শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২৫ জুন, ২০২৩ (বাসস) : গোপালগঞ্জে আউশ ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৭০ মেট্রিক টন।
এক ফসলী জমি অধ্যুষিত এ জেলায় ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গোপালগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার ১৪ হেক্টরে কৃষক আউশ ধানের আবাদ করেছেন। এখানে ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৭০ মেট্রিক টন। গোপালগঞ্জ জেলায় আউশ ধানের চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করতে ১০ হাজার প্রন্তিক কৃষককে প্রণোদনার আউশ ধানের বীজ ও সার বিতরণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষক ৫ কেজি করে উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের বীজ এবং ১০ কেজি করে ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার পেয়ে উৎসবের আমেজে ৩ হাজার ১৪ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আঃ কাদের সরদার বলেন, জেলার ৫ উপজেলার ১০ হাজার কৃষককে প্রণোদনার বীজ সার দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ২ হাজার ৪০০ কৃষক, কোটালীপাড়া উপজেলায় ২ হাজার ২০০ কৃষক, টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ২ হাজার কৃষক, কাশিয়ানী উপজেলায় ২ হাজার কৃষক ও মুকসুদপুরে ১ হাজার ৪০০ কৃষক প্রণোদনার বীজ ও সার পেয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, গোপালগঞ্জ জেলায় আবাদকৃত ৩ হাজার ১৪ হেক্টরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উফশী জাতের আউশ ধান আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৩৩৯ হেক্টর জমিতে। স্থানীয় জাতের আউশের চাষাবাদ হয়েছে ৬২৩ হেক্টরে। আর সবচেয়ে কম মাত্র ৫২ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে হাইব্রিড আউশ ধানের। আশাকরা হচ্ছে এখান থেকে কৃষক অন্তত ১৫ হাজার ৭০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করতে পারবেন। এতে গোপালগঞ্জে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। কৃষক লাভবান হবেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের কৃষক জালাল শরীফ বলেন, আমাদের প্রধান ফসল বোরো ধান ও পাট। আমাদের এ জেলায় আউশের আবাদ নেই বললেই চলে । তারপরও কৃষি বিভাগের উৎসাহে প্রণোদনার বীজ সার পেয়ে ২ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের আবাদ করেছি। জমিতে ধানের অবস্থা বেশ ভালো দেখা যাচ্ছে। এ কারণে বোরোধানের পর আউশ ধানের বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, আমরা কৃষকের এক ফসলী জমিকে দুই ফসলী জমি ও দুই ফসলী জমি ৩ ফসলী জমিতে রূপান্তর করেছি। এ কারণে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় আউশের আবাদে কৃষকের নজর পড়েছে। আমরা কৃষকের আয় দ্বিগুণ করে দিতে চাই। তাই তাদের দিয়ে আমরা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করছি। এতে এক দিকে কৃষক অধিক ফসল পাচ্ছেন। অন্যদিকে বাড়তি ফসল বিক্রি করে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। আউশ ধান তাদের বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দিয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের কৃষক শফিক সুন্সি বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমাদের দিয়ে একই জমিতে বছরে ৩ থেকে ৪টি ফসল করাচ্ছে। এতে আমাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ ভালো আছি। আগে কখনো আউশ ধান আবাদ করিনি। এ সময় জমি পতিত পড়ে থাকত। এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উৎসাহ, সহযোগিতা ও পরামর্শে ক্ষেতে আউশ ধানের আবাদ করেছি। এখন মাঠে এ ধানের পরিচর্যা করছি। এ ধান বেশ ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে। আশা করছি হেক্টরে এ ধান অন্তত ৫ টন বরাদ্দে ফলবে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্বতী বৈরাগী বলেন, আমরা ব্লকে বোরো ধান কাটার পর আউশের চাষাবাদ হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা কৃষককে বীজ তলা থেকে শুরু করে ধান রোপণ পর্যন্ত সব ধরনের সহযোগিতা করেছি। তারা উৎসবের আমেজে গোবরা ইউনিয়নের ১২৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ করেছেন। এখান থেকে কৃষক অন্তত ৬২৫ মেট্রিক টন আউশ ধানের ফলন পাবেন। যার বাজার দর প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা। আউশ ধান গোপালগঞ্জের কৃষিকে আরো সমৃদ্ধ করবে।