শিরোনাম
নড়াইল, ২৮ জুন, ২০২৩ (বাসস) : পবিত্র ঈদুল আযহা রাত পোহাইলেই। তাই তো শেষ সময়ে নড়াইলের কামার শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সারা বছর এখানকার কারিগরদের কাজ থাকলেও ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে দম ফেলবার ফুসরত নেই কারীগরদের।
বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, জেলায় বিভিন্ন হাট, বাজার ও বিভিন্ন গ্রামে তিন শতাধিক কামারশালা রয়েছে। আর এ পেশার সাথে জড়িত আছে অন্তত ১২শ কারিগর ও শ্রমিক। জেলার তিনটি উপজেলার ছোট-বড় অন্তত ১৫টি হাটে বাজারে পাইকারী ও খুচরা বিক্রয় হয় এসকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র। আকার ভেদে একেক টি চাপাটি ৬শ থেকে ৮শ টাকা কেজি, জবাই এর ছুরি ৪’শ থেকে ৫’শ টাকা পিস, ছোট ছুরি ৮০-১শ টাকা পিস, বটি ৫শ থেকে ৬শ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে এসকল কামার শালায় ও হাট বাজারে ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার শিংগাশোলপুর বাজারে কামারশালার অন্ধকার ঘরে লোহা পেটানোর শব্দ আর শান দেবার যন্ত্র ঘুরছে অবিরাম। কয়লায় আগুন ধরাতে হাপরের বিশ্রাম নেই, কামারশালার পাশে বাড়ছে পোড়া কয়লার স্তুপ। এসকল কামারশালায় ঈদকে সামনে রেখে তৈরি হচ্ছে খদ্দেরের পছন্দমত বিভিন্ন সাইজের চাপাতি, গরু জবাই করা বড় ছুরি , চামড়া ছোলার ছোট ছুরি, দা, বটি, কুড়াল, কাস্তে, আর ছোট চাকুর মতো লোহার সব গৃহস্তলী কাজে ব্যবহৃত জিনিস-পত্র।
শিংঙ্গাশোলপুর বাজারের কামার অসীম দাস জানায়, তার বাপ দাদারা এ পেশায় ছিল। তিনিও ছোট বেলা থেকে এ কাজ শিখেছেন। তিনি ও কামারশালায় কাজ করেন। সারা বছর তিনি লোহা দিয়ে গৃহস্থালীর বিভিন্ন প্রকার জিনিস পত্র তৈরী করে তা স্থানীয় মানুষ ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।
কারিগর অমিত বিশ^াস জানান, কোরবানি ঈদ কে সামনে রেখে এক থেকে দেড় মাস কাজের চাপ বাড়ে। চলতি মৌসুমে দেড় মাসে তাদের দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকার জিনিস পত্র বিক্রি হবে বলে আশা তার।
কারিগর রিপন বিশ্বাস জানান, সারা বছর কাজের চাপ কম থাকলেও এ সময় কাজের চাপ বাড়ে কয়েকগুন। কাক ডাকা ভোর থেকে রাত অবধি কাজ করতে হয় তাদের। কাজের চাপে ঈদের সময় কামারশালায় নতুন শ্রমিক নিয়োগ দিতে হয়।
শ্রমিক স্বপন বিশ^াস জানান, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে ৮শ থেকে এক হাজার টাকা আয় হয়। এতে করে আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো আছি।
ক্রেতা সোহেল রেজা বলেন, গরু কোরবানী জন্য জবাই করা ছুরি ও চাপাটি কিনতে এসেছি ৭০০ টাকা দাম রেখেছে।
আরিফুল ইসলাম বলেন, গরু কোরবানী জন্য গত বছর ছুরি ও মাংস বানোর জন্য চাপাটি বাননো হয়েছিলো। আগে আগে এবার সেগুলো সান(ধার দেয়া) দিয়ে রেডি করে রাখছি।
নড়াইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হাসানুজ্জামান বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় কামরা শিল্পের সাথে জড়িত অনেকে এখন পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। কামার শিল্পের সাথে জড়িতদের টিকিয়ে রাখতে এ পেশার সাথে জড়িতদের সরকারি সুযোগ সুবিধা দিয়ে অধুনিকায়নের দাবি জানান।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন(বিসিক) নড়াইল এর উপ ব্যাবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ সোলাইমান হোসেন বলেন, নড়াইলের কারিগরদের তৈরী জিনিসপত্রের মান খুবই ভালো, এ সকল জিনিসের বেশ কয়েকটি জেলায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কারিগররা নিজেরা যদি উৎসাহিত হয়ে নতুন করে কোন প্রতিষ্ঠান করতে চায় আমরা তাদেরকে সাহায্য করবো। কামারদের আধুনিকায়ন করার জন্য তাদেরকে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।