শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ১৭ জুন, ২০২৩ (বাসস) : গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গৃহবধূ সাগরী সরকার গরু মোটাতাজা করে সফল হয়েছেন।
তিনি বিগত ১০ বছর ধরে গরু মোটাতাজা করে আসছেন। কোরবানীর সময় এসব গরু বিক্রি করে তিনি সংসারের আয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখছেন। দুই সন্তানের জননী সাগরী সরকার গরু মোটা তাজা করণের বাড়তি আয় থেকে ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। তার মেয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে ও ছেলে ২য় শ্রেণিতে পড়ছে। তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। সাগরী সরকারের স্বামীর নাম পলাশ বালা। তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার খাটিয়াগড় গ্রামে। পলাশ বালার বাড়ির পাশের একটি গ্যারেজে তিনি ভ্যান,রিকশা, সাইকেল মেরামতের কাজ করেন। স্বামী-স্ত্রীর আয়ে সংসারে স্বাচ্ছন্দ রয়েছে। এ বছর কোরবানীকে সামনে রেখে ওই গৃহবধূ ৪টি অস্ট্রেলিয়ান জাতের ষাঁড় মোটাতাজা করেছেন।
গৃহবধূ সাগরী সরকার বলেন, ১০ বছর আগে ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনে মোটাতাজা করি। ১ বছর পালন করার পর কোরবানীর সময় গরুটি ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করি। তারপর থেকে প্রতি বছরই গরু মোটাতাজা করে আসছি। গত বছর ৪টি গরু মোটাতাজা করে ভালো টাকা আয় করেছি। এ বছর অস্ট্রেলিয়ার ফ্রিজিয়ান জাতের ৪টি ষাঁড় মোটা তাজা করেছি। এ ৪টি ষাঁড় অন্তত ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি হবে। এ বছর যদি কোরবানীর হাটে ইন্ডিয়ান গরু না আসে তা হলে ষাঁড় ৪টির ন্যয্য মূল্য পেয়ে লাভবান হব। এ টাকা দিয়েই ভবিষ্যতে ডেইরী ও গরু মোটাতাজা ফার্ম গড়ে তুলব।
সাগরী সরকার আরো বলেন, স্বামী, সন্তান ও সংসার সামলিয়ে আমি কঠোর পরিশ্রম করে গরু লালন পালন করি। এতে সাফল্য পেয়েছি। সবাইকে নিয়ে ভালো আছি। আমি আমার এ ব্যবসা সম্প্রসারণ করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর আমাকে সব ধরণের সহযোগিতা করে। আরো বড় খামার করার জন্য সরকারের সহয়োগিতা চাই।
সাগরী সরকারের স্বামী পলাশ বালা বলেন, আমি গ্যারেজের কাজে ব্যস্ত থাকি আমার স্ত্রী খড়, ভূষি, কুড়া ও ঘাস খাইয়ে গরু মোটাতাজা করে। আমাদের গরুর মাংসের কোয়ালিটি ভালো। তাই ক্রেতারা আগ্রহভরে আমাদের গরু কিনে নিয়ে যায়।
সাগরী সরকারের প্রতিবেশি নির্মল মন্ডল বলেন, ১০ বছর ধরে গরু মোটাতাজা করে গৃহবধূ সাগরী সরকার অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার দেখা-দখি আমিও একটি গরু মোটা তাজা করেছি। আমাদের গ্রামের অনেকেই গরু মোটাতাজা করছেন। এটি এখন লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। আমাদের গ্রামে এটি প্রচলন করেছেন সাগরী সরকার।
খাটিয়াগড় গ্রামের ইয়াকুব মুন্সি বলেন, সাগরী সরকারের মোটাতাজা করা গরুর মাংস নিরাপদ। তিনি গরু পালনে কোন অপদ্রব্য ব্যবহার করেন না। তাই তার গরু কোরবানীর মধ্যে ক্রেতারা আগ্রহভরে ক্রয় করে নেন। এ বছর তিনি ৪টি অস্ট্রেলিয়া জাতের ষাঁড় মোটাতাজা করেছেন। এ ষাঁড়গুলো কিনতে ক্রেতারা ইতিমধ্যে তার বাড়িতে আসছেন।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সরদার বলেন, সাগরী সরকার ১০ বছর ধরে গরু মোটাতাজা করে সংসারের অভাব অনটন দূর করেছেন। তিনি এটি করে সংসারে মোটা টাকার যোগান দিচ্ছেন। এতে পরিবারটি স্বচ্ছলতার সাথে চলতে পারছে। সাগরীর মতো গৃহবধূরা গরু মোটাতাজা করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। সাগরী দেশের পরিশ্রমী গৃহবধূদের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাকে বড় গরুর খামার স্থাপনে সব ধরণের সহযোগিতা আমরা করে আসছি। ভবিষ্যতে তার জন্য এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।