অস্তিত্ব জড়িত। মূলত যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারাই আমাদের স্বাধীনতার চেতনার উৎস বঙ্গবন্ধুর ম্যূরাল ভাংচুরের মতো ঘৃণ্য কাজ করেছে। জাতির পিতার প্রতি এই অবমাননামূলক ধৃষ্টতার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেছেন, বিএনপি-জামাত চক্র অতীতের ন্যায় আবারো সন্ত্রাসী কর্মকা- শুরু করে দিয়েছে। গতকাল তারা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাংচুর করার মতো ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, যা দেশদ্রোহিতার শামিল।
জাতির জনকের ম্যুরাল ভাংচুরের প্রতিবাদে আজ ১৫ জুন বিকেলে দোস্ত বিল্ডিং চত্বরে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলোত্তর সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান বলেন, বিএনপি আগুন নিয়ে খেলছে, যে আগুনে নিজেরাই পুড়ে মরবে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সহ সভাপতি অধ্যাপক মো মঈনুদ্দিন, মো আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন শাহ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আলাউদ্দিন সাবেরী, প্রচার সম্পাদক প্রদীপ চক্রবত্তী, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক নাজিম উদ্দিন তালুকদার, উপ-দপ্তর সম্পাদক আ স ম ইয়াছিন মাহমুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য ফোরকান উদ্দিন আহমেদ, সরোয়ার হাসান জামিল, মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, সাহেদ সরোয়ার শামীম, হাসিবুন সুহাদ চৌধুরী সাকিব, উপদেষ্টা মো. মহিউদ্দিন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দিলোয়ারা ইউসুফ, যুবলীগ সভাপতি এসএম রাশেদুল আলম, মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদিকা এড. বাসন্তী প্রভা পালিত, মৎস্যজীবী লীগ সভাপতি হারুন অর রশীদ, কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক সেলিম সাজ্জাদ, যুব মহিলা লীগ আহবায়িকা রওশন আরা রতœা, যুগ্ম আহবায়িকা এড. জুবাঈদা সরোয়ার নিপা, সাদাত আনোয়ার সাদী, ছাত্রলীগ সভাপতি তানভীর হোসেন তপু, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম প্রমুখ।
সমাবেশশেষে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল দোস্ত বিল্ডিং থেকে শুরু হয়ে স্টেশন রোড, রেল স্টেশন, নিউমার্কেট, কোতোয়ালী হয়ে পুনরায় দোস্ত বিল্ডিং চত্বরে এসে শেষ হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, কোন বিদেশি প্রভূর প্রেসকিপশনে নয়, ক্ষমতায় কে আসবে বা কে যাবে তা এদেশের জনগণ তাদের ভোটধিকারের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেবে। ক্ষমতাধর বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর মনে রাখা উচিত বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো বিদেশি শক্তির নাক গলানোর সুযোগ নেই। ক্ষমতাধর একটি দেশ বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি দেখে হতবাক। এটা তাদের সহ্য হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকুক ঐ দেশটি চায় না। দেশটির চরিত্র ও ভূমিকা কারো অজানা নয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে ঐ দেশটি পাকিস্তানের পক্ষে বঙ্গপোসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল। বৈশ্বিক প্রতিবাদ ও নিন্দার মুখে ঐ সপ্তম নৌবহরকে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের পক্ষে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন পাল্টা ভেটো প্রদান করায় তাদের স্বার্থ হাসিল হয়নি এবং তারা পরাজিত হয়। এছাড়াও পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে এরা স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানের সাথে ষড়যন্ত্র করে। ১৯৭৩ সালে নগদ মূল্যে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ খাদ্য সামগ্রী কিনেছিল। বাংলাদেশে একটি কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির কুমতলবে আমেরিকা খাদ্যবাহী জাহাজটিকে ফিরিয়ে নেয় এবং প্রচার করে যে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ লোক মারা যাবে। এই সাময়িক দুর্ভিক্ষ বঙ্গবন্ধু মোকাবিলা করে সফলতার সাথে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সৌভাগ্যবশত সে বছর বাম্পার ফসল উৎপাদন হয়। এটাও তাদের সহ্য হয়নি। তাই ১৯৭৫ সালে মার্কিনি গোয়েন্দা সংস্থা সিআই ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার পরিকল্পনায় ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
জামালখানে দেওয়ালে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রীর ছবি ভাংচুরের প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় তাৎক্ষণিক বিএনপি জামাতের নৈরাজ্য ও নাশকতাবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মসিউর রহমান চৌধুরী, উপ-দপ্তর সম্পাদক কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, সাবেক কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মিথুন বড়ুয়া, ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, আব্দুস সালাম মাসুম, নুর মোস্তফা টিনু, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু, সাখাওয়াত হোসেন সাকু, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক যুবলীগ নেতা জাবেদুল আলম সুমন, নঈম উদ্দীন, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, জাকারিয়া দস্তগীর, মিঠুন মল্লিক, ওয়াহেদ রাসেল, শৈবাল দাশ, চট্টগ্রাম কলেজের মাহমুদুল করিম, কোতোয়ালী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আদিত্য নন্দী, মাকসুদুর রহমান মাসুদ প্রমুখ।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, চট্টগ্রাম-৮ আসনের এমপি নোমান আল মাহমুদ এক বিবৃতিতে যুব দলের একটি মিছিল থেকে জামাল খান থেকে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুরকে একটি বড় অশনি সংকেত হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, জামাত শিবিরকে সামনে রেখেই বিএনপি মাঠে নেমেছে। এরা বাংলাদেশের অস্তিত্বকে মুছে দিতে চায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ইশারায় বাংলাদেশকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত চলছে। এরই একটি মহড়া শুরু হয়ে গেল গতকাল, জামালখানে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুরের নষ্ট অভিযানের মাধ্যমে।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের সরাসরি একশনে যেতেই হবে এবং সবচেয়ে বড় শক্তি আমাদের ঐক্যের শক্তি। বিএনপি-জামাতের সাথে বাংলাদেশ-বিরোধী আন্তর্জাতিক আঁতাত হচ্ছে। এটা ’৭৫ সালেও হয়েছে। এবার যারাই করুক তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদেরকে কোনভাবে ছাড় দেওয়া হবে না। বিএনপি-জামাত আবার যদি অগ্নিসংযোগ লুণ্ঠন, সন্ত্রাস রাহাজানি করে তাহলে তাদেরকে আর রাজপথে নামতে দেওয়া হবে না।