বাসস
  ২৭ জুন ২০২৩, ১৩:০৯

ঈদ সমানে রেখে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন গোপালগঞ্জের কর্মকাররা

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া  (গোপালগঞ্জ), ২৭ জুন, ২০২৩ (বাসস) : গোপালগঞ্জ জেলা শহরের পাঁচুড়িয়া এলাকার কালা কর্মকার (৪০)। সংসারে রয়েছে স্ত্রী, ছেলেমেয়সহ ৫জন। সারা দিন দোকানে ছুরি, কোদাল বানিয়ে আয় হয় ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা।  এ আই দিয়েই কোন রকমে চলে তার সংসার। সারা বছর তাকিয়ে থাকেন  ঈদ-উল-আযহার দিকে। এ সময়টা বাড়তি কাজে বাড়তি আয় রোজগার করে সংসারে একটু স্বচ্ছলতা আনার। শুধু কালা কর্মকার নয় এমন আশা এ কামার পল্লির অন্তত ১০টি পরিবারের।
ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন গোপালগঞ্জের কর্মকাররা। প্রতিদিন তৈরী করছেন গরু কোরবানী দেয়ার বিভিন্ন অস্ত্র। সারা বছর কাজ না থাকলেও ঈদের কয়েক দিন ক্রেতাদের পদচারণায় কর্মব্যস্ত থাকেন তারা। আর সেই সাথে আয়ও হচ্ছে ভালো। গত বছরের মত এবছর মুজুরী নিচ্ছেন একই রকম। সারা বছর কাজ না থাকায় কোন ভাবে সংসার চালিয়ে নেয়া এসব কর্মকারেরা এবারের ঈদে বাড়তি কাজ করে অধিক আয় করতে পারবেন এমনটিই প্রত্যাশা তাদের।
জেলা শহরের পাঁচুড়িয়া এলাকার কামার পল্লী­তে গিয়ে দেখা গেছে, আর মাত্র কয়েক দিন বাকী ঈদ-উল-আযহার। এ ঈদকে কোরবানীর ঈদও বলা হয়। এ ঈদকে কেন্দ্র করে জেলার সর্বত্র দেয়া হবে পশু কোরবানী। এসব পশু জবাই ও মাংস কাঁটতে দরকার ছোরা, চাপাতিসহ বিভিন্ন অস্ত্রের।
আর এসব অস্ত্র তৈরী করতে গিয়ে হাতুরীর টুংটাং শব্দে সরগরম হয়ে উঠেছে গোপালগঞ্জের কামারপাড়া। কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেছে কর্মকারদের। সারা বছর কাজ কম থাকলেও এ সময়টা অস্ত্র তৈরীতে ব্যস্ত সময় কাটায় এক প্রকার খাওয়া-দাওয়া আর ঘুম ছেড়ে দিতে হয়েছে তাদের। তৈরী করা ছোরা, চাপাতি ও ছুড়িসহ বিভিন্ন অস্ত্র মান অনুযায়ী ৩’শ থেকে ৫’শ টাকা কেজি দরে আবার পিস হিসাবেও বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে আয়ও হচ্ছে ভালো।
এদিকে গরু কোরবানী দিতে ও মাংস বানানোর জন্য জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা এসে নতুন ভাবে বানাচ্ছেন ছোরা, চাপাতি ও ছুড়িসহ বিভিন্ন অস্ত্র। অনেকে আবার পুরানো অস্ত্র শান দিয়ে ধারালো করে নিচ্ছেন। গত বছরের মত এবছরও অল্প মুজুরী দিয়ে এসব অস্ত্র তৈরী করে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
ক্রেতা মো: মজলু মোল্যা বলেন, সামনে ঈদ। এবছরও আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়ে পশু জবাই দিবে। এজন্য চাপাতি ও ছোড়াসহ বিভিন্ন অস্ত্রের প্রয়োজন। তাই কর্মকার পাড়ায় এসে অস্ত্রের অর্ডার করেছি। দামও গত বছরের মত। আশা করছি সময় মত ডেলিভারী পেয়ে যাব।
অপর ক্রেতা মো: আল আমিন হোসেন বলেন, এবছর কোরবানীতে দিতে পশু কিনেছে। নিজ  বাড়িতে পশু জবাই দিবো। এজন্র অস্ত্র বানাতে এসেছি। কম দামে অস্ত্র বানাতে পারছি।
কানাই কর্মকার বলেন, ঈদের দিনে যতই ঘনিয়ে আসছে ক্রেতার চাপ ও দিন দিন বাড়ছে কোন চোপাতি, কেউ ছোড়া, কেউ শাবল বানাতে ভিড় করছেন। কাজের চাপ থাকায় এক প্রকার থাওয়া-দাওয়া ঘুম ছেড়ে দিতে হয়েছে। সময় মত ক্রেতাদের হাতে তাদের অর্ডারকৃত অস্ত্র তুলে দিতে হবে।
খোকন কর্মকার বলেন, বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে অন্ত্রের অর্ডার দিয়েছে। সবকিছুই তৈরী শেষ পয্যায়ে। এখন পান দিয়ে অস্ত্রগুলো ধারালো করা হবে। পরে তা সময়মত ডেলিভারী দেয়া হবে।
বালই কর্মকার বলেন, শুধু নতুন নয় অনেকেই পুরাতন অস্ত্র পান ও সান দিয়ে ধারালো করতে আসছেন। দ্রুত সময়ে অল্প মুজুরি নিয়ে তা ঠিক করে দিচ্ছে। আর নতুন যে সব অস্ত্র বানিয়েছিলাম তা বিক্রি হয়েছে।