শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২০ জুন, ২০২৩ (বাসস) : আসন্ন ঈদুল আযহা সামনে রেখে জেলায় কোরবানিযোগ্য ৩৫ হাজার ১২১টি গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সুবিধার্থে বিভিন্নস্থানে বসানো হয়েছে ক্যাশলেস পশুর হাট।
জেলার ৫ উপজেলার ৩ হাজার ২৫টি খামারে ঈদুল আযহা উদযাপন উপলক্ষে নিরাপদ মাংসের জন্য এসব গবাদি পশু উৎপাদন করা হয়েছে। এসব গবাদি পশু মোটা-তাজা করণে কোন প্রকার কেমিক্যাল বা অপদ্রব্য পুশ করা হয়নি। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এসব গবাদি পশু মোটা-তাজা করণে তদারকি করেছে। তাদের পরামর্শে খামারিরা গবাদি পশু মোটাতাজা করেছেন। তাই এইসব গবাদি পশুর মাংস মানব দেহের জন্য নিরাপদ বলে গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সরদার জানান, ১৯ হাজার ৪৯২টি ষাঁড়, ৪৩২টি বলদ, ৪ হাজার ৫২টি গাভী, আটটি মহিষ, ১০ হাজার ৯৪১ টি ছাগল, ১৬৮টি ভেড়া, ও ২৮টি গাড়ল কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, খড়, গম ও ডালের ভূষি, ঘাস, খৈইল, কুড়া খাইয়ে এসব পশু মোটা-তাজা করা হয়েছে। গোপালগঞ্জের কোন পশুতে খামারিরা কোন কেমিক্যাল বা অপ দ্রব্য পুশ করেনি। আমাদের পরামর্শে তারা মানব দেহের জন্য নিরাপদ মাংস উৎপাদন করেছে। এখন এইসব পশু বাজারজাত করণের জন্য আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি। ইতিমধ্যেই খামার থেকে গবাদি পশু বিক্রি শুরু হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন স্থানে গবাদি পশু ক্রয় বিক্রয়ের হাট বসেছে । এসব হাটে আমাদের মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। এছাড়া চামড়া সংরক্ষণের জন্য বিসিকের সহায়তায় আমরা গবাদি পশু ক্রেতাকে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করছি। এই লবণ মাদ্রাসাগুলোতেও সরবরাহ করা হচ্ছে।
জাল টাকা লেনদেন বন্ধ ও ছিনতাইকারীদের হাত থেকে গবাদি পশু ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সুরক্ষায় গোপালগঞ্জে ক্যাশলেস পশুর হাট বসানো হয়েছে। ক্রেতা বিক্রেতারা এখানে ক্যাশ টাকা ছাড়াই ব্যাংক হিসাব বা অন্যান্য মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন। এতে ক্রেতা ও বিক্রেতার সুবিধা হবে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রভাস চন্দ্র সেন বলেন, গবাদি পশুর ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে আমরা হাটগুলোতে ইন্ডিয়াসহ অন্যান্য দেশের পশু ক্রয় বিক্রয় নিরুৎসাহিত করেছি। আশা করছি, খামারিরা কোরবানির হাটে ন্যায্য মূল্যে গবাদি পশু বিক্রি করে লাভবান হবেন। এছাড়া গবাদি পশু পরিবহন নির্বিঘ্ন করতে আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা নিরাপদে কোরবানির পশু পরিবহনে সব ধরনের আশ্বাস দিয়েছে। ফলে কোরবানির গবাদি পশু বাজারজাত করণে খামারীরা হয়রানির শিকার হবেন না।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের খামারি রিপন আলী খান বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শে আমরা গবাদি পশু মোটা-তাজা করেছি। এসব গবাদি পশুর মাংস মানব দেহের জন্য নিরাপদ। এই বছর পশু খাদ্যের দাম ছিল খুবই চড়া। তাই গবাদি পশু মোটা তাজা করতে বাড়তি খরচ হয়েছে। ইন্ডিয়া অথবা অন্য দেশ থেকে পশু না আসলে কোরবানির হাটে আমাদের গবাদি পশুর ন্যায্য মূল্য পাওয়ার আশা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আমাদের গবাদি পশু বাজারজাত করণের ব্যাপক ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ক্যাসলেস পশুর হাট বসানো হয়েছে। এখান থেকেও আমরা সুবিধা পাব। শেষ পর্যন্ত গবাদিপশুর ন্যায্য মূল্য পেলে আমরা লাভবান হব। আমাদের সারা বছরের পরিশ্রম সার্থক হবে।
গবাদিপশু ক্রেতা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠি গ্রামের আব্দুল আলী মিয়া বলেন, কোরবানির হাটে প্রচুর গবাদি পশুর আমদানি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এই বছর হাটে গবাদি পশুর দাম একটু বেশি। প্রশাসন হাটে ক্যাশলেস কেনাবেচার ব্যবস্থা করেছে। এজন্য আমাদের ভোগান্তি কম হবে। শেষের দিকে হাটগুলো জমে উঠবে। তখন কেনাবেচা বাড়বে। তখন আমরাও পছন্দের কোরবানির পশু হাট থেকে কিনে নেবো।