শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ১৯ জুন, ২০২৩ (বাসস) : গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ী জেলায় ঔষধি গুন সম্পন্ন উচ্চ ফলনশীল বিনা তিলের বাম্পার ফলন হয়েছে।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত বিনা তিল-২ চাষ করে দুই জেলার কৃষক প্রতি হেক্টরে ১ হাজার ৭শ’ কেজি ফলন পেয়েছেন। গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র অফিস এ তথ্য জনিয়েছে।
এ বছর আবহাওয়া তিল চাষের অনুকূলে ছিল। ক্ষেতে পোকা মাকড়ের আক্রমণ হয়নি। এ কারণে তিলের বাম্পার ফলন হয়েছে। বপনের ৯০ দিনের মাথায় কৃষক ক্ষেত থেকে তিল ফসল কেটে ঘরে তুলেছেন। তিল চাষ করে কৃষক পাটের তুলনায় অন্তত দ্বিগুন টাকা আয় করেছেন। ঔষধি গুন সম্পান্ন এই তিলের তেল হৃদরোগ, চর্মরোগ প্রতিরোধী ও চুলের যতেœ অতুলনীয়। এই জাতের তিলের চাষ বৃদ্ধি করে ভোজ্য তেলের আমদানী নির্ভরতা কমানো সম্ভব। এ ছাড়া তিলের ফলন দেখে লাভজনক এ তিল চাষে দুই জেলার কৃষকরা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৌরভ অধিকারী জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ী জেলার ৫০ বিঘা জমিতে বিনা তিল ২ এর ৫০টি প্রদর্শনী প্লট করেন ৫০ জন কৃষক। বিনা উপকেন্দ্র থেকে কৃষককে বিনামূল্যে বীজ,সার, ছাত্রাক নাশক প্রদান করা হয়। পাশাপাশি বিনা উপকেন্দ্রের বিজ্ঞানী ও বৈজ্ঞানিক সহকারীরা দুই জেলার কৃষককে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। বিনা উপকেন্দ্রের পরামর্শে বিনা তিলের আবাদ করে কৃষক হেক্টরে এই তিলের ১ দশমিক ৭ টন ফলন পেয়েছেন।
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা গ্রামের কৃষক মো. রফিক সিকদার বলেন, এই বছর বিনা উপকেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে বীজ, সার, ছত্রাক নাশক পেয়ে পতিত জমিতে প্রথম বিনা তিল-২ চাষ করি। এ জন্য বিনা উপকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা মাঠে এসে পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি এ বছর আবহাওয়া তিল চাষের উপযোগি ছিলো। পোকার আক্রমণ হয়নি। এ কারণে তিলের বাম্পার ফলন পেয়েছি। আমার ক্ষেতের তিল দেখে আশপাশের কৃষক আগামী বছর তিল চাষ করতে চাচ্ছেন।
গোপালগঞ্জ জেলার একই গ্রামর কৃষক আরাফাত সরদার বলেন, এ তিল ৯০ দিনে ক্ষেত থেকে কেটেছি। এখন অন্য ফসল চাষ করতে পারছি। পাশাপাশি তিল চাষ করে পাটের তুলনায় দুইগুন বেশি লাভ করেছি। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকের উন্নয়ণে উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত সম্প্রসারণে বিনা কাজ করে যাবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।
গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্রের ইনচার্জ ও উধর্¦তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কামরুজ্জামান বলেন, স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন বিনা তিল-২ চাষ করে কৃষক একই জমিতে বছরে ৩টি ফসল উৎপাদন করতে পারবেন। এতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। কৃষকের আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, ঔষধি গুন সম্পান্ন এ তিলের তেল হৃদরোগ, চর্মরোগ প্রতিরোধী ও চুলের যতেœ অতুলনীয়। এ জাতের তিলে ৪৫ ভাগ তেল পাওয়া যায়। লাভজনক এ তিলের চাষ বৃদ্ধি করে ভোজ্য তেলের আমদানী নির্ভরতা কমানো সম্ভব।
বিনার মহা-পরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, সরকার ভোজ্য তেলের আমদানী নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সেই লক্ষ্যে আমরা ভোজ্য তেল চাষাবাদ বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। গত সরিষা মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সরিষা উৎপাদিত হয়েছে। তেল ফসলের মধ্যে তিল একটি অন্যতম ফসল। বিনা-২ জাতের তিলে প্রচুর তেল পাওয়া যায়। এটির চাষাবাদ সম্প্রসারণ করতে পারলে দেশে তেলে আমদানী নির্ভরতা কমানো সম্ভব। এতে একদিকে যেমন কৃষকের আয় বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে অন্য দিকে বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয় হবে।