বাসস
  ৩০ জুন ২০২৩, ১২:১৮

টুঙ্গিপাড়ার বিলে কৃষি খামার : বদলে গেলো তরুণ উদ্যোক্তা স্বপনের ভাগ্য

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) ৩০ জুন, ২০২৩ (বাসস) : নিম্ম জলাভূমি (বিল) এলাকার জমি অধিকাংশ সময় জলমগ্ন থাকে। চারিদিকে পানি থৈ-থৈ করে। এই জলমগ্ন বিলের জমিতে কৃষি কাজ করা সহজ নয়। বছরের অধিকাংশ সময় এসব জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। কঠিনেরে ভালবেসে উদ্যোক্তা উন্নয়ন উদ্যোগের সহযোগিতায় বিলের অনাবাদি জমিতে বড় কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন আত্মপ্রত্যয়ী যুবক স্বপন মজুমদার (২৩)।
এই কৃষি ফার্ম থেকেই তিনি প্রতিমাসে আয় করছেন লাখ-লাখ টাকা। তরুণ উদ্যোক্তা স্বপন তার খামারে ১৮ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। যুব সমাজের জন্য স্থাপন করেছেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তাকে অনুসরণ করে বেকার যুবকরা উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারেন।
স্বপন মজুমদার গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের মিত্রডাঙ্গা গ্রামের সুশীল মজুমদারের ছেলে। তিনি গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স পড়ছেন। স্বপন সফল যুবক হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় যুব পুরস্কার।
মিত্রডাঙ্গা গ্রামে স্বপনের কৃষি খামারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিনি বিলের ৫ একর জমিতে ৫টি পুকুর কেটেছেন। পুকুরে ছেড়েছেন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। আর পুকুরের পাড় প্রশস্ত করে বেঁধেছেন। আর এই পুকুর পাড়েই শাক, সবজি ও ফলের চাষাবাদ করেছেন। পুকুর পাড় থেকে মাঝ পুকুর পর্যন্ত মাচা করে দিয়েছেন। এই মাচায় ঝুলছে করলা, চিচিংগা, শশা, লাউ, কুমড়াসহ লতা জাতীয় সবজি। পুকুর পাড়ে পেঁপে, আম, নারিকেল গাছে ফলের সমারোহ। এছাড়া সেখানে ফলেছে পুই, ডাটা, গিমা কলমিসহ বিভিন্ন ধরনের শাক। সারাবছর মাছ, শাক-সবজি ও ফল ফলিয়ে স্বপন মোটা অংকের টাকা ঘরে তুলছেন।
উদ্যোক্তা স্বপন মজুমদার বলেন, আমি ২০১০ সালে এসএসসি পাশ করি। তারপর থেকেই আমি ক্ষুদ্র আকারে কৃষি খামারের সাথে যুক্ত হই। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম উদ্যোক্তা উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এখান থেকে আমি প্রশিক্ষণ নিয়েছি। প্রশিক্ষণ শেষে আমাকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। আমি ওই ঋণের টাকা নিয়ে বড় আকারে কৃষি খামার করি। আমার ৫ একর জমিতে এখন ৫টি পুকুর রয়েছে। পুকুরে মাছ, পুকুর পাড়ে শাক-সবজি ও ফলের আবাদ করেছি। এখান থেকে প্রতি মাসেই লাখ-লাখ টাকা আয় হচ্ছে। আমার কৃষি ফার্মে ১৮ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া আমার পরিবারের চার সদস্য এখানে কাজ করছেন। আমরা এই সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার আমাকে জাতীয় যুব পুরস্কারে ভূষিত করেছে। ২০২১ সালে আমি এই পুরস্কার পাই। সেই সময় আমকে একটি ক্রেস্ট, একটি সনদ ও নগদ ৬৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। সরকারের সহযোগিতা পেলে আমি মৎস্য, পশুখাদ্য উৎপাদনসহ আরো বড় কৃষি খামার করে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই।
মিত্রডাঙ্গা গ্রামের কৃষক অবণী বিশ^াস (৬৫) বলেন, আমাদের গ্রামে আগে আমরা শুধু ভাসমান বেডে সবজি চাষাবাদ করতাম। এখন অনাবাদি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। এই পুকুর পাড়ে সবজি হচ্ছে। এটি আমরা কখানোই কল্পনাই করতে পারিনি। তরুণ উদ্যোক্তা স্বপন মজুমদার বড় কৃষি খামার করে আমাদের এলাকার যুবকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তার অনুসরণে অনাবাদি জমিতে আবাদ শুরু করে এলাকার যুবকরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেন। স্বপনের এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।  
টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল বলেন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন উদ্যোগ’ গ্রহণ করেন। তিনি ৪৬৭ জন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করেছে। উদ্যোক্তারা কৃষি, মৎস্য, গাভী পালন, গরু মোটাতাজা করণ, কেক তৈরী, ফাস্ট ফুড তৈরী, ফুড প্রসেসিংসহ বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন। এদের অধিকাংশই এখন সাবলম্বী। তারা চাকরি খোঁজেন না। বরং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছেন। এছাড়া এই উদ্যোক্তা উন্নয়ন উদ্যোগ এখনো কাজ করে যাচ্ছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন বলেন, উদ্যোক্তা উন্নয়ন উদ্যোগ এখন হাজারও যুবকের নিরাপদ ঠিকানা। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা তাদের ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। উদ্যোক্তার সাথে মার্কেটিং ও প্রয়োজনীয় সব সেক্টরের সাথে আমরা সংযোগ স্থাপনে কাজ করছি। এই কারণে উদ্যোক্তারা সফল হচ্ছেন। এই ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা উদ্যোক্তা বাজার করেছি। অচিরেই এই বাজার উদ্বোধন করা হবে। তখন উদ্যোক্তার উৎপাদিত পন্য বিপনন আরো সহজ হবে। বেশি বেশি পণ্য বিক্রি হবে। তারা অরো বেশি লাভবান হবেন।