বাসস
  ০৬ জুলাই ২০২৩, ১০:২২

গোপালগঞ্জে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৮৬ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ৬ জুলাই, ২০২৩ (বাসস) : খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলা গোপালগঞ্জ। এ জেলার ৫ উপজেলায়  গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৮৬ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো ধান ও গমের চাষাবাদ হয়েছে। সেই সাথে ধান ও গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়া আউশ ও আমন মৌসুমে ধানের ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষক । এসব কারণে গত অর্থবছরে উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে বলে কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আঃ কাদের সরদার জানিয়েছেন।
ওই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, গত অর্থ বছরে গোপালগঞ্জ জেলায় (ধান) চালের হিসেবে ৪ লাখ ৩২ হাজার ৮১০ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়েছে। এছাড়া ১৬ হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন গম উৎপন্ন করেছে কৃষক।  সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে।  গোপালগঞ্জ জেলার মোট জন সংখ্যা ১৩ লাখ ১০ হাজার ৮৫৩ জন। জন প্রতি প্রতিদিন খাদ্যের চাহিদা ৪৮৭.৬ গ্রাম। সেই হিসেবে ১ বছরে  ৩৬৫ দিনে গোপালগঞ্জে মোট জন সংখ্যার খাদ্যের চাহিদা ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন। জেলায় বীজ ও অন্যান্য বাবদ প্রয়োজন ৫৩ হাজার ৯৩৪ মেট্রিক টন। জেলার ৫ উপজেলায় খাদ্য , বীজ ও অন্যান্য বাবাদ মোট চাহিদা  ২ লাখ ৮৭ হাজার ২৬৪ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে জেলায় ১ লাখ ৬২ হাজার ১৮৬ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত উৎপাদিত হয়েছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জমি অত্যন্ত উর্বর। এ উপজেলার জমিতে প্রচুর আর্গানিক উপাদান রয়েছে। এখানে সব ধরণের ধান প্রত্যাশা থেকেও বেশি ফলে। এছাড়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২ শ’ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। এসব কারণে উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, এ উপজেলায় গত বোরো মৌসুমে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জলাবদ্ধ ও আনাবাদি জমিতে চাষাবাদ বৃদ্ধি করা হয়। এখানে  বিএডিসির এলএল-৮ জাতের ধানের  উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি হেক্টরে ৭/৮ টন। কিন্তু কোটালীপাড়া উপজেলায় এ ধানের সর্বোচ্চ ফলন ৯/১০ টন পর্যন্ত পাওয়া গেছে। হিরা হাইব্রিড ধানের ফলন ধরা আছে হেক্টরে ৮ টন। এখানে এ ধানের ফলন পাওয়া গেছে ১১ টন । এছাড়া ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি হাইব্রিড ধান-৩, ব্রি হাইব্রিড ধান-৫, ব্রিধান-৬৭, বঙ্গবন্ধু ধান-১০০সহ ব্রি’র বোরো মৌসুমের সব জাত সর্বোচ্চ ফলন দিয়েছে। বোরো ধান কর্তন মৌসুমে কোন ধান নষ্ট হয়নি। ধানের বেশি ফলন পেয়ে কোটালীপাড়া উপজেলার কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। সেই সাথে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে ।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমরিয়া গ্রামের কৃষক কবির আলম গাজী  (৫২) বলেন, আমি আমার ৫ বিঘা জমিতে হাইব্রিড, ইনব্রিড জাতের ধান আগাম চাষ করে ছিলাম। প্রতিটি জাতের ধানের ফলন প্রত্যাশা থেকে বেশি ফলেছে। ঝড় বৃষ্টির আগেই ধান কেটে ঘরে তুলতে পেরেছি। তাই ধানের কোন ক্ষতি হয়নি।
কোটালীপাড়া উপজেলার আটাশীবাড়ি  গ্রামের কৃষক আজিজ খন্দকার (৫৪) বলেন, আমার ১০ বিঘা জমিতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমদের বীজতলা, ধান রোপণ, পরিচর্যা ও কর্তণ মেশিনের মাধ্যমে করা হয়েছে। এ কারণে প্রতি হেক্টরে অন্তত ১১ মেট্রিক টন ফলন পেয়েছি।  প্রচলিত ধান চাষাবাদের তুলনায় যান্ত্রিকী করণের মাধ্যমে চাষাবাদে হেক্টর প্রতি প্রায় ২ টন  অধিক ফলন পেয়েছি।  ধান উৎপাদানে অন্তত ৪০ ভাগ খরচ সাশ্রয় হয়েছে। কম খরচে অধিক ধান ঘরে তুলে আমি লাভবান হয়েছি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, ধান চাষাবাদের আধুনিক প্রযুািক্ত গোপালগঞ্জের কৃষকরা গ্রহণ করেছে। তাই তারা হাইব্রিড ও উচ্চফলনশীল জাতের ধানের আবাদ করছেন । প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ নিয়ে কৃষকরা গোপালগঞ্জে খাদ্যে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তাই গোপালগঞ্জ  দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এতে আমাদের দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে।